সাবেক প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে বিস্ফোরক মহুয়া
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ভারতের সংসদে বিচারবিভাগের সমালোচনা করে অতীতে কম মন্তব্য করা হয়নি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাংসদদের ক্ষোভের কারণ ছিল জুডিশিয়াল অ্যাক্টিভিজম বা বিচারবিভাগের অতি-সক্রিয়তা ও নিজেদের সীমা অতিক্রম করা। সাংসদরা মনে করেছেন, অতি সক্রিয় হতে গিয়ে প্রশাসন বা সংসদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে বিচারবিভাগ। কিন্তু লোকসভায় দাঁড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতির প্রবল সমালোচনা করার কাজ কম হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি সেই কাজই করে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
তৃণমূল কংগ্রেসের এই সাংসদ সুবক্তা। অতীতেও সংসদে তাঁর ভাষণ নিয়ে এবং সংসদের বাইরে কিছু কথা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। কিছুদিন আগেই রিপোর্টারদের 'দুই পয়সার সাংবাদিক' বলেছিলেন তিনি। তখন অনেকেই তাঁর ঔদ্ধত্যের কথা বলেছিলেন। তবে সংসদে দেখা গেছে তিনি যা বলেন, সরাসরি বলেন। এক্ষেত্রেও তাই করেছেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণ নিয়ে বিতর্কে অংশ নিয়ে মহুয়া যা বলেছেন, তার মোদ্দা কথা হলো, দেশের বিচারব্যবস্থা আর পবিত্র নেই। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি যেদিন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগের বিচার নিজে করেছেন, সেদিন থেকেই ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে। তিনি নিজেকে দোষমুক্ত ঘোষণা করেছেন এবং প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেয়ার মাস তিনেকের মধ্যে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন, জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পেয়েছেন।
এরপরই প্রহ্লাদ জোশী জানিয়ে দেন, মহুয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ রঞ্জন গগইকে আক্রমণ করেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে অধিকারভঙ্গের প্রস্তাব আনা হবে। কিন্তু তারপর এখনো পর্যন্ত সেই প্রস্তাব আনা হয়নি। বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবনাচিন্তা চলছে। সম্ভবত এই প্রস্তাব আনা হবে না।
রাজনৈতিক নেতারা জনসভায় বা ভোটের প্রচারে নেমে অনেক কথাই বলেন। তা নিয়ে বিতর্ক হয় ঠিকই, কিন্তু সেগুলি সাধারণত রাজনৈতিক আক্রমণ ও তার গুরুত্ব কম থাকে। কিন্তু সংসদে কোনো মন্তব্য করা হলে, তা অত্যন্ত গুরুত্ব পায় এবং সেই মন্তব্য নজির হয়ে থেকে যায়। সেজন্যই মহুয়ার কথা নিয়ে এত বিতর্ক হচ্ছে। তাঁর ভাষণের ওই বিতর্কিত অংশ লোকসভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেয়ার দাবি উঠেছে।
কেন্দ্রে মন্ত্রী ও আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় টুইট করে বলেছেন, মহুয়ার কথাগুলো আসলে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ধরতে হবে। তিনি ভাষণের রিপোর্টের কিছু জায়গায় লাল কালি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নাম লিখেও দিয়েছেন।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু অবশ্য মহুয়ার ভাষণ শুনে অভিভূত। তিনি টুইটে মহুয়ার ভাষণ তুলে দিয়ে বলেছেন, ওই ভাষণ বিশ্বে পার্লামেন্টের সেরা ভাষণের মধ্যে একটি বলে গণ্য হবে। তবে কৌশিক বসু কৃষক সমস্যা, অর্থনীতি, পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে মহুয়ার বক্তব্যের কথা তুলে ধেরেছেন। বিচারবিভাগের উল্লেখ টুইটে করেননি।
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''মহুয়া কারো নাম নেননি। একটা তথ্য দিয়েছেন মাত্র। আর যাঁর সম্পর্কে দিয়েছেন, তিনি এখন কোনো উচ্চ সরকারি পদে নেই। সেই তথ্য দিয়ে মহুয়া নিজের মতামত জানিয়েছেন। এতে আপত্তি থাকলে তো অনেকের ক্ষেত্রেই অতীতের কোনো তথ্য সংসদে দেয়া যাবে না।''
মহুয়ার মন্তব্য ইতিমধ্যেই বিতর্ক তুলে দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমেও তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পক্ষে ও বিপক্ষে মতপ্রকাশ করছেন অনেকেই।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)