1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সার্ক থেকে ফুল সার্কল

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী১৪ জুন ২০১৫

বলতেও ভয় লাগে: ইউনাইটেড স্টেটস অফ সাউথ এশিয়া? ইউএসএসএ? না, এ শতাব্দীতে নয়, তবে ধীরে ধীরে৷ ধরুন শ'খানেক বছর পরে? হ্যাশট্যাগ সমৃদ্ধ উপমহাদেশ?

https://p.dw.com/p/1FgJJ
Symbolbild Europäische Union
ছবি: Georges Gobet/AFP/Getty Images

হতে যে পারত না, এমন নয়৷ একাধিক বার প্রায় হয়েও এসেছিল৷ কিন্তু যুদ্ধবিগ্রহ, দেশজয়, সম্রাট আকবরের সাম্রাজ্য বিস্তার অথবা পলাশির যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে৷ আমি গোড়াতেই গোটা উপমহাদেশের কথা না ভেবে, টেস্ট ক্রিকেটের চারটে, অথবা শ্রীলঙ্কাকে আপাতত বাদ রেখে তিনটি দেশের কথাই ভাবছি – যে তিনটি দেশ সম্পর্কে আর যাই ভাবুন না কেন, তারা যে কখনো এক হতে পারে, এমন কথা যেন ভুলেও ভাববেন না! কোথায় রায়ট লেগে যাবে, কে কা-কে জানের হুমকি দেবে, কেউ কি জানে?

ভাবছিলাম, যে ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেছি, ভাগ্যক্রমে তার ইতিহাসই হল বিভাজনের ইতিহাস৷ আর আজ যে দেশে বাস করি, ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনায় সেই জার্মানিও ছিল শ'তিনেক জমিদারি থেকে নৃপতিশাসিত রাজ্যের একটা বিক্ষিপ্ত সমষ্টি৷ সেই জার্মানিকে একত্রিত করতে ১৮৭১ সাল হয়ে যায়৷ জার্মানি আবার বিভক্ত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর৷ দ্বিধাবিভক্ত জার্মানিকে একত্রিত করতে এবার বেশি সময় লাগেনি: ১৯৯০ সালেই দুই জার্মানি আবার এক হয়ে গিয়েছে৷

Indien und Bangladesch regeln jahrzehntealten Grenzstreit
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad

একান্নবর্তী পরিবারের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আজ আলোচনা করে কোনো লাভ নেই কারণ ঐ বস্তুটি উপে গেছে৷ ঠিক সেইরকমই উপমহাদেশের একীকরণ বা একত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই – কিন্তু শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান? এমনকি আত্মীয়তা? বিয়ে-শাদিতে দাওয়াত? সে ছাড়ুন, কিন্তু পাড়া-পড়শি, সুপ্রতিবেশি? এক পাড়ায় বিভিন্ন জাত-ধর্ম-পেশা ও নেশার মানুষদের শান্তিতে বাস করাটা এমন শক্ত হয়ে দাঁড়াল কবে?

মনে আছে, আমার দিদি কোমরে শাড়ির আঁচল জড়িয়ে পায়ে কেডস পরে কচি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ডাল লেক ঘুরে এলেন বিক্ষুব্ধ কাশ্মীরে – যদি আর কোনোদিন সুযোগ না পাওয়া যায়? আমার নিজের স্বপ্ন ছিল রুডিয়ার্ড কিপলিং-এর কিম উপন্যাসের কিশোর নায়কের মতো লাহোর মিউজিয়ামের সামনে খেলা করব; সেখান থেকে গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড ধরে পাড়ি দেব তিব্বতি লামার সঙ্গে...

আমি রাজনৈতিক মিলনের কথা ভাবছি না৷ জার্মানি তথা ইউরোপে প্রথম যখন আসি, এক যুগ আগে, তখন শেঙেন চুক্তি শুরু হতে আরো কয়েক বছর বাকি৷ ইউরোপের প্রতিটি দেশে যেতে তখন ভিসা লাগত, দূতাবাসে দৌড়োদৌড়ি করতে হতো, সীমান্তে পাসপোর্ট দেখিয়া ঠাপ্পা নিতে হতো৷ আর আজ? বিভাজন আর মিলনের মাঝখানে যে একটা তৃতীয় ধরনের নৈকট্য – এবং দূরত্ব অথবা পার্থক্য – থাকতে পারে, সেটা তো ইউরোপই আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছে৷ গ্রিসের আবদার থেকে ব্রিটেনের গোঁ – প্রতিবারেই তো মনে হয়, ইউরোপ গেল বলে, ইইউ গেল বলে, ইউরো গেল বলে৷ কিন্তু শেষমেষ ব্রাসেলস, বার্লিন, প্যারিস, এদিক-সেদিক মিটিং-এর পর মিটিং করে ব্যাপারটা তো ঠিকই মিটিয়ে ফেলে ইউরোপীয়রা? যুদ্ধের ঝঞ্ঝনির দিকে যাওয়া তো দূরের কথা, এরা কাউকে একঘরে পর্যন্ত করতে রাজি নয়; বিদায় দেওয়া তো দূরের কথা, পাড়া ছেড়ে বেপাড়ায় যেতে দিতে রাজি নয়৷

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

কেমন যেন দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জে আমাদের পুরনো গরচা পাড়ার কথা মনে পড়ে যায়৷ সেখানেও পাড়া ছেড়ে যাওয়াটা ছিল গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার মতো, গরচা ছেড়ে যাওয়াটা ছিল কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার আগের ধাপ৷ সে হিসেবে অতি সমৃদ্ধ ইউরোপও একটা গ্রাম৷ এখানেও জার্মানরা, ফরাসিরা, ওলন্দাজরা, পোলিশরা তাদের নিজের নিজের মহল্লায় থাকে বটে, পাড়ার এক্তিয়ার সম্পর্কেও তারা পুরোমাত্রায় সচেতন৷ কিন্তু পাড়া ছেড়ে যাওয়ার কথা কেউ ভাবে না, ভাবতে পারে না৷

সার্কের একক দেশগুলো নয়, সার্ক এবং সার্কের ধারণাটাকেই একটা ইউরোপীয় ধারণা করে তুলতে হবে৷ আমরা সবাই একসঙ্গে আছি কারণ আমাদের যৌথ ইতিহাস আমাদের একসঙ্গে বেঁধে রেখেছে৷ কারণ একসঙ্গে থাকাতেই আমাদের ফায়দা, একসঙ্গে থাকাতেই আমাদের মঙ্গল৷ এক পাড়ায় যখন গা-ঘেঁয়াঘেষি করে বাস, তখন তোমার চালে আগুন দিলে সে আগুন আমার চালে ছড়াতে কতক্ষণ?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান