‘‘সরকার বসে থাকতে পারে না’’
২৯ জুলাই ২০১৩ডিডাব্লিউ: আড়ি পাতার কর্মসূচি ‘প্রিজম'-কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বান্স পেটার ফ্রিডরিশ বলেছেন, নিরাপত্তা হলো ‘সুপার মৌলিক অধিকার'৷ তাহলি কি কিছু মৌলিক অধিকার বাকি অধিকারগুলির তুলনায় আরও উঁচু স্থানে থাকতে পারে?
হর্স্ট দ্রায়ার: না, সে রকম কিছু নেই৷ বরঞ্চ বিপরীতটাই ঠিক৷ সংবিধান সংক্রান্ত শিক্ষার মূল ভিত্তিই হচ্ছে, অধিকারের ব়্যাংকিং হতে পারে না৷ একটি মাত্র ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটতে পারে, আর সেটা হলো যখন মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ সে ক্ষেত্রে বিষয়টিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে দেখা হয়, সংবিধানে উল্লিখিত কোনো সাধারণ নীতি হিসেবে নয়৷ জার্মান সংবিধানে মানুষের মর্যাদার স্থান সবার উপরে৷
তাহলে যে সব মৌলিক অধিকারের মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত রয়েছে, সে সব ক্ষেত্রে কী করা উচিত? বর্তমানে অনেক রাজনীতিক বলছেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের কিছুটা নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে৷ তথ্য সংরক্ষণের তুলনায় তা নাকি অনেক বেশি জরুরি৷
সাধারণভাবে বলতে গেলে যে কোনো ক্ষেত্রেই বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে৷ পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি খাড়া করতে হবে৷ তারপর একটা ভারসাম্য খুঁজতে হবে৷ তবে এটা করে স্পষ্ট ফলাফল পাওয়া যায় না৷ তবে দায়িত্বটা স্পষ্ট হয়ে যায়৷
আমার মনে হয়, বিষয়টির পেছনে সম্পূর্ণ আলাদা একটা দৃষ্টিকোণ রয়েছে৷ তাকে ঠিক ‘সুপার মৌলিক অধিকার' বলা উচিত নয়৷ সেটা হলো নিরাপত্তা চিরকাল রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল এবং আছে৷ যে কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্বের মৌলিক ও কেন্দ্রীয় বৈধতার পেছনে রয়েছে দেশের ভিতরে ও বাইরে শান্তি রক্ষা করার শর্ত৷ আধুনিক রাষ্ট্রের তত্ত্বের জনক টোমাস হবেস তা বলে গেছেন৷
তার মানে কি এই যে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালনের দোহাই দিয়ে নাগরিকদের অধিকার খর্ব করতে পারে?
হ্যাঁ, আইনের ক্ষেত্রে হামেশাই এটা ঘটে তাকে৷ জার্মানির রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক বিকাশের ক্ষেত্রে কয়েক দশক ধরেই দেখা যাচ্ছে, যে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের এই পুরানো সংজ্ঞাকেও মৌলিক অধিকারের মধ্যে ফেলা হচ্ছে৷ আমাদের প্রশ্ন হলো, ‘‘এক নাগরিক অন্য এক নাগরিকের অধিকার খর্ব করতে গেলে রাষ্ট্র কী করতে পারে বা তাকে কী করতে হবে?'' আমি আপনাকে একটা উদাহরণ দিচ্ছি৷ ধরুন, যদি এমন হতো, যে অ্যামেরিকার এনএসএ নয় – জার্মানির কোনো বেসরকারি সংস্থা এভাবে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করতো, তখন বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট হতো৷ বলা হতো, ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডারের উপর এমন হামলা অসহনীয় এবং একেবারে গ্রহণযোগ্য নয়৷ সেই সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নতুন কোনো আইনের প্রয়োজন হতো না৷
আদালতের বিচারকের অনুমতি নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো সাধারণ নিয়ম আছে কি?
শুধু সংবিধানের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বিষয়টি একেবারে সহজ৷ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব করতে হলে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তার আইনি ভিত্তি থাকতে হবে৷ সেই পদক্ষেপ নির্দিষ্ট মাত্রা ছাড়ালেও চলবে না৷ আগেই যেমনটা বলেছিলাম, কোনো বেসরকারি কোম্পানি এমনটা করলে কী হতো? কিন্তু বাস্তবে ঘটনাটা আলাদা৷ কাজটা করেছে বৈদেশিক রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থা৷ সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞদের কাছে বিষয়টি একেবারে অন্য মাত্রা পেয়েছে৷ প্রশ্ন উঠছে, কোনো একটি রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার কি অন্য একটি রাষ্ট্রের মোলিক অধিকারের সঙ্গে খাপ খেতে হবে? বিষয়টি একেবারেই নতুন৷
অর্থাৎ আপনি বলতে চাইছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির মৌলিক অধিকার খর্ব করতে পারে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়?
আমি অন্তত জানি না৷ অ্যামেরিকানরা এখনো পর্যন্ত যা বলেছে, তা যদি আমি বুঝে থাকি, তার মূল কথা হলো, ‘‘আমাদের নাগরিকদের উপর এমন নজরদারি চালাতে পারি না বটে, কিন্তু বিদেশিদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা৷ যখন খুশি, যেভাবে খুশি তা করতে পারি৷'' এমনটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ জার্মানির সংবিধান মোটেই তার অনুমতি দেয় না৷
তাহলে কি নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় বিদেশ থেকে আড়ি পাতার বিরুদ্ধে জার্মানিকে আরও কড়া অবস্থান নিতে হবে?
আমার মত তো সেটাই৷ বিশেষ করে দায়সারা অবস্থান নিলে চলবে না৷ বললে চলবে না, অন্য কোনো রাষ্ট্র এ সব করছে, আমাদের কিছু করার নেই৷ অন্য নাগরিক নয় – অন্য একটি রাষ্ট্র নাগরিক ও মৌলিক অধিকার খর্ব করছে৷ তাহলে রাষ্ট্র নাগরিকদের সুরক্ষার মৌলিক দায়িত্ব পালন করছে কোথায়? জার্মানির সাংবিধানিক আদালত কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে বিস্তৃত ক্ষমতা দিয়েছে৷ আমার মতে, রাষ্ট্র সে ক্ষেত্রে নিষ্ক্রীয় হয়ে বসে থাকতে পারে না৷ তাকে কিছু করে দেখাতেই হবে৷
হর্স্ট দ্রায়ার ভ্যুর্তসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনি দর্শন এবং রাষ্ট্রীয় ও প্রসাসনিক আইনের অধ্যাপক৷ তিনি জার্মানির সংবিধানের বিশ্লেষণ করে তিন খণ্ডের একটি বই লিখেছেন৷
সাক্ষাৎকার: মার্কুস ল্যুটিকে / এসবি
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম