সত্যের পথে
৭ মে ২০১২চলচ্চিত্র তারকা মানেই বিশাল ভক্তকুল৷ তার ওঠাবসা, কথাবার্তা, পছন্দ-অপছন্দ সবই ভক্তদের নখদর্পণে৷ অতএব সমাজের উপর তাদের প্রভাব কম নয়৷ কিন্তু সাধারণত তা সীমিত থাকে শুধু ফ্যাশন, পোশাক-আশাক, চালচলনের মধ্যে৷ তাদের সেই প্রভাব-প্রতিপত্তি সমাজের কল্যাণে বড় একটা কাজে আসে না৷ সেই প্রবণতায় ব্যতিক্রম ঘটালেন বলিউড তারকা আমির খান৷ ব্যতিক্রম বা বিকল্পধর্মী ভাবনা-চিন্তার জন্য তিনি অবশ্য বহুকাল ধরেই পরিচিত৷
একবিংশ শতাব্দীতে ভারত বিশ্বে এক পরাশক্তি হয়ে উঠছে – এমন একটা ধারণা নিয়ে যখন চারিদিকে তর্ক-বিতর্ক চলছে, তার সঙ্গে ফুটে উঠছে ভারতের আরেক ভয়াবহ চিত্র৷ জন্মের আগে বা ঠিক পরে কন্যাসন্তানকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা, পরিবারে কন্যাদের প্রতি মারাত্মক অবহেলা, নির্যাতনের মতো কলঙ্কও আজকের ভারতের বাস্তবতা৷ এই বিষয়টিকেই টেলিভিশনের ‘প্রাইম টাইম'এ ফুটিয়ে তুলেছেন আমির খান৷ অনুষ্ঠানের নাম ‘সত্যমেব জয়তে' – সংস্কৃত ভাষায় যার অর্থ – সত্যের জয়৷ রবিবার সকালে কন্যা ভ্রূণ হত্যার বিষয়টির নানা দিক তুলে ধরেছেন আমির৷
প্রথম পর্বে সেই সব মায়েদের দেখানো হয়েছে, যারা প্রবল বাধার মুখে কন্যাসন্তানের জন্ম দেবার চেষ্টা করছেন৷ কারণ সমাজ শুধু পুত্রসন্তান চায় তাদের কাছ থেকে৷ আইন ভেঙে ডাক্তাররাও আগেভাগে ভ্রূণ অবস্থায় সন্তানের লিঙ্গ জানিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও তাদের কোনো শাস্তি হয় না৷
এই প্রচেষ্টা সমাজকে কতটা বদলাতে পারবে? অনুষ্ঠানের পর আমির খান তাঁর স্বভাবসিদ্ধ বিনয়ের সঙ্গে বলেন, ‘‘আমি নিজে কোনো পরিবর্তন বা সমাধান করতে পারি না, সরকারও তা পারে না৷ আমি শুধু সবার সামনে বিষয়গুলি তুলে ধরতে পারি৷ পরিবর্তন আসতে হবে সমাজের ভেতর থেকে৷ কোনো এক ব্যক্তি উন্নতি বা সমাধানসূত্র করতে পারে না৷'' আমিরের মৌলিক অবস্থান খুব স্পষ্ট৷ তিনি বলছেন, কোনো সমস্যা দেখা দিলেই সবাই অন্যদের দোষ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ অথচ দুর্নীতি থেকে শুরু করে কন্যাসন্তানদের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব – এসবের সঙ্গে সবাই যুক্ত৷ সমাজের মধ্যে এবিষয়ে সচেতনতা তৈরি না হলে পুলিশ, প্রশাসন, সরকার, আদালত – কেউই কিছু করতে পারবে না৷ অতএব অভিযোগের আঙুল নিজের দিকেও থাকা উচিত৷
একাধিক গ্রামে আলাদা করে অনুষ্ঠানটি দেখানোর ব্যবস্থা করেছিল টেলিভিশন সংস্থা স্টার টিভি৷ একাধিক ভাষায় ‘ডাব' করা হয়েছে অনুষ্ঠানটি৷ শুধু নিজেদের নেটওয়ার্ক নয়, রাষ্ট্রীয় দূরদর্শন'কেও সম্প্রচার করতে দেওয়া হয়েছে অনুষ্ঠানটি, যাতে গোটা দেশের মানুষ সেটি দেখতে পায়৷ টেলিভিশনে বলিউড তারকার এই অভিনব উদ্যোগ গোটা দেশে প্রশংসা কুড়োচ্ছে৷ টেলিভিশন যে ভালো কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে, তার পরিচয় পেয়ে সন্তুষ্ট অনেকেই৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ