1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সস্তা জনপ্রিয়তার ভার্চুয়াল সত্য

২৫ আগস্ট ২০২৩

শিল্পী থেকে রাজনৈতিক নেতা- সকলেই হাঁটছেন সস্তা জনপ্রিয়তার মিছিলে। পা হড়কালে আর তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

https://p.dw.com/p/4VYnw
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি: DW

বাঁচার জন্য় সত্যিই কি খুব লড়াই করার প্রয়োজন ছিল কবীর সুমনের? নব্বইয়ের দশকে যে বিপ্লব তিনি রচনা করেছিলেন, আগামী একশ বছরে বাঙালি চাইলেও তা অস্বীকার করতে পারবে না। ভুলতে পারবে না। কবীর সুমন বেঁচে থাকবেন আধুনিক বাংলা গানের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া কবিয়াল হিসেবে। আগামী আরও অন্তত একশ বছর বাঙালি গাইবে- গানের জন্য় গান হয়ো না, বাঁচার নিশান হয়ে/ যুগান্তরের খবরটাকে তুমিই আনো বয়ে/গান তুমি হও জীবন বিমুখ গানের সমকালে/ বাঁচার লড়াই, বাঁচাও আমায় তোমার তালে তালে।

বাঙালির বাঁচার লড়াইয়ের স্লোগান হয়ে উঠেছিলেন যে কবীর সুমন, তিনি হারিয়ে যাবেন হয়তো তার ‘চরিত্রের’ জন্য়। প্রয়োজন ছিল না সাংবাদিকের বুম, ফেসবুকের দেওয়াল অথবা টেলিফোনের ওপার থেকে খিস্তির সমুদ্র রচনা করার। কবীর সুমনের মতো মানুষেরা যখন এমন করেন, মানুষ তখনবিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেন শিল্পীর থেকে। তার রচনা এবং তার আচরণ বিপ্রতীপ মনে হয়। এক আশ্চর্য কনট্রাস্ট। সত্যিই কি প্রয়োজন আছে এমন কনট্রাস্ট তৈরি করার? কী লাভ হয় এসব করে? জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও সস্তায় জনপ্রিয়তা জিইয়ে রাখা? সুমনের বাংলা খেয়ালই তো যথেষ্ট এখনো তাকে সমান জনপ্রিয় করে রাখার জন্য! সাংবাদিককে খিস্তি, দর্শককে খিস্তি করে কি সত্যিই আসলে জনপ্রিয় থাকছেন শিল্পী মহোদয়?

স্যমন্তক ঘোষ, সাংবাদিক, ডয়চে ভেলে
স্যমন্তক ঘোষ, সাংবাদিক, ডয়চে ভেলেছবি: privat

সুমন তো তবু বাংলা সাহিত্য জগতের মগডালে বসে থাকা অন্যতম প্রতিভা। কী প্রতিভা শ্রী দিলীপ ঘোষের? একসময় বলা হতো রাজনৈতিক প্রাঙ্গনে রাজনৈতিক শিষ্টাচার শিখে নেয়া জরুরি। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষেরা তার ঠিক উল্টো পথের পথিক। ‘নিম্নরুচির’ পলিটিকাল ইনকারেক্ট শব্দ প্রয়োগ করাই তারা রাজনীতির কৌশল বলে মনে করেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থেকে যাদবপুরের ছাত্র-- সকলের জন্যই তার ব্যবহৃত শব্দ সমানভাবে ‘ডাস্টবিন’ থেকে তুলে আনা। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও দিলীপ ঘোষের সেই পথ নিয়েছেন। সময়-সুযোগ পেলেই তিনি অপছন্দের ব্যক্তিকে 'শুয়োরের...' বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন। আর ওই শব্দটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে পাশবিক উল্লাসে ফেটে পড়ছেন তার পার্ষদেরা। যেন অমৃত নিঃসৃত হচ্ছে বিরোধী দলনেতার মুখ থেকে। শুভেন্দু ঠিক যে কায়দায় পুলিশকে শুয়োর-জাতীয় গালিতে ভূষিত করেছেন, ঠিক সে কায়দাতেই একদা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বোলপুরে দাঁড়িয়ে পুলিশকে বোমা মারার হুমকি দিয়েছিলেন না অনুব্রত মণ্ডল? তিহার জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে বসে পুরানো সেই দিনের কথা মনে পড়ে অনুব্রতবাবুর?

এই সেদিনও অনুব্রত ওরফে কেষ্টকে নিয়ে জনমানসে যে হইচই ছিল, কর্পুরের চেয়েও দ্রুত তা মিলিয়ে গেছে। বোলপুরে অনুব্রতের বাড়িও ইদানীং অনেকে চিনতে পারেন না। ঠিক যেমন ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছেন দিলীপ ঘোষ।

আসলে বাংলার রাজনীতিতে কুকথার আসরে বাদ যান না কেউই। নির্বাচনের আগে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে বিরোধী নেতাদের তুই তোকারি করেন তা-ও কম কুরুচিকর নয়। এবং এক্ষেত্রেও আর সব ক্ষেত্রের মতো জনগণ উল্লাসে ফেটে পড়ে।

আসলে এই গলাবাজি, কুকথার প্রবণতা বর্তমান সমাজের অন্যতম অঙ্গ হয়েই দাড়িয়েছে। টেলিভিশনের অ্যাঙ্কর থেকে রাজনীতির কুশীলব--সকলে একই পথ ধরেছেন। কেন ধরেছেন?

প্রচারের নেশায়।সস্তায় জনপ্রিয়তা অর্জনের এর চেয়ে সহজপথ আর কী হতে পারে? বাণিজ্যের গোড়ার পাঠে একটি বিষয় বহুদিন ধরে আলোচিত-- নেগেটিভ পাব্লিসিটি। কুকথা বলে, অন্যায় আচরণ করে, গলা চড়িয়ে সওয়াল করে এক ধরনের মানুষ আসলে সস্তা জনপ্রিয়তার পথে হাঁটতে চাইছেন।

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নামক সমাজে ভেসে থাকতে চাইছেন। কারণ, ওই ভার্চুয়াল সত্যকেই মানুষ এখন মূল সত্য বলে জ্ঞান করছেন। এক অনুব্রতরাই হয়তো বুঝতে পারছেন, টেলিভিশন এবং মোবাইল স্ক্রিনের ভার্চুয়াল সত্যের বাইরে আসলে একটা বাস্তবিক জগৎ আছে। আর সেই জগৎ জেলের কুঠুরির মতোই নির্মম। সস্তা জনপ্রিয়তাকে উল্টে দিতে তার কয়েক মুহূর্ত সময় লাগে মাত্র।