সালেম খানের হুঁশিয়ারি, ‘প্রয়োজনে নবান্ন অভিযানে যাবো'
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২চলছে প্রতিবাদ
আনিসের বাবা সালেম খান, বড় ভাই সাবির খান এবং আনিসের প্রতিবেশীদের মিছিল বৃহস্পতিবার দুপুরে আমতা থানায় পৌঁছায়৷ আমতা থানা থেকে আনিসের বাড়ি প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটারের পথ৷ অসুস্থ শরীরে আনিসের বাবা গিয়েছিলেন সেই রাস্তা ধরেই৷ সন্তানহারা বাবার একটাই দাবি, হত্যাকারীর শাস্তি, সুবিচার চান তিনি৷ এরপর তারা থানা ঘেরাও করেন৷ পরিস্থিতি হয়ে ওঠে অগ্নিগর্ভ৷ গ্রামবাসীদের মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে৷ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার অভিযোগও করেছে পুলিশ৷
আমতা থানা ঘেরাও কর্মসূচির মিছিলে বারবার একটা স্লোগানই উঠেছে বারবার, ‘আনিস হত্যার বিচার চাই৷'
থানা চত্বরে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়৷ ২০২১ সালের মে মাস থেকে বারবার নিরাপত্তা চেয়েও এই থানার পুলিশের কোনো সাড়া পায়নি বলে মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও বলেছেন আনিস৷
আনিসের বাবা, তার দাদা-সহ ছয় জন আমতা থানায় প্রবেশ করে অতিরিক্ত পুলিস সুপারের সঙ্গে কথা বলেন৷ আনিসের পরিবার এবং প্রতিবেশীরা মিছিল নিয়ে থানায় এলেও পরবর্তীতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা তাতে যোগ দেন৷ যোগ দেন বিরোধী দলের স্থানীয় নেতারাও৷ মিছিল থেকে ওসি এবং এসপি. অতিরিক্ত সুপার, এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান এবং উপপ্রধানকে গ্রেপ্তারের দাবিও ওঠে৷ আনিস হত্যার বিষয়ে এসডিও-কে চিঠি দেয়া হয়েছে বলেও জানান আনিসের প্রতিবেশীরা৷ সেখানে রবিবারের মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করা না হলে ওইদিন এসপি অফিস ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে আনিসের পরিবার৷
সিবিআই তদন্তের দাবিতে অনড় তিনি, মিছিল থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন আনিসের বাবা সালেম খান৷ প্রয়োজনে নবান্ন অভিযানের কথাও জানান তিনি৷ তবে জনতাকে শান্ত থাকতে বলেছেন বারবার৷
ফুরফুরা শরিফের কাশেম সিদ্দিকিও ছিলেন এই মিছিলে৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা ইট ছুঁড়ছে তারা সব দালাল৷ এটা এখানকার পঞ্চায়েত প্রধান করছে৷ সিবিআই তদন্তের দাবি করলে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হচ্ছে৷''
হাইকোর্টে শুনানি
বৃহস্পতিবার আদালতে উঠেছিল আনিস হত্যা মামলা৷ সেখানে অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, ধৃতরা বলেছেন, ওসির নির্দেশে কাজ হয়েছে৷ ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক' বলেও উল্লেখ করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল৷ অন্যদিকে, সিটে বিন্দুমাত্র ভরসা নেই আনিসের পরিবারের, আদালতের সওয়ালে স্পষ্ট জানান আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য৷ যদিও দিনশেষে আপাতত রাজ্য সরকারের গঠন করা সিটের উপরেই আস্থা রেখেছে কলকাতা হাইকোর্ট৷
হাইকোর্টের বিচারপতি দুই সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন৷ দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট৷ আনিসের ফোন হাতে পেলে তথ্যপ্রমাণ নষ্টের আশঙ্কার কথাও আদালতকে জানান বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য৷ হাইকোর্ট স্পষ্ট জানায়, দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হলে জেলা বিচারক নিজে বা তার প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত থাকবেন৷ মোবাইল ফোন জেলা বিচারকের উপস্থিতিতে জব্দ করা হবে৷ এরপর হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবকে দিয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে আদালত৷ সেখানকার অধিকর্তাকেও এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
বিকাশরঞ্জন বাবু বলেন, সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরির রিপোর্ট, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট রাজ্য সরকার-সহ সব পক্ষকে দিতে হবে৷
১৫ দিন পর সিট রিপোর্ট দেবে৷ এরপর আদালত খতিয়ে দেখবে আদৌ ঠিকভাবে তদন্ত হচ্ছে, নাকি কারচুপি হচ্ছে৷
হাইকোর্টের নির্দেশের পর আনিসের বাবা সালেম খান স্পষ্ট জানিয়ে দেন,‘‘প্রয়োজনে আবার আদালতে যাবো৷ সিবিআই তদন্তের আবেদন জানাবো৷''
এদিকে দুই পুলিশ কর্মীর গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে আনিসের পরিবারের বক্তব্য, থানার ওসি কিছু জানতেন না- এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ ক্ষমতাশালী কাউকে আড়াল করতেই কি দুই পুলিশ কর্মীকে গ্রেপ্তার- এমন প্রশ্নও তুলেছে আনিসের পরিবার এবং প্রতিবেশীরা৷
প্রশাসনিক তৎপরতা
একাধিক জনকল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আনিস আন্দোলনে সরব ছিলেন বরাবর৷ তাকে খুন করার হুমকি দিয়েছিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা, এমনটাও অভিযোগ ছিল তার৷ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তরফে আনিস হত্যার তদন্ত নিয়ে পরপর টুইট করা হয়৷
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তরফে সেই টুইটে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে আনিসের পরিবার যেন রাজ্যের বিশেষ তদন্তকারী দল এসআইটি-র তদন্তের উপরেই ভরসা রাখেন৷ অর্থাৎ আবারও পরোক্ষভাবে সিবিআই তদন্ত থেকে আনিসের পরিবারকে সরে আসতেই বলা হয়েছে পুলিশের তরফে৷
রাজপথে বিক্ষোভ অব্যাহত
বৃহস্পতিবার পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাস থেকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা মিছিলের ডাক দেন কলকাতায়৷ সেখানে যোগ দেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও৷ আনিস খানের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা৷
আরকেসি/এসিবি (আনন্দবাজার, এবিপি আনন্দ, নিউজ ১৮ বাংলা)