পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে অজ্ঞান সুকান্ত হাসপাতালে
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪সন্দেশখালি নিয়ে সুকান্তর নেতৃত্বে বিজেপি-র বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার থেকেই। মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত বসিরহাটে অবস্থান বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তিনি। বিজেপি-র সাতজন কর্মীকে সন্দেশখালির ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মুক্তির দাবিতে তিনি থানা ও এসপি-র অফিস ঘেরাও করার কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। রাতে পুলিশ তাকে জোর করে তুলে দেয় এবং গ্রেপ্তার করে। কিছুক্ষণ পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
বুধবার সকালে তিনি পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে টাকির হোটেলের পিছনের দরজা দিয়ে ইছামতীর তীরে চলে যান। বিজেপি-র কিছু কর্মী সরস্বতী প্রতিমা নিয়ে হোটেলের সামনের গেট দিয়ে বেরোতে চান। তাদের পুলিশ আটকায়। তর্কাতর্কি শুরু হয়। সেই সুযোগে পিছনের দরজা দিয়ে সুকান্ত বেরিয়ে যান। তিনি ইছামতীর তীরে গিয়ে সরস্বতী পুজো করেন। এরপর পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় সুকান্তর।
সুকান্ত তখন পুলিশের গাড়ির বনেটের উপর দাঁড়িয়ে যান। সেখানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ তাকে কোলে করে নামাতে চায়। তিনি বনেটে শুয়ে পড়েন।
বিজেপি-র অভিযোগ, সেই সময় পুলিশের গাড়ি চলতে শুরু করে। সুকান্ত পড়ে যাচ্ছিলেন। দলের সমর্থকরা তাকে ধরে ফেলেন। সুকান্তর দেহরক্ষী ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা বারবার বলেন, সুকান্তকে তারাই গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন, কিন্তু পুলিশ তাদের কথা শোনেনি।
পুলিশের সঙ্গে তর্ক এবং ধস্তাধস্তির জেরে তিনি অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। তারপর পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাকে সেখানে অক্সিজেন-সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার রক্তচাপও বেড়েছে।
বিজেপি কর্মীরা জানিয়েছেন, তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। বিজেপি চাইছে, সুকান্তর শরীর কিছুটা ভালো হলে তারা তাকে কলকতায় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাবেন।
বামেদের বিক্ষোভ
সন্দেশখালি-কাণ্ডের জন্য সাবেক বাম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তারপর থেকেই বামেরা গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে থানা ঘেরাও কর্মসূচি নিয়েছে। মঙ্গলবার বসিরহাটে তারাও বিক্ষোভ দেখায়। পুলিশ গিয়ে সেখানে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে।
সিপিএম জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদে পুলিশের মারের ফলে তাদের এক সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও জানিয়েছেন, তিনিও ওই ঘটনার কথা শুনেছেন। সাধারণ আইন অমান্যের ডাক দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ অতি সক্রিয় হয়ে এই কাণ্ড করলো।
অধীর বলেছেন, ''পুলিশের যেখানে সক্রিয় হওয়ার দরকার ছিল, সেই সন্দেশখালিতে তারা কিছু করলো না, আর যেখানে সক্রিয়তা দেখানোর দরকার নেই, সেখানে তারা এই সব কাজ করছে।''
হাইকোর্টের নির্দেশ
সন্দেশখালি থেকে মঙ্গলবার রাতেই ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের বক্তব্য ছিল, উপদ্রুত এলাকা চিহ্নিত না করে ১৪৪ ধারা জারি করা যায় না। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরে সন্দেশখালিতে ১৯টি জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এই জায়গাগুলি সবই সন্দেশখালির প্রবেশপথ।
বিরোধীদের অভিযোগ, তারা যাতে সন্দেশখালিতে যেতে না পারেন, সেজন্য.এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সন্দেশখালির রাজনীতি
প্রবীণ সংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''সন্দেশখলি নিয়ে বিজেপি রাজনৈতিক দিক থেকে লাভবান হোক, তা চাইছেন না মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। সিপিএমের সাবেক বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তারপর সিপিএম এখন থানা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছে। মমতা চাইছেন, বিরোধিতার জায়গাটা বামেরাও কিছুটা অধিকার করুক। তাহলে বিজেপি যে লাভ পেতে চাইছে, সেটা হবে না।''
তবে শুভাশিস মনে করছেন, ''সন্দেশখালিতে যা হয়েছে ও হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে তৃণমূলের কাছে চিন্তার। কারণ, ওখানে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করছেন। এরকম ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল খুবই চাপের মুখে পড়ে। বিজেপিও সন্দেশখালিকে হাতিয়ার করে দক্ষিণবঙ্গে পা রাখার জমি খুঁজছে।''
জিএইচ/এসিবি (এসিবি(পিটিআই, আনন্দবাজার, টিভি৯)