দ্য বব্স-এর ‘সেরা ব্লগ’
৭ মে ২০১৩এ বছরের সূচনায় লি শুধু চীনেই নয়, বহির্বিশ্বের ব্লগোস্ফিয়ারেও হৈচৈ ফেলে দেন৷ লেখক হিসেবে ট্যুরে বেরিয়ে লি তাঁর প্রবন্ধ সংকলন ‘সারা বিশ্ব জানে' পরিবেশন করছিলেন৷ সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষ তাঁর মুখে লাগাম পরায়৷ এমনকি লি'কে তাঁর ফ্যানদের কাছ থেকে বিদায় নেবার বা দু'চারটা কথা বলারও সুযোগ দেওয়া হয়নি সে সময়৷ পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে চীনের মাইক্রোব্লগ ‘সিনা ওয়াইবো'-তে লি'র মন্তব্য: ‘‘ওরা সবাই পাগল৷''
একবার এক বই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে লি চেনপেং কালো মুখ-ঢাকা মুখোশ পরে আসেন৷ তাঁর গায়ে ছিল ‘আমি তোমাদের সবাইকে ভালোবাসি' লেখা একটি টি-শার্ট৷ গোটা সময়টি ধরে লি একটিও কথা বলেননি৷ তাঁর সমর্থকদের অনেকেও গ্যাস প্রতিরোধী মুখোশ পরে ছিল৷ তরুণ চীনারা যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়তে রাজি, সেটাই সেদিন প্রমাণ হয়৷ আজও ইউটিউবে দেখা যায় ভিডিওটি৷ আর সেটা দেখে ‘দ্য বব্স ২০১৩' সালের বিচারকমণ্ডলী মুগ্ধ৷ একটাও কথা না বলে প্রতিবাদের কি অভূতপূর্ব ভাষা! যাতে কোনো শব্দ নেই, আছে শক্তিশালী অচ্ছিদ্র নিরবতা৷
‘সিনা ওয়াইবো'-তে লি চেনপেং-এর সত্তর লাখ অনুসরণকারী৷ লি'র বক্তব্য, তাঁর কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা নেই৷ তিনি শুধু বলার ও লেখার স্বাধীনতা রক্ষা করতে চান৷ বলা বাহুল্য, লি চীনের নতুন প্রতিবাদ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক৷ যার সুর ধরে, চীনের ব্লগাররা আজ আর সাধারণভাবে সমালোচনা করে না৷ বরং তাঁরা কোনো বিশেষ কেলেঙ্কারির কথা জানলে, সেটা সোজাসুজি ফাঁস করতে তৎপর হয়৷
সিচুয়ান প্রদেশে ২০০৮ সালের ভূমিকম্প লি'কে বদলে দেয়৷ নয়ত তখনও পর্যন্ত তিনি একজন ‘‘দেশপ্রেমী'' ছিলেন, লি নিজেই কিন্তু একথা বলেছেন৷ ২০০৮ সাল থেকেই তাঁর সচেতনতার সূচনা, সূচনা সমাজ-সরকারকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে দেখার৷ এরপর বেশ তাড়াতাড়িই সমাজে বিভিন্ন অব্যবস্থার সমালোচনামূলক লেখা লিখে নাম করে ফেলেন তিনি৷ তার মধ্যে সরকারের জোর করে মানুষের বাড়িঘর অধিগ্রহণ কার এবং সেগুলি মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ছিল৷
তাঁর সৎসাহস ও কৌতূকবোধ দিয়ে ‘‘বিগ-আই-লি'' বব্স জুরিকে মোহিত করেন৷ আর এই সব মিলিয়েই নিজ ব্লগ http://blog.sina.com.cn/lichengpeng -এর জন্য ডয়চে ভেলের ‘বেস্ট অব অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড'-এর ‘সেরা ব্লগ' পুরস্কারে ভূষিত হন লি চেনপেং৷