1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধের আশায় আট দফা পেশ

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৩ আগস্ট ২০২৪

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কমতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। তবে চাঁদাবাজি ও জমিদখল প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে।

https://p.dw.com/p/4jQhU
Bangladesch Protest gegen den Angriff auf Minderheiten
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

তারা জানিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থানে আগের সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বগ্রহণ পর্যন্ত মাঝের তিনদিন সংখ্যালঘুদের ওপর ভয়াবহ হামলা ও নির্যাতন হয়েছে। ৫২টি জেলায় কয়েকশ’ হিন্দু পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। তাদের বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ও মন্দিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে।

এদিকে নিজেদের সংখ্যালঘু ধারণার ‘খোপে' আবদ্ধ না করতে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক মতবিনিময় সভায় তিনি হিন্দুদেরকে ধৈর্য ধরে সরকারকে সহায়তা করারও আহ্বান জানিয়েছেন। ড. ইউনূস বলেন, "খোপ তৈরি হলে, খোপের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি লেগে যাবে। একাত্ম হয়ে আইনের অধিকারের দাবি তুলতে হবে।”

সংখ্যালঘু ইস্যুতে বহির্বিশ্বের কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। মঙ্গলবার রাজশাহী সফরের সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কার শেষে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে বর্তমান সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে সেনাবাহিনী।

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. ইউনূস। বৈঠক শেষে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কাছে সময় চেয়েছেন। আমরা তাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমরা তাকে আট দফা দাবি দিয়েছি। তিনি সবাইকে এক হয়ে দেশের সংকট মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় তিনি কোনো সম্প্রদায়কে তাদের ধর্ম বা জাতিতে ভাগ করেননি। তিনি বলেছেন, দেশে আইন একটা, সংবিধানও একটা। আইনের শাসন ঠিক হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা ২ আগস্ট একটা সেল করেছি। সেখানে প্রতিদিনই নানা ধরনের তথ্য এসেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরদিন আমরা একটা সংবাদ সম্মেলন করেছি। সেখানে বলেছি, ৫২টি জেলায় প্রায় ৩শ' হিন্দু পরিবার আক্রান্ত হয়েছে। এরপর যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো একত্রিত করে এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা একটা রিপোর্ট দেবো।”

‘৫২টি জেলায় প্রায় ৩শ' হিন্দু পরিবার আক্রান্ত হয়েছে’

প্রধান উপদেষ্টার কাছে ঐক্য পরিষদের দেওয়া আট দফার দাবিগুলো হলো- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন; জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন; অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন অনুসারে জমির মালিকানা ও ভুক্তভোগীদের প্রত্যর্পণ; জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকার, সংসদ ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থায় অংশীদারিত্ব; দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন; বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন; পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দূর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী-এ ৩ দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় ১ দিন ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডে'তে ১ দিন সরকারি ছুটি।

গত ৫ আগস্ট হবিগঞ্জে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়৷ শহরের ক্রীড়া সামগ্রী ব্যবসায়ী রঞ্জন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "৫ আগস্ট আমার দোকানটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার নোরারচক গ্রামের হরিমতি মন্ডল ডয়চে ভেলেকে জানান, "আগের সরকারের পতনের দিন রাতেই আমার ঘের থেকে শ্যালো মেশিন নিয়ে যায়। গোয়ালে থাকা ৬টি ছাগল নিয়ে গেছে। এছাড়া ঘেরের পাশের ঘর থেকে যা কিছু ছিল লুটপাট করে নিয়ে গেছে।” সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের গণেশ মন্ডল ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, "আমার বসবাড়িতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে যা কিছু ছিল লুট করে নিয়ে যায়।”

‘এই ধরনের কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কেউ ছাড় পাবে না’

এদিকে ‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন'-এর সাধারণ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসনসহ অনেকগুলো কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছেন। যেহেতু সরকার সময় চেয়েছে, তাই আগামী ৩ দিন ‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন'-এর সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো কর্মসূচি থাকছে না।

ক্ষতিগ্রস্তদের মামলা করার আহ্বান

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'-এর অন্যতম সমন্বয়ক বাকের মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরপরই কিছু সুযোগসন্ধানী মানুষ এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনাটি জানার পরই আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সব জায়গায় ছাত্র জনতাকে সতর্ক করেছি। তারা পাহারা দিয়েছে। আমরা সবাইকে আহবান জানিয়েছি, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা যেন মামলা করেন। সরকার নিশ্চয় এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। আমরা যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছি, তখন আমরা বলেছি, এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তবে এই ধরনের কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কেউ ছাড় পাবে না।”

তবে এবার কিছু জায়গায় ভিন্ন চিত্রও দেখা গেছে। অনেক এলাকায় মাদ্রাসা ছাত্ররা হিন্দুদের বাড়ি-ঘর উপাসনালয়ে পাহারা দিয়েছেন। এলাকাবাসীও এমন দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে হামলা, লুটপাট অনেক কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এ বিষয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত বলেন, "পাহারার দরকার হলো কেন? হামলা হয়েছে বা হচ্ছে বলেই তো এই ধরনের পাহারার দরকার হয়েছে। তবে আশার কথা, আগের রাজনৈতিক সরকারগুলো সংখ্যালঘুদের উপর হামলার কথা স্বীকার করতো না, বর্তমান সরকার এটা স্বীকার করছেন। তারা প্রতিকারের আশ্বাসও দিচ্ছেন, এটা ইতিবাচক।”

অপরদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, "দেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্রকারীরা পরিকল্পিতভাবে দেশে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করছে। এ অবস্থায় এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের জান-মাল রক্ষায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা ভ্রাতৃত্বের ও শান্তিময় বাংলাদেশ উদ্যাপন করবো। এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি যেন না হয়, যাতে অর্জিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে যায় কেউ।”