দ্রুত বিচার নিশ্চিত হলে অপরাধ কমবে
১২ জুলাই ২০১৯এসব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) শেখ নাজমুল আলম৷
ডয়চে ভেলে : হঠাৎ করে বিকৃত যৌনচারের কিছু ঘটনা সামনে আসছে, এর কারণ কী? এটা কি বেড়েছে? না-কি খবরগুলো বেশি করে প্রচার পাচ্ছে?
শেখ নাজমুল আলম : ঠিকই বলেছেন৷ বেশ কিছুদিন শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা আমাদের সামনে আসছে৷ এসব ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে আমরাও শিউরে উঠছি৷ এই ধরনের অপরাধ আগেও ছিল, এখনও আছে৷ আমাদের ফেসবুক, প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়ার কারণে এই খবরগুলো দ্রুত আমাদের সামনে আসছে৷ সামাজিক অবক্ষয় ও নানাবিধ কারণে এই ধরনের অপরাধগুলো আগের থেকে একটু বেড়েছে৷
নারীদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা কি কমে যাচ্ছে?
দেখেন, ধর্ষণ আদিমকাল থেকে আছে৷ ভবিষ্যতেও বাড়বে বা কমবে৷ আগে শিশুদের ব্যাপারে এই হার এত বেশি ছিল না৷ নারীদের সচেতনতা বেড়েছে৷ আগের চেয়ে শিক্ষিতের হার বেড়েছে৷ ফলে এই ধরনের অপরাধীরা বয়স্ক নারীদের চেয়ে শিশুদের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে৷ কারণ শিশুদের প্রতি এই অপরাধ করতে গেলে বাধা বিঘ্ন কম আসে৷ এবং সহজেই তারা এই অপরাধটি করতে পারে৷
এই বর্বরতা থেকে শিশুদের রক্ষা করা যাচ্ছে না, প্রতিকার কী?
সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে৷ ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ ৫০টি থানাকে ৩০০ বিটে ভাগ করেছে৷ প্রতি সপ্তাহে প্রতিটি বিটে উঠান বৈঠক হয়৷ সেখানে নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহ, জঙ্গিবাদ, মাদক নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে থাকি৷ প্রতি মাসেই আমাদের পুলিশ হেড কোয়ার্টার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে প্রতিটি মামলার অগ্রগতি জানাতে হয়৷ এই ধরনের ঘটনার তদন্ত করে আমরা দ্রুত চার্জশিট দাখিল করি৷ এগুলোর যদি দ্রুত বিচার হয় এবং মানুষ যদি দেখে অপরাধীর বিচার হচ্ছে তাহলেও অপরাধ কমে আসবে৷ বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা ও অপরাধীর জামিনে বের হয়ে আসার কারণে মানুষের কাছে বিচারের প্রতি অনাস্থা তৈরী হচ্ছে৷ পুলিশের কাজ আসামী গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করা৷ চাঞ্চল্যকর ঘটনার ক্ষেত্রে আমরা অতি দ্রুত সেই কাজটি করছি৷ এরপর বিচার হবে৷ সেখানেও সাক্ষীদের হাজির করা পুলিশের দায়িত্ব৷ দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধটা হয়তো কিছুটা কমতে পারে৷
সমাজে ধর্ষণের ঘটনা হঠাৎ বাড়ল কেন?
১৭ কোটি মানুষের একটি ছোট্ট দেশ৷ এখানে ঢাকা শহরে কোন অপরাধ হলে আমরা দ্রুত জানতে পারি৷ গ্রামগঞ্জে এমন অপরাধ অহরহ হচ্ছে৷ সেটা বেশি প্রচার পায় না৷ আমাদের সমাজবিজ্ঞানীদের এগুলো নিয়ে রিসার্স করার সময় এসেছে৷ সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে, কিছু মামলার রায় দ্রুত হলে অপরাধ কমে আসতে পারে৷ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে দ্রুত এই বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে৷ শিশুদের উপর যারা এই ধরনের নির্যাতন চালাচ্ছে তারা মানসিক রোগী৷ আর মাদকসেবীদের মধ্যেও এই ধরনের প্রবণতা আমরা দেখছি৷
বিকৃত যৌনাচার নিয়ে পুলিশ কি কোন কাজ করছে? আর আইনগত কোনো সমস্যা আছে?
এখানে কোন আইনগত সমস্যা নেই৷ কয়েকদিন আগে ওয়ারীতে একটি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে৷ পরদিনই আমরা আসামীকে গ্রেফতার করেছি৷ সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে৷ এখন মেডিকেল রিপোর্ট পেলেই আমরা চার্জশিট দেব৷ এখানে আমরা আমাদের কাজটি সাফল্যের সঙ্গে শেষ করেছি৷ এই মামলাটির যদি দ্রুত বিচার হয় তাহলে মানুষের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি পাবে৷
এটা প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নাকি সচেতনতা কোনটা দরকার?
এই ধরনের অপরাধ যদি আমরা কমাতে চাই তাহলে সচেতনতা বাড়াতেই হবে৷ পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ ও দ্রুত বিচার- এই তিনটি কাজই একসঙ্গে করতে হবে৷ তাহলে হয়ত এই অপরাধ কমতে পারে, তা না হলে সম্ভব না৷