1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড, আদালতে আইএস-এর টুপি

২৭ নভেম্বর ২০১৯

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস জঙ্গি হামলার রায়ে আট আসামির মধ্যে সাত জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত৷ একজনকে খালাস দিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/3TnhO
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman

বুধবার দুপুর ১২টার পর  ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এই রায় দেন৷

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন: জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ ওরফে র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মামুনুর রশিদ রিপন ও শরীফুল ইসলাম খালিদ৷ খালাস পেয়েছেন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান৷ রায় ঘোষণার সময় আট জনই আদালতে উপস্থিত ছিলো৷

তারা রায় শুনে আদালতেই ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দেন৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান আইএস (ইসলামিক স্টেট)-এর টুপি মাথায় দিয়ে আদালতে হাজির হন৷ আসামিরা রায়ের পর নিজেদের শহিদ দাবি করে সন্তোষও প্রকাশ করেন৷

প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা ২২ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে৷ নিহতদের মধ্যে পাঁচ জন বাংলাদেশি, নয় জন ইতালিয়ান, সাত জন জাপানি এবং এক জন ভারতীয় নাগরিক৷ তারা বেকারিতে প্রবেশ করে ৪৫ জন ব্যক্তিকে জিম্মি করে৷ এর মধ্যে ওই ২২ জনকে গুলি, বোমা ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়৷

হামলার পর অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা৷ পরের দিন ২ জুলাই সকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাথে নিয়ে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা অভিযান চালিয়ে জীবিতদের জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত করেন৷ কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও বেকারির একজন শেফ নিহত হন৷ আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরো একজন রেস্তোরাঁ কর্মী৷

ভয়াবহ এই জঙ্গি হামলা মামলার তদন্ত করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই হামলায় আট জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়৷ তদন্তে হামলায় ২১ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেও তাদের মধ্যে ১৩ জন হোলি আর্টিজানে কমান্ডো অভিযান ও পরবর্তী জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়৷ সে কারণে ওই ১৩ জনকে বাদ দিয়ে আট জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়৷

চার্জশিট দেয়ার প্রায় চার মাস পর গত বছরের ২৬ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করে বিচারকাজ শুরু করে৷ আদালত ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আজ ২৭ নভেম্বর রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করে৷

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী হোলি আর্টিজানে হামলা চালায় নব্য জেএমবি৷ হামলার সমন্বয়ক ও মূল পরিকল্পনকারী ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক, নব্য জেএমবি নেতা তামিম আহমেদ চৌধুরী৷ পরে তিনি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হন৷ চার্জশিটে বলা হয়েছে, জঙ্গিরা বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন ও বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হামলাটি চালায়৷ তারা বেকারিতে প্রবেশ করে ৪৫ জন ব্যক্তিকে জিম্মি করে৷ এর মধ্যে ২২ জনকে গুলি, বোমা ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়৷

জড়িত ২১ জনের মধ্যে সরাসরি হামলায় অংশ নেওয়া ৫ জন নিহত হন সেনাকমান্ডো অভিযানে৷ তারা হলেন: রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ৷

এছাড়া হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর বিভিন্ন অভিযানে জড়িতদের মধ্যে আরো আট জন নিহত হয়৷ তারা হলেন: তামিম চৌধুরী, সরোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান, তানভীর কাদেরী ওরফে জামসেদ, নুরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান চকোলেট, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ও রায়হান কবির ওরফে তারেক৷

আমরা আপিল করবো: আসামি পক্ষের আইনজীবী

রায়ের পর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু সন্তোষ প্রকাশ করেন৷ যে ব্যক্তি খালাস পেয়েছেন তার ব্যাপারে আপিল করা হবে বলেও জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহু আকবর ধ্বণি দিয়ে জঙ্গিরা যেভাবে হোলি আর্টিজানে হামলা চালিয়েছিল, রায় ঘেষণার পর আসামিরা একইভাবে আল্লাহু আকবর ধ্বণি দেয়৷ তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি৷’’

একজন আসামির আইএস-এর টুপি পরে আদালতে হাজির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এটা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয়৷’’

রায়ের পর আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘রায় কেমন হয়েছে, সেটা নিয়ে আমি মন্তব্য করবো না৷ তবে আমরা আপিল করবো৷’’

আদালতে উপস্থিত নিহতদের কয়েকজনের স্বজনরা দ্রুত রায় বাস্তবায়নের দাবি জনিয়েছেন৷

আদালত এলাকায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এই রায় ঘোষণা করা হয়৷ রায় ঘোষণার ১৫ মিনিটের মধ্যেই আসামিদের  আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয়৷

যা হয়েছিল সেদিন: