1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বাণিজ্যবাংলাদেশ

সরকারের সামনে ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ

২৯ জানুয়ারি ২০২৪

গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ৪৯ ভাগ৷ ওই ছয় মাসে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল হিসেবে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হয়েছে ১৫৬ কোটি ডলার৷ আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) একই সময়ে যা ছিল ১০৫ কোটি ডলার৷

https://p.dw.com/p/4bnep
ডলারের নোট
গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল হিসেবে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হয়েছে ১৫৬ কোটি ডলারছবি: Karel Navarro/AP Photo/picture alliance

অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরে (২০২৩-২৪) মোট আসল ও সুদ পরিশোধ করতে হবে ৩২৮ কোটি ডলার৷ আগামী অর্থ বছরে অঙ্কটা দাঁড়াবে ৪০০ কোটি ডলার৷ এরপর এর পরিমাণ বাড়তেই থাকবে৷ ২০২৯-৩০ সালে যা হবে ৫১৫ কোটি ডলার৷ ঠিক এখন সরকারের বিদেশি ঋণের পরিমাণ সাত হাজার ৭৬ কোটি মার্কিন ডলার

আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে: সেলিম রায়হান

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আন্তঃব্যাংক ডলার লেনদেনের সুদের হার (সিকিউর্ড ওভারনাইট ফাইনান্সিং রেট-এসওএফআর) বেড়ে গেছে৷ এখন এই রেট পাঁচ ভাগের বেশি হলেও ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ছিল এক ভাগ৷ আর বাংলাদেশের বাজারভিত্তিক( শর্ট টার্ম) ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে৷ ফলে সুদ বেশি গুণতে হচ্ছে আর সময়ও কম পাওয়া যাচ্ছে৷ আর বেশকিছু মেগা প্রকল্প, যেমন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বিদেশি ঋণের ‘প্রেস পিরিয়ড' শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ ফলে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি৷

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, "মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য যে ঋণ নেয়া হয়েছে, সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলেও ঋণ পরিশোধ শুরু হয়ে গেছে৷ এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পর যদি আমাদের রপ্তানি খাতে অবদান রাখতে পারে, যদি আমরা আরো বেশি পরিমাণ রপ্তানি করতে পারি, বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পারি, তাহলে ঋণের চাপ কমবে৷ আমাদের ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে বিদেশি মুদ্রায়৷ তাই আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ সময় নেয়া হয়েছে৷ এর সঙ্গে প্রকল্প ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে৷  এখন যা শুনছি সরকার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করার কথা বলছে৷ নতুন কোনো প্রকল্প তার আগে না নেয়ার কথা বলছে৷ তাতে মনে হচ্ছে, সরকারের একটা রিয়েলাইজেশন হয়েছে৷ তবে এরই মধ্যে যে ঋণ নেয়া হয়েছে, যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে, সেই প্রকল্পগুলোও রিভিউ করা দরকার৷ কতদিন লাগবে বাস্তবায়ন করতে৷ কতটা ভায়েবল হবে৷”

আয় নেই, কিন্তু দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে: জাহিদ হোসেন

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "তারপরও দেশে যে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলছে, তাতে আমাদের ঋণ লাগবে৷ কিন্তু আমাদের দেখতে হবে আমরা কোন ধরনের ঋণ নেবো৷ এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হতে হবে৷ বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক- এইসব বহুপাক্ষিক সোর্সগুলোতে ঋণের সুদ কম এবং গ্রেস পিরিড বেশি থাকে৷ কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যে ঋণ নেয়া হয়, তার সুদের হার বেশি থাকে এবং সেগুলো শর্ট টার্ম হয়ে থাকে৷ গত ১০ বছরে আমরা এই শর্ট টার্ম ঋণ বেশি নিয়েছি৷ ফলে তা শোধ করতে হচ্ছে৷ বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিলে তাদের অনেক শর্ত থাকে৷ সেটা এড়িয়ে যেতেই হয়তোবা সরকার শর্ট টার্ম ও বেশি সুদে ঋণের দিকে ঝুঁকেছে৷ কিন্তু এই ঋণ আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ৷”

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, "দুই দিক থেকে বিদেশি ঋণের চাপ বাড়ছে৷ একটা  হলো, ডলারের দাম বাড়ছে, যা আমাদের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলছে৷ আর হলো, ফাইনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ডেফিসিট৷ আমরা যে ঋণ ইদানিংকালে  নিয়েছি, সেগুলোর ব্যবহার যথাসময়ে করতে না পারায় ওই ঋণ থেকে রিটার্ন আসছে না৷ কিন্তু টাকা ফেরত দেয়ার সময় চলে এসেছে৷ ফলে আয় নেই, কিন্তু দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে৷”

রাজনৈতিক কারণে অর্থনীতি চাপে ছিল: এমএ মান্নান

তার কথা, "যে ঋণ আমরা নিয়েছি, সেটা তো আমাদের ফেরত দিতে হবে৷ ফেরত না দেয়ার তো কোনো বিকল্প নাই৷ এখন এই ঋণ পরিশোধ করতে হলে আমাদের রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে৷ আর কোনো পথ দেখছি না৷ আমাদের ডলার আয় বাড়াতে হবে৷ নয়তো ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে অন্যখাতে না আবার ডলার সংকট তৈরি করে৷ আর নতুন ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷ যেসব ঋণ সস্তায় পাওয়া যায়, দীর্ঘ মেয়াদে পাওয়া যায়, সেটা নিলে আমাদের  চাপ বাড়বে না৷ যেমন, বিশ্বব্যাংক, এডিবির ঋণ ৩০ বছর মেয়াদে৷ দুই থেকে আড়াই শতাংশ সুদ৷ আরো পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যায়৷ তবে তাদের তো আবার পছন্দের প্রকল্প আছে৷ সেটা ধরে আমাদের জন্য যেগুলো ভায়াবল হবে, সেগুলো আমরা নিতে পারি৷ আর চীনসহ যেকেনো দ্বিপাক্ষিক ঋণেরই সুদের হারই বেশি৷ সময় কম৷ আবার তাদের শর্তও বেশি৷ তাই ওই ধরনের ঋণ নিলে হিসাব করে নিতে হবে, যাতে প্রকল্প থেকেই ঋণ শোধ করা যায়৷ পেলেই নিতে হবে, সেটা নয়৷ লাভজনক হলে নেয়া যাবে৷”

এ বিষয়ে সদ্য সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, "আমরা ঋণ করেছি, তা  তো শোধ করতে হবে৷ ঋণের চাপ তো বাড়বেই৷ গত ছয় মাস, নয় মাস নির্বাচনের কারণে , রাজনৈতিক কারণে অর্থনীতি চাপে ছিল৷ রাজস্ব আদায়, বিনিয়োগসহ আরো অনেক দিকে সমস্যা হয়েছে৷ আমার মনে হয় এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে৷ যদি ছয় মাসও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে, তাহলে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে৷”

তার কথা, "প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন, নতুন প্রকল্পে না গিয়ে, কৃচ্ছতা সাধন করে, যে প্রকল্প আছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন৷ আমরা মনে হয় ভয়ঙ্কর কিছু হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অর্থনীতিতে একটা মেসেজ যাবে৷ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যাবে৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান