ব্লগার আসিফ গ্রেফতার
৩ এপ্রিল ২০১৩তবে আসিফের পরিবার দাবি করেছে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ স্পষ্ট নয়৷ আর গ্রেফতারের পর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আসিফ৷
গত ১৪ জানুয়ারি রাতে উত্তরায় আসিফ মহিউদ্দীনকে হত্যার চেষ্টা করে মৌলবাদীরা৷ কিন্তু তিনি গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান৷ আর এই হত্যা প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয় দুদিন আগে৷ গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, তাঁরা আল-কায়েদার অনুসারী৷
কিন্তু মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ দুদিন পর বুধবার অসুস্থ আসিফ মহিউদ্দীনকে গ্রেফতার করল৷ গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, তাঁকে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তাঁর বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে৷ অভিযোগ - তিনি ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন৷
যেভাবে গ্রেফতার
আসিফের বড় বোন অধ্যাপক ড. জাহিদা মেহেরুন্নেসা ডয়চে ভেলেকে জানান, আসিফ তাদের সঙ্গেই সেগুনবাগিচার বাসায় থাকত৷ মঙ্গলবার রাত থেকেই ডিবি তাঁকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তবে পারেনি৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডিবির চাপের কারণে বুধবার সকাল ১১টার দিকে আসিফের আরেক বোন জেবুন্নেসাকে সঙ্গে করে নিজেদের গাড়িতে করে আসিফকে ডিবি অফিসে পাঠানো হয়৷ ডিবি বলেছিল তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হচ্ছে৷ পরে জানতে পারেন তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে৷ ডিবি আসিফের ল্যাপটপটিও নিয়ে গেছে৷
অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আসিফ
ড. মেহেরুন্নেসা জানান বিকেল পর্যন্ত তাঁর বোন জেবুন্নেসা আসিফের সঙ্গেই ডিবি অফিসে ছিলেন৷ আসিফকে সেখানে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদের কারণে সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ দাঁড়াতে পারছেনা৷ তাঁকে শুইয়ে রাখা হয়েছে৷
ড. মেহেরুন্নেসা বলেন যেখানে আসিফের ওপর হামলাকারীদের বিচার হবে সেখানে এখন উল্টো আসিফকেই গ্রেফতার করা হলো৷ সরকার জামায়াত-শিবিরের কাছে নতি স্বীকার করছে৷ আসিফ এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি৷ উচ্চমাত্রার ওষুধের কারণে সে খুবই দুর্বল৷ এই অবস্থায় তাঁকে গ্রেফতার এবং যদি রিমান্ডে নেয়া হয় তাহলে তা তাঁর জীবনের জন্য হবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ৷
কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই
তিনি বলেন আসিফের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা বা মামলার কাগজ দেখাতে পারেনি৷ আর তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা প্রমাণিত নয়৷ তাঁর দাবি আসিফ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মতো কোনো লেখা লেখেনি বা ধর্ম নিয়ে কোনো কটুক্তি করেনি৷ সে কিছু প্রশ্ন তুলেছে৷ কোনো বিষয়ে প্রশ্ন তোলা তো চিন্তার স্বাধীনতা৷ তাহলে কি মানুষ স্বাধীন চিন্তাও করতে পারবেনা৷ তিনি তাঁর ভাইয়ের মুক্তি দাবি করে বলেন, সরকার প্রয়োজনে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে আসিফের লেখালেখি তদন্ত করে দেখতে পারে৷
শিক্ষা আন্দোলনে আসিফ
আসিফ মহিউদ্দীনকে ২০১১ সালেও একবার গ্রেফতার করেছিল ডিবি৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে আসিফ তখন ব্লগে সোচ্চার হয়েছিলেন৷ আর সেই আন্দোলনের দাবি শেষ পর্যন্ত সরকার মেনে নেয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ সরকার বহন করতে সম্মত হয়৷ কিন্তু দাবি মেনে নিলেও আসিফকে গ্রেফতার করে তখন মানসিক নির্যাতন চালানো হয়৷ আসিফের বোন ড. মেহেরুন্নেসা জানান, আসিফের লেখালেখি নিয়ে হাইকোর্টে রিটও হয়েছিল৷ কিন্তু সেই রিটের জবাবে আদালত কখনোই আসিফকে গ্রেফতার করতে বলেননি৷
আশঙ্কা সত্য হলো
মাত্র দুইদিন আগে ডয়চে ভেলের কাছে আসিফ তাঁকে গ্রেফতার করার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন৷ বলেছিলেন তাঁকে গ্রেফতার করে যদি রিমান্ডে নেয়া হয় তার ধকল সহ্য করার মত শারীরিক অবস্থা তাঁর নেই৷ আর শেষ পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করা হলো৷
তাঁকে গ্রেফতারের আগে মঙ্গলবার আরও তিন ব্লগারকে গ্রেফতার করে সাতদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে আসিফ মহিউদ্দীনকে বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে হাজির করা হবে৷ বুধবার হাজির করার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়৷