ভারতে নতুন সরকার
২০ মে ২০১৪নব নির্বাচিত বিজেপি সাংসদরা দিল্লির গুজরাট ভবন এবং বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং-এর বাসভবনে যাতায়াত করছেন৷ তবে মোদীর রয়েছে একেবারে নিজস্ব টিম, যারমধ্যে আছেন অরুণ জেটলি, যিনি নির্বাচনে হেরে গেলেও সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য৷ আরও আছেন দলের সাবেক সভাপতি নিতিন গডকড়ি, বর্তমান সভাপতি রাজনাথ সিং এবং উত্তর প্রদেশে মোদী তথা বিজেপির বিপুল জয়ের স্থপতি অমিত শাহ৷
সংসদের মোট ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৮৫টি আসনের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও মোদী চান ভোট-পূর্ব শরিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ অর্থাৎ ‘ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক অ্যালায়েন্স' সরকার গড়তে৷
মঙ্গলবার ২০শে মে বিজেপির সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদীর নাম প্রস্তাব করা হবে৷ তারপর জোটের অন্যান্য শরিক দলগুলির অনুমোদন নেয়া হবে এবং সেইমত রাষ্ট্রপতির কাছে তা পেশ করা হবে৷ শপথ গ্রহণের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷
নব নির্বাচিত কিছু সাংসদ দিল্লি সংঘ পরিবারের অফিসে যাতায়াত করলে সেখান থেকে বলা হয়, সরকার গঠনে সংঘ পরিবার হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয়৷ সরকার গঠনে তারা ‘রিমোট কন্ট্রোল' হবে না৷ তবে সরকার পরামর্শ চাইলে তা দিতে আপত্তি নেই৷ উল্লেখ্য, সংঘ পরিবারেই মোদীর রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি হয়েছিল বাল্যকাল থেকে৷
ভাবী প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর মন্ত্রিসভায় কাকে কাকে নেবেন সে বিষয়ে তিনিই যে শেষকথা বলবেন দলের কাছে তা গোপন রাখেননি৷ তাই দলের সভাপতি রাজনাথ সিং, অরুণ জেটলি, অমিত শাহ এবং নিতিন গডকড়ির মন্ত্রিসভায় যাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত, এমনটাই সকলে মনে করছেন৷ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মোদীর পরেই শপথ নেবেন রাজনাথ সিং৷ বুঝিয়ে দেয়া হবে সরকারের দুই নম্বর ব্যক্তিটি হবেন রাজনাথ সিং৷ বাজপেয়ী মন্ত্রিসভায় যেমনটা ছিলেন আডবানি৷ অরুণ জেটলি হয়ত পেতে পারেন অর্থ মন্ত্রক এবং রাজনাথ সিং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ বিগত সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় দলীয় নেত্রী সুষমা স্বরাজকে নিয়ে মোদীর অস্বস্তি রয়েছে৷ নির্বাচনের আগে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করায় রীতিমত বিরোধিতা করেছিলেন সুষমা স্বরাজ৷ সেই থেকে মোদীর সঙ্গে সম্পর্কটা খুব মধুর নয়৷ এখন তিনি মোদী সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দাবিদার হয়ে জোর চাপ তৈরি করার চেষ্টা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, মোদীর কাছে পররাষ্ট্র দপ্তর হলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ বিদেশে মোদীর ভাবমূর্তি নিয়ে যে বিরূপ ভাব রয়েছে তা দূর করার কাজে সুষমা স্বরাজ কতটা সহায়ক হবেন, তা নিয়ে মোদীর সঙ্গে তাঁর একটা আস্থার ঘাটতি রয়ে গেছে৷ দলের প্রবীণতম নেতা লালকৃষ্ণ আডবানিকে সংসদের স্পিকার হবার অনুরোধ করা হতে পারে৷
সরকার বদলের পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে মোদী সরকার কতটা সফল হবেন সেটাই আসল কথা৷ কারণ এমন একটা স্থিতিশীল সরকার গড়েও যদি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অপূর্ণ থেকে যায়, নির্বাচনি ইশতাহারে সার্বিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, অবকাঠামোর উন্নতি, বিনিয়োগ, প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার, দুর্নীতি দমন ইত্যাদির যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে তার বেশিরভাগ যদি কার্যকর করা না হয়, তাহলে মানুষ মোদী সরকারকে ছেড়ে কথা বলবে না৷
এদিকে নির্বাচনি বিপর্যয়ের পর দিল্লির কংগ্রেস সদর দপ্তরে বসে কংগ্রেস কর্ম সমিতির বৈঠক৷ পৌরহিত্য করেন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী৷ দলের নির্বাচনি ভরাডুবির জন্য কে দায়ী, কৌশলনীতিতে কোথায় খামতি ছিল ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা চলে৷ তবে ভোটে দলের দায়িত্ব কার্যত যার কাঁধে ছিল সেই রাহুল গান্ধীকে দল আড়াল করতে চাইছে এই বলে যে, এই বিপর্যয়ের দায়িত্ব দলের সবার৷ কিছু নেতা মুখ খুলে বলেছে কংগ্রেস কর্মসমিতির সদস্যদের মনোনীত করার বদলে দলের গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে করা উচিত৷