সিরীয় যুদ্ধ যাচাই করছে এএফডি
৭ মার্চ ২০১৮জার্মানিতে বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ সিরীয় উদ্বাস্তু অবস্থান করছেন৷ এএফডি দল তাদের সিরিয়ায় ফেরত পাঠাতে চায়৷ এ কারণেই এএফডি বিধায়কদের এই বিতর্কিত সিরিয়া সফর৷ সফররত সদস্যরা মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের চলতি সফরের নানান ছবি পোস্ট করেন, যেমন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সঙ্গে এএফডি বিধায়কদের ছবি বা দামেস্কের রাস্তায় জিনস পরিহিতা মহিলাদের ছবি৷
এএফডির সাত জনের প্রতিনিধি দলে চারজন সাংসদ ও জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের জনবহুল নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের একাধিক বিধায়ক আছেন৷ দলটির দামেস্ক ছাড়াও হোমস ও আলেপ্পো সফরেরও পরিকল্পনা রয়েছে৷ উদ্দেশ্য: ‘‘সর্বত্র যুদ্ধ চলছে, নাকি কিছু কিছু নিরাপদ এলাকাও আছে,'' তা যাচাই করে দেখা৷ নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের বিধানসভায় এএফডি গোষ্ঠীর সহ-সভাপতি হেলমুট জাইফেন ডয়চে ভেলেকে এ কথা বলেছেন৷ তাঁর মতে, এটি একটি ‘বেসরকারি' সফর এবং উদ্বাস্তুদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে এএফডি যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার সঙ্গে এই সফরের কোনো সম্পর্ক নেই৷ তবুও, সদস্যরা আগামী শুক্রবার সিরিয়া সফর শেষ করে জার্মানিতে ফেরার পর তাদের কাছ থেকে রিপোর্ট প্রত্যাশা করা হবে বলে জাইফেন জানিয়েছেন৷ তবে এএফডি বিধায়করা প্রধানত ‘নিরাপদ' এলাকাতেই সফর করবেন বলে জাইফেন ধরে নিচ্ছেন৷
জার্মান ‘ডেয়ার স্পিগেল' পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, এএফডি একট বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘যেসব এলাকা সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে, সেখানকার মানবিক ও পুনর্নির্মাণ পরিস্থিতি পূর্ণাঙ্গভাবে যাচাই করাই এই সফরের লক্ষ্য৷'' জার্মান মিডিয়ার সিরিয়া সংকট বিষয়ক খবরাখবর বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেও ঐ বিবৃতিতে দৃশ্যত মন্তব্য করা হয়৷
‘‘আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সফর করব ও বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথাবার্তা বলব,'' বলে নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের বিধায়ক ক্রিস্টিয়ান ব্লেক্স সিরিয়া যাত্রার আগে ‘কমপ্যাক্ট অনলাইন' নামের একটি দক্ষিণপন্থি সাইটের সাক্ষাৎকারে ঘোষণা করেন৷ ‘‘আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলব,'' বলেন ব্লেক্স৷
গতমাসে একাধিক এএফডি রাজনীতিক রুশ অধিকৃত ক্রাইমিয়ায় যাত্রা করে পশ্চিমি শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন – ব্লেক্স সে দলেও ছিলেন৷ দলটি মস্কো হয়ে ক্রাইমিয়া যায় বলে ইউক্রেন সরকারের দৃষ্টিতে এই সফর বেআইনি৷ কিয়েভ এবং বার্লিন, উভয় সরকারই এএফডি রাজনীতিকদের ক্রাইমিয়া সফরের সমালোচনা করেছেন৷
আসাদের মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক
সোমবার এএফডি বিধায়করা সিরিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি আহমদ হাসুন-এর সঙ্গে একটি দু'ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে মিলিত হন৷ হাসুন দৃশ্যত সিরীয় উদ্বাস্তুদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানান৷ ব্লেক্সের সংশ্লিষ্ট টুইটটিতে ভুল করে বলা হয়, ‘‘ধর্ম ও গির্জার মধ্যে পৃথকীকরণ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ,'' হাসুন তা ‘‘বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন৷'' পরে জানানো হয় যে, হাসুন ‘‘ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে পৃথকীকরণের'' কথা বলেছিলেন৷
ব্লেক্স জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের প্রতি গ্র্যান্ড মুফতিকে জার্মানি সফরের আমন্ত্রণ জানানোর আহ্বান জানান৷ ২০১১ সালে হাসুন হুমকি দিয়েছিলেন যে, সিরিয়া সংঘাতে পশ্চিমি হস্তক্ষেপ ঘটলে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আত্মঘাতী বোমারু পাঠানো হবে৷ তিনি আসাদ সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত৷
ম্যুন্স্টার শহরের এএফডি গোষ্ঠীর মুখপাত্র টোমাস রোয়কেমানের পোস্ট করা একটি ভিডিও পোস্টে বলা হয়েছে যে, হাসুন ডিটিব সংগঠনের সমালোচনা করেছেন – তুর্কি সরকারের সমর্থনপুষ্ট সংগঠনটি জার্মানিতে বিভিন্ন মসজিদকে অর্থসাহায্য করে থাকে৷ তুরস্ক যে সম্প্রতি উত্তর সিরিয়ার আফরিনে অভিযান শুরু করেছে, সম্ভবত তারই পরিপ্রেক্ষিতে হাসুনের এই সমালোচনা৷ অপরদিকে এএফডি দলের ইসলামবিরোধী মনোভাবের সঙ্গে তা মিলে যায়৷
আঁটসাঁট জিনস আর ‘ব্যস্ত যানচলাচল'
এএফডি সদস্যরা দৃশ্যত সিরিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রিত রাজধানীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার দৃশ্য দেখে বিস্মিত৷ ‘‘আমরা জার্মানিতে যুদ্ধের কঠিনতার অভিজ্ঞতা করেছি ও তার দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে অবহিত,'' ব্লেক্স রিপোর্টারদের বলেন বলে সিরিয়ার সরকারি মালিকানার ও সরকারপন্থি ‘টিশরিন' সংবাদ ওয়েবসাইটটি জানিয়েছে৷ ‘‘দামেস্কে মানুষজন কিভাবে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন তা দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি৷''
দামেস্কে পৌঁছানোর আগেই রোয়কেমান লেবাননের রাজধানী বৈরুতের রাস্তাঘাট ও বিমানবন্দর যে কতটা ‘‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন,'' সে বিষয়ে বারংবার মন্তব্য করেছিলেন৷ দৃশ্যত এএফডি বিধায়করা বৈরুত থেকেই সিরিয়া যাত্রা করেন৷
সিরিয়ার রাজধানীতে পৌঁছে ব্লেক্স আরো মুগ্ধ৷ ‘‘কালো হিজাবের পরিবর্তে ব্লু জিনস! মহিলারা বারে বসে – মক্কায় যা অকল্পনীয় কিন্তু দুঃখজনকভাবে বার্লিনের নয়ক্যোলন অঞ্চলে নয়,'' বলে ব্লেক্স টুইটারে মন্তব্য করেন ও যোগ করেন যে, জার্মান সরকার সেইসব ‘‘‘বিদ্রোহীদের' সাহায্য করছেন, যারা মহিলাদের বোরকা পরতে বাধ্য করতে চায়৷''
জার্মানিতে নিন্দা ও সমালোচনা
জার্মান সবুজ দলের একাধিক সাংসদ এএফডি বিধায়কদের সিরিয়া সফরে উষ্মা প্রকাশ করেছেন৷ এএফডি বিধায়করা ‘আসাদ ফ্যান ক্লাব'-এর সদস্যদের মতো ব্যবহার করেছেন বলে সবুজ সাংসদ কনস্টান্টিন ফন নটৎস টুইটারে মন্তব্য করেন৷ সবুজ সাংসদ ওমিদ নুরিপুর পূর্ব গুটায় সিরিয়া সরকারের সাম্প্রতিক অভিযানের কথা উল্লেখ করে টুইট করেন ও বলেন, ‘‘এএফডি রাজনীতিকরা যে দামেস্কের প্রাসাদে আপ্যায়িত হচ্ছেন, যখন তাদের ‘আমন্ত্রণকর্তারা' ১৫ কিলোমিটারের কম দূরত্বে শিশুদের উপর বোমা ফেলছে,'' এটা ন্যক্কারজনক৷
জাইফেনের বিবৃতি অনুযায়ী, এএফডি বিধায়কদল জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরকে তাদের সিরিয়া সফরের পরিকল্পনা সম্পর্কে পূর্বেই অবহিত করেছিলেন, যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন যে, তাদের কিছু জানানো হয়নি৷ সিরিয়া যাত্রা সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের একটি সতর্কতা নির্দেশও পূর্বাপর বহাল আছে৷
রেবেকা স্টাউডেনমায়ার/এসি