‘সুন্দরবনের প্রতি সরকারের কোনো ভালোবাসা নেই’
১১ আগস্ট ২০১৭সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুন্দরবনের প্রতি সরকারের কোনো ভালোবাসা নেই৷ থাকলে, কোনোভাবেই কোনো দেশের গণতান্ত্রিক সরকার এই ধরনের একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটজ এভাবে ধ্বংস করে দিতে পারত না৷ ঐ এলাকায় আগে থেকেই ১৮০টি শিল্প কল-কারখানা ছিল৷ এখন নতুন করে আরো ৩২০টি শিল্প কারখানাকে অনুমোদন দেয়া হলো৷ আরো ১৫০ জনকে দেয়া হলো শিল্প প্লট৷ এছাড়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করার ব্যাপারে তো সরকার অটল রয়েছেই৷ এমনটা যদি হয় তারপরও কি সুন্দরবন বাঁচবে?’’
সর্বশেষ গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় পরিবেশ কমিটির চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ সেই সভাতেই সুন্দরবন ঘেঁষে ৩২০টি শিল্পকারখানাকে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ কমিটি৷ অথচ সম্প্রতি ইউনেস্কোও বলেছে, কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) ছাড়া এখানে ভারী শিল্প ও স্থাপনা করা যাবে না৷
জানা গেছে, আগে থেকেই ঐ এলাকায় ১৮৬টি শিল্প কল-কারখানা ছিল৷ পরিবেশ বিষয়ক দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি এ সব কারখানাকে বৈধ করে অনুমোদন দিতে বলেছে৷ পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) মৌজার সীমানা চিহ্নিত করে ২০১৫ সালে গেজেট প্রকাশের পর, পরিবেশ অধিদপ্তর সেখানে ১১৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক ছাড়পত্র দিয়েছিল৷ কমিটি সেগুলোও নবায়ন করে দিতে বলেছে৷
ঐ বৈঠকের পর পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘‘ইউনেস্কো যেহেতু রামপালের ব্যাপারে তাদের আপত্তি তুলে নিয়েছে, সেহেতু অন্যান্য শিল্পকারখানার ব্যাপারেও তাদের কোনো আপত্তি নেই বলে আমরা মনে করছি৷ এছাড়া যারা সুন্দরবনের পাশে শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছে, তারা পরিবেশ রক্ষায় যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে৷ সামনে যারা কারখানা করবে, তাদেরও পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য শর্ত দেবো৷ সুন্দরবনের ক্ষতি করে কিছু হবে না৷’’
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে চারটি সুপারিশ করা হয়েছিল৷ জাতীয় পরিবেশ কমিটি সব কটিই মেনে নিয়েছে৷ মংলাসহ ইসিএ এলাকায় সিমেন্ট, তামাক, তেল পরিশোধন, ইটভাটার মতো লাল শ্রেণিভুক্ত যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে৷ তবে এগুলোতে কঠোর দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা যেমন সার্বক্ষণিক বর্জ্য, পানি ও বাতাস পরিশোধনযন্ত্র (ইটিপি, ডাব্লিউডাব্লিউটিপি ও এটিপি) করতে বলা হয়েছে৷ ছাড়পত্র নবায়নের জন্য পরিবেশগত নানা সুরার শর্ত রাখা হয়েছে৷ এছাড়া কমলা ‘খ’ ও কমলা ‘ক’ শ্রেণির বিদ্যমান কারখানাগুলোর জন্যও একই ধরনের সুরা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে৷
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার যেটা করছে সেটা নিয়ে কী বলব? সরকার পরিবেশ ও সুন্দরবন রক্ষায় করা নিজের আইন নিজেরাই ভঙ্গ করছে৷ একই সঙ্গে তারা দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর কাছে সুন্দরবন রক্ষার যেসব অঙ্গীকার করেছে, তারও বরখেলাপ করছে৷ এ সব আইন ভাঙার অনুমোদন যেভাবে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দেওয়া হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যে এই সরকারের কাছে দেশের সুন্দরবন ও পরিবেশ নিরাপদ নয়৷ প্রথমত তারা ইউনেস্কোর রিপোর্ট ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে আর এখন সেসবের কিছুই মানছে না৷’’
জানা গেছে, নতুন করে আরও ১৬টি শিল্প কারখানাকে অনুমোদন দিতে বলেছে জাতীয় পরিবেশ কমিটি৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে আটটি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বোতলজাত করার কারখানা বা এলপিজি প্ল্যান্ট, যা মারাত্মক দূষণকারী বা লাল তালিকাভুক্ত হিসেবে বিবেচিত৷ বাকি আটটি শিল্প বড় ও মাঝারি আকৃতির৷ এদেরও পরিবেশ ছাড়পত্র দিতে বলেছে জাতীয় কমিটি৷ বলা হয়েছে, বিশ্ব ঐতিহ্য বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবনকে সংরক্ষণের জন্য কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই এলাকায় বৃহদাকার শিল্প প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা নির্মাণ না করার জন্য জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) থেকে সুপারিশ করা হয়েছে৷ অথচ এরপরও দেয়া হলো এ সমস্ত অনুমোদন৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...