সন্তানসহ পড়াশোনা
১২ এপ্রিল ২০১৪এখন একটি উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যার সুরাহা করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷
দাঁতমাজা, নাস্তা তৈরি করা, কাপড় পরানো৷ নাকেমুখে এ সব করে দৌড়াতে হয় মারিয়াকে৷ সহপাঠীরা যখন বিছানায় এপাশ ওপাশ করেন, কিংবা সামনের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তখন ২৭ বছর বয়সি এই তরুণী বড় ছেলে হালমারকে কিন্টারগার্টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেন৷ স্বামী জন্য দেড় বছরের কারিকে ক্রেশ বা চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে রাখার জন্য রওনা হয়ে যান৷ স্ট্রেস দিয়েই শুরু হয় দিনটি৷
তিন বছর আগে আইসল্যান্ড থেকে হানোফার ইউনিভার্সিটিতে গণিতে মাস্টার্স করার জন্য আসেন মারিয়া৷ সঙ্গে আসেন স্বামী ডক্টরেট করতে৷ ছেলে হালমারের বয়স তখন তিন মাস৷ মারিয়া ভেবেছিলেন, চারিদিকে বাচ্চাসহ মানুষজন দেখা যাবে জার্মানিতে৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও বাদ যাবে না৷
অনেকে পরিবার নিয়ে আসেন
এক জরিপে দেখা গিয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১১ শতাংশেরই সন্তান রয়েছে৷ আট শতাংশ তাদের সন্তানকে জার্মানিতে নিয়ে আসেন৷ প্রতিদিনই সেমিনার, থিসিস, বন্ধু-বান্ধব ও সন্তানদের দেখাশোনার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হয় তাঁদের৷
এ কারণে গ্যুটার্সলো শহরে সেন্টার ফর ইউনিভার্সিটি ডেভেলপমেন্ট-এর পক্ষ থেকে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবার' নামে একটি প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে৷ এতে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় একত্রিত হয়ে পরিবারবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে৷ এই কর্মসূচির আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মীদের সন্তানদের জন্য নিজস্ব চাইল্ড কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে৷ সন্ধ্যায় ও সপ্তাহান্তে বাচ্চাদের দেখাশোনার ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷ এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন পড়াশোনার সুযোগও দেওয়া হয়েছে৷
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও এই প্রকল্প অংশগ্রহণে জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে৷ বিদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের পদচারণায় বিশ্ববিদ্যালয়ে মান-মর্যাদা বৃদ্ধি পায়৷ বহু গবেষক পরিবার ক্যারিয়ারের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলতে চান৷
কিন্ডারগার্টেনে একটি জায়গা পাওয়া সহজ নয়
এই রকম মনোভাব নিয়েই ২৭ বছরের মারিয়া জার্মানিতে এসেছেন৷ এখানে কিন্ডারগার্টেনে একটি জায়গা পাওয়া যে কত কঠিন, তা দেখে তিনি বিস্মিত ও হতাশ৷ আইসল্যান্ডে একটি কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকেই এসব পরিচালনা করা হয়৷ প্রতিটি কিন্ডারগার্টেনে গিয়ে সিটের জন্য আবেদন করতে হয় না৷ ইউনিভার্সিটির ‘জরুরি শিশু কেয়ার কেন্দ্রগুলি' খুব কাজে লাগে সেখানে৷ ‘‘আমার স্বামীকে এক কনফারেন্সে সুইডেনে যেতে হয়েছিল৷ আমার আবার তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ছিল৷ আমার ছেলেকে সাথে নিয়ে ঐ সেন্টারে রেখে আসতে পেরেছি৷ এটা একটা ভাল সমাধান৷'' বলেন মারিয়া৷
তরুণ মা-বাবারা বাচ্চা ও ক্যারিয়ার বেশ ভালভাবেই সামলাতে পারেন৷ মারিয়ার পড়াশোনায় মাত্র এক বছর বেশি সময় লেগেছে৷ মাস্টার্স-এর থিসিস প্রায় শেষ পর্যায়ে৷
বাচ্চারা কিন্ডারগার্টেন ও চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে গেলে কিংবা রাতে তারা ঘুমাতে গেলে পড়ার টেবিলে বসেন এই তরুণী৷ তাঁর আরো পরিকল্পনা রয়েছে৷ গণিতে মাস্টার্স করেই ক্ষান্ত দেবেন না তিনি৷ এরপর বেলজিয়ামে যাবেন৷ সেখানে ডক্টরেট করার ইচ্ছা আছে মারিয়ার৷
পরিবার ও পড়াশোনায় সামঞ্জস্য রক্ষা করা
ডক্টরেটের গবেষক স্পেনের আনা মারিয়া আবার হাসতে পারছেন৷ ৪৭ বছর বয়স্ক এই নারী হিল্ডেসহাইম ইউনিভার্সিটিতে স্প্যানিশ শেখাচ্ছেন৷ পাশাপাশি ডক্টরেটও করছেন তিনি৷ তাঁর মেয়ে এভা-র বয়স আট বছর৷ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে সে৷ ‘‘প্রথম দিকে স্ট্রেস অনুভব করতাম৷ আজ তো অবাকই লাগে,কীভাবে এসব সামলাতে পেরেছি৷'' কিন্ডারগার্টেন নির্দিষ্ট সময়ে খোলে ও বন্ধ হয়৷ একটু এদিক ওদিক হয় না৷ প্রয়োজনে বাচ্চাকে সেখানে রাখার উপায় নেই৷
অবশেষে আনা মারিয়া ও তাঁর স্বামী অন্যান্য মা-বাবার সঙ্গে মিলে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন৷ মা-বাবা সময় মতো বাসায় আসতে না পারলে এভা সেখানে দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে নিতে পারে৷ আর তা না হলে এভা মায়ের ইন্সটিটিউটে চলে আসে৷ ‘‘আমাদের সঙ্গে রুটি থাকে৷ এভা সেখানে তা খায় ও ছবি আঁকে৷ ইন্সটিটিউটের সহযোগিতাটা অনেক বড়৷'' জানান আনা মারিয়া৷