1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সমাজে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৪ এপ্রিল ২০১৭

‘‘কওমি মাদ্রাসার এই স্বীকৃতি বর্তমান সরকারের প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার সঙ্গে অবশ্যই দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে এবং সমাজ অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে৷’’ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে কথাগুলো বলেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক৷

https://p.dw.com/p/2bixm
Bangladesch Islam - Szenen aus Madrasa
ছবি: DW/M. Mamun

ডয়চে ভেলে: কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক: আমি যে সব জেনেশুনে বলতে পারব, তা নয়৷ কারণ কওমি মাদ্রাসায় কী পড়ানো হয়, তার কোনো ধারণাই আমার নেই৷ তবে যেটা বুঝি, আমাদের সাধারণ শিক্ষায় যা পড়ানো হয় তা কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা থেকে পুরোপুরি আলাদা৷ আর আলাদা বলেই কিছুতেই তুলনা করা যাবে না৷ আসলে তাদের ধরনটাই আলাদা৷ সত্যি বলতে কি, এ নিয়ে আমার তেমন কোনো আগ্রহও নেই৷ কারণ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে আসা মানুষগুলো আমাদের সঙ্গে যে পরিচিত হন, তা নয়৷ যাই হোক, আমার মনে হয় মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনামূলক বিচার বা মাদ্রাসা শিক্ষার মৌলিক সংস্কার সাধন করে সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে এর পার্থক্যটা ঘুচিয়ে তারপর এ নিয়ে আলাপ-আলোচনার করে এটা পার্লামেন্টে যাওয়া উচিত ছিল৷ কারণ এটা মৌলিক শিক্ষার বিষয়৷ এগুলো না করেই প্রধানমন্ত্রী এটা করে দিলেন৷ আমরা মনে হয় না, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শিক্ষা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর এভাবে সমাধান করা যায়৷

Interview of Prof. Hasan Azizul Haque - MP3-Stereo

সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে এই শিক্ষা ব্যবস্থা কোনো দ্বন্দ্ব কি আপনি দেখেন?

সেই কথাই তো আমি বলছিলাম৷ এ সব শিক্ষায় শিক্ষিত বা কওমি মাদ্রাসা শেষ করেনি এমন মানুষদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়, মুক্তভাবে পৃথীবিটাকে দেখা, মানুষকে, জগৎকে বিশেষ করে মুক্ত চোখে দেখা বা মানুষকে মানুষ বলে বিবেচনা করার মনোভাব তাদের মধ্যে তৈরি হয়নি৷ তাই না? সেখানে একটা তুলনামূলক বিচার-বিবেচনা না করে হঠাৎ করে ঘোষণাটা দিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী? তিনি কেন এটা করলেন? এটা কি কোনোরকম চাপের কাছে নতিস্বীকার?

এখন তাদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেয়া হলো, কিন্তু আগের স্তরগুলোর তো কোনো পূনবিন্যাস হয়নি, তাই না?

না, আমি সেটাই তো বলছি৷ পূর্ণবিন্যাস যেহেতু হয়নি, তাই আমি এটা মাস্টার্স ডিগ্রির ‘ইকুইভ্যালেন্ট' করা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি না৷ যে প্রক্রিয়ায় এটা করা হয়েছে সেটা না করে জাতির কাছে বলে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এটা করা যেত৷ আমি তো সারা জীবন এক ধারার শিক্ষার পক্ষে৷ অথচ এখন তো এটা ত্রিধারা হয়ে গেছে৷ একটা ইংরেজি শিক্ষা, একটা সাধারণ শিক্ষা, আরেকটা মাদ্রাসা শিক্ষা৷ শিক্ষিত লোকের যে সংজ্ঞা, এটা-ওটা শিখলে আমরা একজনকে শিক্ষিত লোক বলি, এতে করে সেটার ব্যাপারে তো খুবই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়ে যাবে৷ চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রেও সমাজে একটা এলোমেলো অবস্থার সৃষ্টি হবে৷ এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও দেখে দেবে জটিলতা৷ সব জায়গাতেই এটা হবে৷ এটার সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যত যে কী, তা আমি জানি না৷ আমার মনে হয়, দূরপ্রসারী চিন্তা করে বিষয়টা নিয়ে মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে হয়ত এ রকম একটা সিদ্ধান্তের কথা ভাবা যেতে পারত৷

চাকরির ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে?

এই যেমন ধরুন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির যে মান, সেটা হয়ত এরা পূরণ করতে পারবে না৷ অন্তত আমার সেটাই মনে হয়৷ আর অন্যান্য চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে এরা সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী হলেও অগ্রাধিকার পাবে কিনা জানি না৷ কারণ যাঁরা কাজ দেন, তাঁরা যাদের নেন তাদের যোগ্য বলেই মনে করেন৷ আমার মনে হয়, বিরাট একটা বেকার শ্রেণি তৈরি হবে এর ফলে৷

এই সনদের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে সরকারি কোনো প্রতিনিধি থাকবে না৷ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের করা কমিটির অধীনেই পরীক্ষা নিয়ে সনদ দেওয়া হবে৷ এতে শিক্ষার মান কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

একটু আগেই যা বললাম, তাতে কি তোমার প্রশ্নের উত্তর হয়ে যায় না?

এটা কি আমাদের ২০১০ সালের শিক্ষানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক?

সাংঘর্ষিক তো বটেই৷ আমার তো অন্তত সেটাই মনে হয়৷ আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাই আমার কাছে মনে হয় এলোমেলো হয়ে গেছে৷ কী করতে হবে, শিক্ষার শেষ উদ্দেশ্য কী? শিক্ষাগ্রহণ করে ভালো মানুষ তৈরি করা৷ তার মনে, ভালোবাসা, জ্ঞান, ভালো ভাবনা তৈরি করা৷ সহানুভূতি, সমাজের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করা৷ সেটা যদি না হয়, তাহলে এই শিক্ষা কী কাজে আসবে? আমার তো মনে হয়, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অপূর্ণাঙ্গ, এলোমেলো এবং ফলাফলনির্ভর হয়ে গেছে৷

বর্তমান সরকারের প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার সঙ্গে এই স্বীকৃতি কি দ্বন্দ্ব তৈরি করবে?

বর্তমান সরকারের প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা নিয়ে যদি তুমি গভীরভাবে চিন্তা করো, তাহলে তুমিই বুঝতে পারবে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হবে কি হবে না৷ আমার মনে হয়, অবশ্যই দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে৷ সমাজ অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে, পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে এবং এই সমস্ত শিক্ষিত মানুষ যখন বেকারত্বের মধ্যে পড়বে তখন একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে৷

সরকার হঠাৎ করে এমন একটা কাজ তাহলে কেন করতে গেল?

এটা আমারও বোধগম্য নয়৷ শুধু মনে হচ্ছে, সরকারের যে মৌলিক নীতি তা থেকে পা টলছে না তো? এই দেশটার অনেক ইতিহাস আছে৷ দেশটা দু'বার স্বাধীন হয়েছে৷ একবার ব্রিটিশদের হাত থেকে৷ আরেকবার আমাদের তথাকথিত স্বাধীন দেশ যারা চালাত, তাদের দুই ডানা ছিল৷ এমন অবস্থা হয়েছিল যে, এক ডানা আর আরেক ডানার মধ্যে বিরাট পার্থক্য৷ একসঙ্গে থাকাই যায় না৷ ফলে ভাগ হয়ে গেল৷ বাঙালির ভাগ কিন্তু থেকেই গেল৷ এখন আমরা বাংলা ভাষা কেন্দ্রিক একটা রাষ্ট্র পেয়েছি৷ এখানে বহু গোষ্ঠীর মানুষ – হিন্দু, মুসলমান, সাঁওতাল, চাকমা, গারো সবাইকে নিয়ে আমাদের চলতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে৷ আর এই এগিয়ে যাওয়ার পথে শিক্ষার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই হতে পারে না৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য