সিলেটে ট্রেন দুর্ঘটনায় শতাধিক হতাহত
২৪ জুন ২০১৯রবিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকায় ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে। ট্রেনটির ৬টি বগি ছিটকে নিচে পড়ে গিয়ে অনেকে হতাহত হন।
দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটির যাত্রী ছিলেন বেসরকারী টিভি চ্যানেল আরটিভির সাংবাদিক আশিকুল আলম বাসির। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি ৫ নম্বর বগিতে ছিলাম। আমার বগিটাও দুর্ঘটনায় পড়েছে। আমার বগিতেই এক নারী ও একজন পুরুষের লাশ আমি দেখেছি।
কুলাউড়া স্টেশন পার হওয়ার পর হঠাৎ চালক ট্রেনের গতি বাড়িয়ে দেন। এমনভাবে বাড়ানো হয় যেন মনে হচ্ছে ট্রেন লাইনে নেই। দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে ব্রিজ ভেঙে নিচে পড়ে যায় ট্রেন। আমি যে বগিতে ছিলাম সেটি নিচে পড়েনি, কিন্তু পাশেই পুরো উল্টে ভেঙে চুরে দুমরে মুচরে যায়। বিশ্বাস ছিল না, আমি বেঁচে যাব। আমার সঙ্গে স্ত্রী ও দুই সন্তানও ছিল। তারা সুস্থ্ আছে। হঠাৎ ছুটি পেয়ে পরিবার নিয়ে সিলেটে বেড়াতে গিয়েছিলাম। দুর্ঘটনার পর এ্যাম্বুলেন্সে করে আবার সিলেটে ফিরে এসেছি।''
রেলওয়ে পুলিশের কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মালেক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ট্রেনটির ছয়টি বগি দুর্ঘটনায় পড়েছে। বরমচাল বেইলি ব্রিজ ভেঙে একটি বগি সরাসরি খালে পড়ে। তবে খালে পানি কম থাকায় হতাহত কম হয়েছে। আমরা ৪টি লাশ উদ্ধার করেছি। আহত ৬৫ জনকে আমরা কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়েছিলাম। এর মধ্যে ১৮ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে আমরা নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারিনি। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে।''
রেলওয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘‘ভোরেই সাতটি সচল বগি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে দুর্ঘটনাকবলিত উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এছাড়া সেতু ভেঙে লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট কাজ করছে এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া উদ্ধার অভিযানে স্থানীয়রাও অংশ নিয়েছেন। ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, আগামী ১২ ঘন্টার মধ্যে রেলপথে যোগাযোগ স্বাভাবিক করা যাবে। সোমবার বিকেল ৫টার মধ্যে যোগাযোগ ঠিক করার জন্য কাজ করছেন কর্মকর্তারা।''
কুলাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি বলেন, ‘‘সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অধিকাংশ মানুষ ট্রেনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। একটি ব্রিজের নির্মান কাজের জন্য ঢাকা সিলেট সড়কটি বন্ধ রয়েছে। ফলে ধারণমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি সিলেট থেকে ছেড়ে আসে। ট্রেনটিতে ১৬ বা ১৭টি বগি ছিল। প্রতিটি বগিতেই বিপুল সংখ্যক মানুষ ছিলেন। স্ট্যান্ডিং যাত্রীও ছিলেন অনেক। এখন সিলেটের যোগাযোগ বন্ধ।''
গত ১৮ জুন থেকে শাহবাজপুরে তিতাস নদীর সেতুর স্প্যান ভেঙে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেট বিভাগসহ আশপাশের দুই কোটি মানুষ। বিশেষ করে বিদেশগামী যাত্রী, অসুস্থ যাত্রী, চাকরিজীবী ও পর্যটকেরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। সিলেট থেকে সারাদেশে বাস যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে বেশিরভাগ দূরপাল্লার বাস। বাস যোগাযোগ বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। এখন ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় পড়লো সিলেট। এখন বিমানপথই যাত্রীদের একমাত্র ভরসা।