ভিন্ন ধারায় নচিকেতা
২৩ জুন ২০১২সম্প্রতি কলকাতার একটি বিপণি বিতানে তাঁর বই ‘নতুন নচিকেতা অমনিবাস'-এর মোড়ক উন্মোচন করেন কথাশিল্পী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়৷ বইটিতে রয়েছে নচিকেতার লেখা দুটি উপন্যাস, ১১টি গল্প, ৬টি রম্যরচনা এবং একগুচ্ছ গান৷ পাশাপাশি আছে তাঁর গাওয়া ‘আমার প্রিয় গান' নামের একটি সিডি৷ এটি প্রকাশ করেছে পত্রভারতী৷
গানের পাশাপাশি লেখালেখির জগতে বিচরণ নিয়ে ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এই জনপ্রিয় শিল্পী বলেন, ‘‘আসলে আমি যখন গান লিখতাম তখনও গানের মধ্যেই গল্প থাকতো৷ নীলাঞ্জনাও একটা গল্প, পেসমেকার, বৃদ্ধাশ্রম এগুলো সবই একেকটা গল্প৷ যে গানগুলো লিখেছি সেগুলো মূলতই গল্প৷ তবে আমি একটু কুঁড়ে আসলে৷ অনেকক্ষণ ধরে পাতার পর পাতা লিখতে ইচ্ছে করে না বলেই গান লিখি৷ গল্প লেখার ইচ্ছেটাও প্রথম থেকেই ছিল৷ তবে আমার বন্ধুপ্রতীম দাদা অধ্যাপক অনীশ দেব আমাকে খুব উৎসাহ দেন লেখার ব্যাপারে৷ এর আগেও আমার প্রথম যে উপন্যাস বের হয় ‘আগুন পাখির আকাশ', সেটি ১৯৯৪ সালে লেখা৷ সেসময় আমি খুব ব্যস্ত, খুব কাজের চাপ ছিল৷ হঠাৎ করে নাম হয়ে যাওয়া এবং চাপ বেড়ে যাওয়াতে আমি সময় খুব কম পেতাম৷ তবুও আমি প্রতিদিন এক পাতা করে লিখতাম৷ এভাবেই লেখা হয়েছিল সেই গল্পটা৷ সেটার পরে অনেকদিন আর লিখিনি৷ তারপরে অনীশ দেবের সাথে আমার পরিচয়৷ তাঁকে আমার হাবিজাবি কিছু লেখা দেখাই৷ তিনি সেগুলো দেখে বেশ উৎসাহের সাথে বলেন যে, এগুলো ছাপানো যায়৷ ভালো কাজ হয়েছে৷ তারপরই লেখতে শুরু করলাম৷''
তাঁর নতুন বইটিতে থাকা উপন্যাসগুলো সম্পর্কে নচিকেতা বলেন, ‘‘এতে দু'টি উপন্যাস রয়েছে৷ একটির নাম ‘ক্যাকটাস'৷ আর দ্বিতীয়টি ‘জন্মদিনের রাত'৷ তবে বইটিতে ‘আগুন পাখির আকাশ' বড় গল্প হিসেবে থাকলেও সেটিও মূলত একটি উপন্যাস৷ যাহোক, উপন্যাস দু'টিই থ্রিলার৷ তবে আবার শুধুই থ্রিলার নয়৷ এর মধ্যে মানবিক কতগুলো দিক নিয়েও কাজ করা হয়েছে৷ এক বৃদ্ধ মানুষকে নিয়ে আমার ‘ক্যাকটাস' গল্পটি৷ তবে লেখাগুলো অবশ্যই ভিন্নরকম৷ আমি গল্প সম্পর্কে অবশ্য এখনই বেশি কিছু বলবো না, বরং পড়ে দেখতে হবে৷''
তাঁর গান ও লেখায় যে ভিন্ন ধারার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমার গানে যে ধারাটা হয়েছে, গল্পেও ঠিক প্রায় সেরকমই ধারা৷ আমার গল্পগুলো পড়লেই পাঠক বুঝতে পারবেন যে, তথাকথিত বাংলা সাহিত্যের গল্পের মতো নয়৷ একটি অন্য রকম ভাবধারার৷ আবার আমি হয়তো বাজে লিখেছি, কিন্তু বিষয়গুলো খুব অদ্ভুত৷ লেখাটা খুব ভিন্নরকম করার চেষ্টা করেছি অন্তত৷''
অদূর ভবিষ্যতে তাঁর বিশাল শ্রোতা ও পাঠক সমাজকে কী ধরণের কাজ উপহার দিতে যাচ্ছেন - এমন প্রশ্নের উত্তরে নচিকেতা বলেন, ‘‘আমি এখন পরিবেশ নিয়ে খুব চিন্তিত৷ এই মুহূর্তে পরিবেশ নিয়েই খুব ভাবছি৷ তবে আমি এখনও মন স্থির করিনি৷ আমি অবশ্য মন স্থির করেই মাঠে নামি৷ আসলে আমরা বিশেষ করে এই উপমহাদেশের মানুষ পরিবেশের ব্যাপারে সচেতন নই৷ ব্যাপকহারে গাছ কাটা হচ্ছে, জলাদিঘি ভরাট করা হচ্ছে৷ এতে পরিবেশের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে৷ এ বিষয়টা মানুষকে একটু জানানোর কথা ভাবছি৷ কারণ এই পৃথিবীটা তো শুধু মানুষের বসবাসের জায়গা নয়, এখানে আরো অনেক প্রাণী আছে৷ পৃথিবীটা কারো বাবার সম্পত্তি - তা তো নয়৷ অথচ মানুষ সেটাই যেন ভেবে ফেলেছে৷ পৃথিবী থেকে অন্য প্রাণীরা সব বিলুপ্ত হতে চলেছে৷ এজন্য সচেতন হওয়া দরকার৷ আরেকটা ব্যাপার দেখুন, আমরা সবকিছু জন্যই দাম দিচ্ছি৷ আমরা খাবার জন্য, জলের জন্য, থাকার জন্য পয়সা খরচ করছি৷ কিন্তু আমরা অক্সিজেনের জন্য কোন দাম দিচ্ছি না৷ তাই এখন আমি মনে করি ‘অক্সিজেনের জন্য দাম দাও' এই স্লোগান হওয়া উচিত৷ প্রত্যেকটা মানুষের অন্তত দুটো তিনটে করে গাছ লাগিয়ে যাওয়া উচিত৷ কারণ একজন মানুষ সারাদিনে প্রায় ১৫ লিটার অক্সিজেন গ্রহণ করে৷ আর সেটা সরবরাহ করতে ছয়টা পূর্ণবয়স্ক গাছ দরকার৷ তাই নিজে যে অক্সিজেনটুকু গ্রহণ করছে, মানুষ অন্তত সেজন্য ছয়টা গাছ লাগিয়ে যাক৷ অথচ আমরা যেভাবে গাছ কাটা শুরু করেছি এরপরে আমাদের অক্সিজেন কে দেবে জানি না৷''
সাক্ষাৎকার: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম