জার্মান জিহাদিরা বিপজ্জনক
১৭ আগস্ট ২০১৪সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘ইসলামি রাষ্ট্র'-এর ভিডিও বার্তায় তাঁদের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷ ‘‘যে ইসলামে আস্থা রাখবে না, কিংবা ইসলামের রীতিনীতি মেনে চলবে না, তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে৷'' এই ভিডিও বার্তাটির বাহক সিলভিও কে৷ ২৭ বছর বয়স্ক এই ব্যক্তি আইএস সালাফিস্টদের জার্মান মুখ৷ জন্ম তাঁর স্যাকসনিতে৷ প্রথমে এসেন পরে সোলিঙেন শহরে নিষিদ্ধ সালাফিস্ট সমিতি ‘মিলাতু ইব্রাহিমের' সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি৷ বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থান করছেন তিনি৷ সেখানে থেকে খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন৷ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে৷
জিহাদি জগতে এক তারকা
সিলভিও কে, তদন্তকারীদের কাছে পরিচিত৷ ‘‘তিনি জিহাদি জগতে এক তারকা৷ জার্মানির ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ সালাফিস্ট তাঁর কথা শোনেন৷'' বলেন সন্ত্রাসী বিশেষজ্ঞ গিডো স্টাইনব্যার্গ৷ এই ইসলামিস্ট অত্যন্ত বিপজ্জনক ও ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তি৷
অতীতে তিনি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে হামলার হুমকি দিয়েছেন৷ সম্প্রতি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সিলভিও জার্মানিতে হামলার আহ্বান জানিয়েছেন৷ ‘আল্লার যোদ্ধা' হিসাবে জার্মানির ‘কাফেরদের' বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন৷
নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ এই ধরনের হুমকিকে গুরুত্বের সাথে দেখছেন৷ নির্দিষ্টভাবে কিছু লক্ষ্যবস্তুর নামও উল্লেখ করায় বিষয়টি আরো উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে৷ যেমন রাইনলান্ড ফালৎস রাজ্যের মার্কিন পারমাণবিকবোমা-সংগ্রহশালা ইসলামিস্টদের নজরে রয়েছে৷ তাই এই স্থাপনাটিকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷
এছাড়া অ্যামেরিকান এয়ারফোর্স বেস-এর সুরক্ষার ব্যাপারেও জোর দেওয়া হচ্ছে৷ সরকারি ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর কিংবা যানবাহন ও পরিবহনের ওপর হামলার ঝুঁকিও রয়েছে৷
প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রত্যাবর্তন
জার্মান সংবিধান সুরক্ষা দপ্তরের মতে ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রায় ৩২০ জন জার্মান জিহাদি সিরিয়া গিয়েছেন৷ এর মধ্যে রয়েছেন স্যাকসনির সিলভিও কে৷
ইসলাম বিশেষজ্ঞ আহমেত সেনিয়ুর্ট এই প্রবণতার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘তরুণরা বিপ্লবে অংশ নেওয়ার আকাঙ্খা নিয়ে সেখানে যান৷ ইসলামি খালিফাত পশ্চিমা সমাজ ব্যবস্থার বিপরীত এক ধারা, যা তাঁদের আকৃষ্ট করে৷''
ইসলামি রাষ্ট্রের দাবিদারদের মধ্যযুগীয় মনে হলেও তাঁদের কাছে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ও মিডিয়ার কলাকৌশল রয়েছে৷ এইভাবে তাঁরা সেইসব মানুষের কাছে পৌঁছান, যাঁরা জার্মান সমাজে কখনই ঠিক মতো গৃহীত হননি বলে মনে করেন৷ বলেন ইসলাম বিশেষজ্ঞ আহমেত সেনিয়ুর্ট৷
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে জার্মানিতে ফিরে এলে এইসব ব্যক্তি আরো চরমপন্থি হয়ে উঠতে পারেন৷ আত্মঘাতী হামলা কিংবা ব্রাসেলসের মতো আক্রমণ ঘটাও অসম্ভব নয়৷ গত মে মাসে খুব সম্ভবত সিরিয়ার ‘পবিত্র যুদ্ধ' থেকে ফেরা এক ব্যক্তির গুলিতে চার ব্যক্তি নিহত হন৷
ইউরোপীয় সমস্যা
ফেডারেল সংবিধান সুরক্ষা দপ্তরের প্রেসিডেন্ট হান্স-গেওর্গ মাসেন বলেন ‘সিরিয়ান যোদ্ধাদের' ফিরে আসা এখন ইউরোপীয় সমস্যা হয়ে উঠেছে, যা নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ৷ এক্ষেত্রে শুধু পুরুষদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে চলবে না৷ মেয়েরাও খুব পিছিয়ে নেই৷ সম্প্রতি বাভারিয়ায় সন্দেহজনক এক নারীকে আটক করা হয়েছে, যিনি সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে ইসলামিস্টদের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন৷ যুদ্ধ কবলিত এলাকায় তাঁর দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি৷