1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সরকার সমঝোতা করছে’

৪ এপ্রিল ২০১৩

ব্লগার রাসেল পারভেজের ছেলে বুধবার স্কুলে যায়নি৷ মা যেতে দেয়নি৷ ছেলের বাবাকে অপরাধী সাজিয়ে ‘ত্রাস সৃষ্টিকারী’ হিসেবে গণমাধ্যমকে দেখিয়েছে পুলিশ৷ এরকম অবস্থায় ছেলেকে স্কুলে পাঠানো নিরাপদ মনে করছেন না মা৷

https://p.dw.com/p/188wb
Bangladesh bloggers march in protest against the detention of three bloggers in Dhaka on April 2, 2013. Bangladesh police have arrested three atheist bloggers for allegedly defaming Islam and the Prophet Mohammed, police said, amid demands from religious fundamentalists for an internet crackdown. AFP PHOTO/Munir uz ZAMAN (Photo credit should read MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images)
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images

ডয়চে ভেলের সঙ্গে ড. আসমা বেগম লিপি'র কথা হয় বুধবার দুপুরে৷ ব্লগার মোহাম্মদ রাসেল পারভেজ তাঁর স্বামী৷ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সোমবার রাসেলকে দেখা করতে বলেছিল৷ এর আগে সম্ভবত একবার গোয়েন্দা পুলিশের মিন্টু রোড কার্যালয়ে গিয়েছিলেন রাসেল৷ সেটা ব্লগার মশিউর রহমান বিপ্লবকে সঙ্গ দিতে৷ আলাদাভাবে রাসেলকে আগে কখনো ডাকেনি গোয়েন্দারা৷

সোমবার সন্ধ্যায় গোয়েন্দাদের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে যান রাসেল৷ এরপর রাত এগারটার দিকে ফোন আসে, বাসায় ফিরতে দেরি হবে৷ স্ত্রী লিপিকে একথা জানান রাসেল৷

ব্লগারদের সঙ্গে ‘অন্যায় করা হচ্ছে'

রাত তিনটায় তল্লাশি

রাত তিনটার সময় বাসায় ফেরেন রাসেল৷ একা নন৷ সঙ্গে সাধারণ পোশাকে কয়েকজন পুলিশ৷ এদের মধ্যে দু'জন ছিলেন সশস্ত্র৷ এই গোয়েন্দা পুলিশের দল কোনো রকম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা তল্লাশির অনুমতি ছাড়াই ঢুকে পড়ে রাসেলের বেডরুমে৷ জব্দ করে একটি কম্পিউটার, মডেম যেগুলো ব্যবহার করতেন রাসেল৷ এরপর রাসেলকে সঙ্গে নিয়েই আবার ফিরে যায় তাদের কার্যালয়ে৷

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই তল্লাশির বিষয়ে লিপি বলেন, ‘‘তারা বাসায় এসে আমাদের বেডরুমে কম্পিউটার, ল্যাপটপগুলো দেখেছে৷ এরপর জিজ্ঞাসা করেছে কোনটা কে ব্যবহার করে৷ রাসেল কোনটা ব্যবহার করে দেখিয়ে দিতেই সেটা তারা নিয়ে নেয়৷ খুলে নেয় কম্পিউটারের সঙ্গে থাকা মডেমটিও৷''

লিপি নিজেও একসময় ব্লগ লিখতেন৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে তিনি লিখতেন ‘স্বরহীন' নামে৷ সোমবার দিবাগত রাতের ঘটনা সম্পর্কে লিপি বলেন, ‘‘আমার কাছে মনে হয়েছে, বাসায় ফেরার আগ পর্যন্ত রাসেল নিজেও জানতো না যে তাঁকে আটক করা হবে৷''

‘ধর্ম মানুষের জন্য'

রাসেল এবং লিপি দু'জনই পদার্থবিজ্ঞানী৷ লিপি এই বিষয়ে পিএইচডি করেছেন৷ রাসেলের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযোগ হচ্ছে, ইন্টারনেটে ছদ্মনামে ‘ধর্ম নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য ও কটূক্তি করেছেন'৷ লিপি এই অভিযোগের পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পান না৷ তাঁর স্বামী ধর্ম ও বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেছেন খুবই কম৷ এবং সেগুলো তিনি লিখেছেন কয়েক বছর আগে৷ সেসব লেখা প্রসঙ্গে লিপির বক্তব্য হচ্ছে, ‘‘ধর্ম নিয়ে সে যেসব বিশ্লেষণাত্মক লেখা লিখেছে, সেগুলোতে যদি সহিংসতা বা সমাজে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী কোনো বিষয় থাকত, তাহলে তখনই এসব হতে পারতো৷ তাঁর লেখা নিয়ে ব্লগে আলোচনা হয়েছে, সমালোচনা হয়েছে, কথা হয়েছে৷

‘‘আমার স্বামী ধর্মকে বিশ্লেষণ করেছেন৷ আমি বলবো না যে, সে সমাজে কোনো ধরনের উস্কানি দিয়েছে, ত্রাস সৃষ্টি করেছে বা সমাজকে বিভক্ত করতে চেয়েছে৷''

ব্যক্তিগতভাবে নাস্তিক বা ধর্মে অবিশ্বাসী নন রাসেল৷ তবে তিনি বিশ্বাস করেন ধর্ম মানুষের জন্য৷ এই ব্লগার খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন৷ বিভিন্ন মানবিক সহায়তার আহ্বানে তিনি সাড়া দিয়েছেন নিয়মিত৷ অনেক অভিজ্ঞ বাংলা ব্লগারের কাছে আদর্শ তিনি৷

বাবার অপেক্ষায় দেড় বছরের শিশু

পরিবার ঘেঁষা ব্লগার রাসেল দুই সন্তানের জনক৷ ছোট মেয়ের বয়স মাত্র দেড় বছর৷ ছোট্ট মেয়েটি বাবার সান্নিধ্য পেতে এখন অস্থির আচরণ করছে৷ ছেলের বয়স সাত বছর৷ তাকে বুধবার স্কুলে যেতে দেননি তার মা৷ হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত ব্লগার রাসেল এবং অন্যদেরকে সাধারণ অপরাধীর মতো করে ‘ত্রাস সৃষ্টিকারী' হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করেছে৷ ফলে সাধারণ মানুষের মনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন৷

সাত বছরের সন্তানকে এসব প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চান না লিপি৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘রাসেলকে যারা জানে বা চেনে, তারা সবাই জানে রাসেল কতটা নরম প্রকৃতির এবং মানবিক গুনসম্পন্ন একজন মানুষ৷ এখন আমি অবশ্যই চাইবো না, আমার সন্তান জানুক তার বাবা ‘ত্রাস সৃষ্টিকারী'৷ আসলে সেটা নয়৷ তার বাবা চোর ডাকাতও না, সরকারের টাকা মেরে খাচ্ছে না৷ তার বাবা মানুষের কোনো ক্ষতি করছে না৷ কিছুই করছে না৷''

গোয়েন্দারা রাসেলকে আটকের পর থেকেই তাঁকে ছাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন লিপি৷ বুধবার ডয়চে ভেলেকে এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি ছিলেন গাড়িতে, গন্তব্য হাইকোর্ট৷ রাসেলের জন্য একজন ভালো উকিল ধরতে হবে, তাঁর খোঁজ নিতে হবে, জামিনের চেষ্টা করতে হবে - কাজ অনেক৷ খানিকটা খেদও ধরা পড়লো লিপির গলায়৷ জানালেন, তারা যদি শক্তিশালী কেউ হতেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন, তাহলে হয়ত এত সহজে পুলিশ রাসেলকে গ্রেপ্তার করতো না৷ অন্তত এই কাজ করার আগে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতো গোয়েন্দারা৷

A Bangladeshi youth shouts slogans as Bangladeshi social activists and bloggers participate in a demonstration demanding the death sentence for the country's war criminals during a nationwide strike in Dhaka on February 18, 2013. One protester was shot dead as police fired rubber bullets at Islamists in a eastern town as a strike enforced by Bangladesh's largest Islamic party crippled life across the nation. AFP PHOTO/ Munir uz ZAMAN (Photo credit should read MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images)
‘‘সমঝোতা করতে গিয়ে ব্লগারদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে’’ (ফাইল ফটো)ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images

ব্লগারদের সঙ্গে ‘অন্যায় করা হচ্ছে'

রাসেলসহ অন্যান্য ব্লগারদের মুক্তির দাবিতে ব্লগ সম্প্রদায়কে সক্রিয় থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন লিপি৷ পাশাপাশি সতর্ক করে দিয়েছেন, এরকম পরিস্থিতি অন্যদের সঙ্গেও হতে পারে৷ হয়েছেও৷ সোমবার ব্লগার সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে আটক করেছে পুলিশ৷ আরো কয়েকজন ব্লগারকে শীঘ্রই গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ বাংলা ব্লগারদের জন্য সময়টা তাই মোটেই ভালো নয়৷

বর্তমান ক্ষমতাসীন দল তার মেয়াদকালের শেষ সময়ে এসে ভোটের রাজনীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি, সেটা বোঝেন লিপি৷ কিন্তু তারা ‘জনগণের গর্দান কেটে' জনগণের ভোট পাবে বলে মনে করেন না এই ব্লগার৷ তিনি বলেন, ব্লগারদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সরকার ‘সমঝোতা' করছে৷ আর এই সমঝোতা করতে গিয়ে ব্লগারদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে৷

সাক্ষাৎকার: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: জাহিদুল হক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য