1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিরিয়ায় নিপীড়িত বাংলাদেশিরা

সমীর কুমার দে, ঢাকা১ মার্চ ২০১৬

‘‘দয়া কইরা আমারে এই দোজখ থাইক্যা নিয়া যান৷ এরা ভালা না৷ আমারে নাকি কিন্যা আনছে, দ্যাশে যাইতে দেয় না৷ ....লেবাননের কথা কইয়্যা আনছিল, কিন্তু এখানে খালি যুদ্ধ আর বোমের আওয়াজ৷ ঘুমাইতে পারি না, ঠিকমতো খাওনও দেয় না৷''

https://p.dw.com/p/1I4wc
Symbolbild Human Trafficking
ছবি: AFP/Getty Images

টেলিফোনে এভাবেই দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন যুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় পাচার হওয়া এক বাংলাদেশি নারী৷ লেবাননের একটি হাসপাতালে আয়ার কাজ দেওয়ার নাম করে তাকে আনা হয়েছিল৷ কিন্তু বর্তমানে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে গৃহকর্মী বা কাজের বুয়া হিসেবে কাজ করছেন এই নারী৷ বহুবার দেশে ফরে যেতে চাইলেও তাকে ফেরৎ পাঠানোর কোনো উদ্যোগ কেউ নেয়নি৷

কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসা ঐ নারীর স্বামী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মোবাইল ফোনো স্ত্রীর সঙ্গে ভাইবার মারফত একটি নম্বরে আমার কথা হয়েছিল৷ সেখানে সে একটি বাসায় কাজ করছে৷ এর আগে অবশ্য অন্য একটি বাসায় কাজ করতো সো৷ কিন্তু সেখানে তার ওপর নির্যাতন করা হয়৷ এরপর তাকে নাকি তিন হাজার ডলার দিয়ে কিনে নিয়েছেন এক নারী৷''

ড. তাসনিম সিদ্দিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিচার্স ইউনিটের (রামরু) পরিচালক ড. তাসনিম সিদ্দিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমারা যখন জানতেই পেরেছি, তখন আমাদের উচিত সিরিয়ায় বসবাসকারী এ সব নারীদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা৷ না হলে নারী অভিবাসনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে৷ আমাদের স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যৌথভাবে কমিটি করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে৷ শুধু তাই নয়, ঠিক কী ব্যবস্থা নেয়া হলো তা সংশ্লিষ্টদের জানাতেো হবে৷''

গত ১৩ই জানুয়ারি সিরিয়া থেকে অসুস্থ অবস্থায় ফেরত আসেন রাজবাড়ীর আরেক নারী৷ প্রায় দুই বছর তিনি সিরিয়ায় ছিলেন৷ সেখানে বস্তুত তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল৷ তাঁর কথায়, ‘‘সিরিয়ায় নারীদের জোর করে ঘরের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ একই সঙ্গে জোর করে তাঁদের ওপর চালানো হচ্ছে যৌন নির্যাতন৷ এরপরও অনেকে মুখ বুজে সেই সব নির্যাতন সহ্য করছেন৷''

তিনি আরো জানান, রাজবাড়ীর জাহের নামে একজন দালালকে তিনি লেবাননে যাওয়ার জন্য ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর তিনি জানতে পারেন যে, তাঁকে সিরিয়ায় পাঠানো হয়েছে৷ কোন শহর থেকে কীভাবে তাঁকে সেখানে নেয়া হয়, তা তিনি বলতে পরেননি৷

আসলে গৃহকর্মী অথবা হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে নারীদের সিরিয়ায় পাঠানো হয়েছে, হচ্ছে৷ প্রথমে ঢাকা থেকে দুবাই, তারপর দুবাই থেকে ওমানের রাজধানী আম্মান৷ তারপর আম্মান থেকে এ সব নারীদের বিমানে নিয়ে যাওয়া হয় সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পর্যন্ত ৭৯ জন নারীকে যুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় পাচার করা হয়েছে৷ মন্ত্রণালয় জানায় যে, এঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই৷

গোলাম সারোয়ার

এদিকে র‌্যাব জানায়, বাংলাদেশের কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে মিলে নারী পাচার করছে৷ র‌্যাব-এর পক্ষ থেকে বিদেশে নারী কর্মী পাঠানোর নামে সিরিয়ায় পাচার হওয়া নারীদের নামের তালিকা ও পাসপোর্টের ফটোকপি পাঠানো হয়৷ এই পাচার-চক্রের সঙ্গে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সি, যেমন আল-রাবেতা ইন্টারন্যাশনাল, আল-হাসিব ইন্টারন্যাশনাল, সিকদার ট্রাভেলস, বাংলাদেশ এক্সপার্ট কর্পোরেশন, হাসান ইন্টারন্যাশনাল ও নামিরা ওভারসিজ-এর কর্মকর্তা ও দালালসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তারও করে র‌্যাব৷ তবে দুঃখের বিষয়, ইতিমধ্যে এরা সকলেই জামিনে মুক্তি পেয়ে গেছে৷

র‌্যাব ৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার গোলাম সারোয়ার অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাচারের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে তারা সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছেন৷ এ বিষয়ে দু'টি মামলা হয়েছে এবং দু'টি মামলারই তদন্ত চলছে৷ পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাচারকৃত নারীদের উদ্ধার করার চেষ্টাও চলছে৷ তবে সিরিয়ায় বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে৷''

বন্ধুরা, সিরিয়া থেকে এই সব নারীদের কীভাবে উদ্ধার করা সম্ভব? জানান মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান