সানিয়া’র ‘ভারতীয়ত্ব’ নিয়ে বিতর্ক
২৯ জুলাই ২০১৪তাঁর বক্তব্য, সানিয়া পাকিস্তানি এক ক্রিকেটারকে বিয়ে করে ‘পাকিস্তানের পুত্রবধূ' হয়ে গেছেন৷
ভারতের নবতম রাজ্য তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কেআর রাও টেনিস তারকা সানিয়া মির্জাকে রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করায় তার প্রতিবাদে রাজ্য বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কদলের নেতা কে লক্ষণ এক বিতর্ক খাড়া করেছেন৷ বলেছেন সানিয়া তাঁর ভারতীয়ত্ব হারিয়েছেন কারণ তিনি বিয়ে করেছেন পাকিস্তানের ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে৷ অতএব সানিয়া এখন পাকিস্তানের পুত্রবধূ৷ দ্বিতীয়ত সানিয়া জন্মেছেন মহারাষ্ট্রে৷ বসবাস করেছেন তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদে৷ কাজেই তিনি প্রকৃত অর্থে তেলেঙ্গানার নন৷
বিজেপি বিধায়কের অভিযোগ, রাজ্যের তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি সরকার সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকের দিকে তাকিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এজন্য সানিয়াকে যেখানে সম্মান দক্ষিণা বাবদ দেয়া হয় এক কোটি টাকা, সেখানে তেলেঙ্গানার ১৩ বছরের কিশোরী মালাভাত পূর্ণা ২০১৪ সালের ২৫ মে এভারেস্ট জয় করার পর তাঁকে দেয়া হয় মাত্র ২৫ লাখ টাকা৷ তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন তেলেঙ্গানা সরকার ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে বেছে নিল না রাজ্যের ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষণ কিংবা ব্যাডমিন্টন তারকা সাইনা নেহওয়ালকে? উল্লেখ্য, সামনেই হায়দ্রাবাদ পুরসভার ভোট৷
সানিয়ার বক্তব্য
এই অসংবেদী বিতর্কে সানিয়া স্বভাবতই ক্ষুব্ধ ও আহত৷ বলেছেন, তাঁর ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দেয়ার প্রয়োজন নেই৷ তিনি ভারতীয় ছিলেন, আছেন এবং আমরণ থাকবেন৷
অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন?
প্রশ্ন উঠেছে, এটা কী কোনও ব্যক্তি-রাজনীতিকের বেফাঁস মন্তব্য, নাকি এর গভীরে নিহিত আছে বিজেপি তথা সঙ্ঘপরিবারের হিন্দু জাতীয়তাবাদের অ্যাজেন্ডা? যেখানে ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেয়া হয় না৷ সামাজিক মেরুকরণকেই প্রাধান্য দেয়া হয়৷ প্রাচীন সামাজিক কাঠামোয় বিয়ের পর পতির পরিচয়ই হয়ে ওঠে মেয়েদের পরিচয় ও অবস্থান৷ কিন্তু আধুনিক নারীবাদে তা মানা যায় না৷ যে বিজেপি বিধায়ক সানিয়ার ভারতীয়ত্বের দিকে আঙুল তুলেছেন, ভুলে গেলে চলবে না কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধীর পত্নী ইটালির মেয়ে আজকের সোনিয়া গান্ধীকে ভারতীয় বধূ হিসেবে মেনে নিতেও রাজি ছিল না এই বিজেপি৷ রাজনৈতিক প্রচারে সোনিয়াকে বিদেশিনি প্রতিপন্ন করতেই বেশি উৎসাহী ছিল৷
বিজেপির এই দ্বিচারিতা কেন? যদিও সরকারি স্তরে এই বিতর্ক উড়িয়ে দিয়ে মোদী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভেদকর বলেছেন, সানিয়া ভারতের গর্ব এবং শুধু তেলেঙ্গানা নয়, গোটা ভারতের ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডর৷
বিজেপির এই আশ্বাসবাণীতেই বিতর্ককে ধামাচাপা দেয়া যায় না৷ এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করারও কারণ নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ তাই মোদী সরকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে এই ধরণের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা ভবিষ্যতে ভারতের মানসিকতাকে যেন কলুষিত না করে৷ উল্লেখ্য, সপ্তাহ খানেক আগে দিল্লির মহারাষ্ট্র সরকারের অতিথি নিবাসে খাদ্যের মান খারাপ হবার অভিযোগে এক বিজেপি সাংসদ সেই খাবার জোর করে সেখানকার মুসলিম বাবুর্চির মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন রোজার সময়ে৷ এই নিয়েই সংসদের ভেতরে ও বাইরে হৈচৈ কম হয়নি৷