‘সাংবাদিকরা চিন্তা করবেন না, ৩২ ধারা আপনাদের বিরুদ্ধে নয়'
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ডয়চে ভেলে : হঠাৎ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন হলো কেন?
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক : সাইবার ক্রাইম সারা বিশ্বে ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে৷ সেজন্য আমরা প্রস্তুত থাকতে চাই যে, এই ধরনের ক্রাইম যদি বাংলাদেশে হয়, তাহলে আমরা সেটাকে যেন মোকাবেলা করতে পারি৷ প্রস্তুতি যেন আমাদের থাকে সেই কারণেই এই আইন৷
এই আইনের ফলে সরকারের কি খুব সুবিধা হবে?
সরকারের সুবিধা এখানে বড় কথা নয়, আমাদের কাছে জনগণের সুবিধাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ জনগণের সুবিধা হবে এই বিশ্বাসে আমরা এই আইন করছি৷
৩২ ধারা নিয়ে এত সমালোচনা হচ্ছে, তাহলে এটা বাতিল করতে অসুবিধা কী?
আপনারা যদি ব্রিটিশ আইনটা দেখেন বা অন্যান্য জায়গার আইন দেখেন, তাহলে দেখবেন, ঠিক এমনি আছে ওখানে৷ যদিও ব্রিটিশ আইনের মধ্যে একটা কথা আছে, সেটা হলো, যদি জনগুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে করলে কোনো অপরাধ হবে না৷ সাংবাদিকদের আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, ৩২ ধারা সাংবাদিকদের জন্য নয়৷ এটা হচ্ছে যারা গুপ্তচরবৃত্তি করবে, তাদের বিষয়৷ সাংবাদিকরা গুপ্তচরবৃত্তি করবে না, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস৷ আর ৩২ ধারা নিয়ে যেভাবে আলোচনা হচ্ছে, সে কারণে তার যদি কোনো পরিমার্জন করতে হয়, তাহলে সেটা আমরা করবো৷
সাংবাদিকরা এমনিতেই ঝুঁকির মধ্যে থাকেন৷ নতুন আইন সাংবাদিকদের ঝুঁকি আরও বাড়াবে কিনা?
অবশ্যই বাড়বে না৷ সাংবাদিকদের টার্গেট করে যেহেতু এই আইন করা হয় নাই৷ এটা পারসেপশনের ব্যাপার৷ দেখেন, আমরা সাংবাদিকদের কোনো অপরাধী ভাবি না৷ আমরা সাংবাদিকদের দেশের চতুর্থ স্তম্ভ ভাবি৷দেশের উন্নয়ন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার ব্যাপারে তাঁদের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তাঁদের টার্গেট করে কোনো আইন শেখ হাসিনার সরকার করবে না৷
বলা হচ্ছে, দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারি কর্মকর্তারা এই আইনটির কারণে খুশি হয়েছেন৷ তাদের সন্তুষ্টির জন্যই এই আইন?
না, বরং যারা দুর্নীতিপরায়ন, তাদের ধরার জন্যই এই আইন৷
আগে তো আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল, এরপর সেটা বাতিল করলো সরকার, এখন নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা নিয়ে বিতর্ক উঠছে।৷বারবার এই বিতর্ক কেন? আর এই ধারাগুলো রাখা কি খুব জরুরি?
আমি তো বললাম, ৩২ ধারায় যে অপরাধ সংজ্ঞায়িত আছে, সেটা কিন্তু অফিসিয়াল সিকরেট অ্যাক্টেও ছিল৷ সেটা নিয়ে কেউ কিন্তু কোনোদিন কথা বলেনি৷ এখন এটা নিরাপত্তা আইনে আনা হচ্ছে এই কারণে যে, ডিজিটাল ডিভাইস দিয়েই গুপ্তচরবৃত্তি করা হচ্ছে৷ ফলে এই আইনে এটা আনা হচ্ছে৷ আমি বারবার বলছি, এটা কিন্তু সাংবাদিকদের টার্গেট করে করা হয়নি৷ এবং সাংবাদিকদের এই ৩২ ধারার কারণে কোনো হয়রানির মধ্যে পড়তে হবে না৷
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা কি তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ?
অবশ্যই৷ রাইট টু ইনফেরমেশন আর সিকিউরিটি অ্যাক্টের ৩২ ধারার মধ্যে কোনো সংঘাত তো আমার চোখে পড়ে না৷
সাংবাদিকদের কাজই তো গোপন তথ্য ফাঁস করা৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মূল বিষয়বস্তুও তো তাই?
আমি তো বললাম, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না৷
আপনারা বলছেন, দুর্নীতির রিপোর্ট করলে কোনো দোষের হবে না৷ কিন্তু আইন তো সেটা বলছে না...
আমার তো মনে হয়, আইনের ব্যাখ্যা আপনারা যেটা দিচ্ছেন, সেটা ঠিক না৷
তাহলে আইনের সঠিক ব্যাখা কী?
এখানে বলা আছে, রাষ্ট্রীয় এমন কোনো তথ্য, যেটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য গোপন রাখা উচিত, এখন কেউ যদি সেই তথ্য আমাদের শত্রুকে দিয়ে দেন, সেটাই হলো গুপ্তচরবৃত্তি৷ সাংবাদিকরা এই দেশের নাগরিক, তাঁরা এই কাজ করবে কেন? সেই কারণে আমি বলছি, সাংবাদিকদের টার্গেট করে এটা করা হয়নি৷
অ্যামেরিকাসহ উন্নত দেশে কিন্তু সাংবাদিকরা ‘গুপ্তচরবৃত্তির' আশ্রয় নিচ্ছেন৷ বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের তথ্য সেভাবেই বের হয়ে আসছে৷ তাহলে এখানে অসুবিধা কী?
আমার মনে হয়, তাঁরা গুপ্তচরবৃত্তি করে না, এর অন্য কোনো ব্যাখ্যা আছে৷ তাঁদের সেটা গুপ্তচরবৃত্তি নয়৷
আপনি বলেছেন, সাংবাদিকরা এই আইনের কারণে সমস্যায় পড়লে আপনি লড়াই করবেন৷ আসলে কী এটা সম্ভব?
অবশ্যই আমি করবো৷ সম্ভব কিনা, সেটা আপনি বিপদে পড়লেই দেখবেন আমি দাঁড়াই কিনা৷
আপনি মন্ত্রী হিসেবে এটা পারেন কিনা?
আমি লড়াই করবো৷ আপনারা দেখেন আমি কিভাবে করি৷
সাংবাদিক কমিউনিটির উদ্দেশ্যে আপনার কোনো পরামর্শ?
আমি বারবার বলবো, ভবিষ্যতেও বলবো, আপনারা ৩২ ধারা নিয়ে চিন্তিত থাকবেন না৷ ৩২ ধারা আপনাদের বিরুদ্ধে নয়৷
আইনমন্ত্রীর কথায় আপনি কতটা আশ্বস্ত? লিখুন নিচের মন্তব্যের ঘরে৷