২০১৩ সালের বব্স বিজয়ীরা
৭ মে ২০১৩সেরা ব্লগ
চীনা লেখক ও সাংবাদিক লি চেনপেং সেরা ব্লগ পুরস্কার জিতে নিলেন৷ চীনের সেন্সরশিপ-বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারিতে তাঁর অবস্থান৷ ‘গোটা বিশ্ব জানে' নামের বই লিখে কর্তৃপক্ষের রোষের মুখে পড়েছেন তিনি৷ বইয়ের প্রচারের সময় মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল তাঁকে৷ প্রতিবাদে তিনি নিজের লেখা থেকে অংশবিশেষ পাঠের সময়ে পরে নিলেন একটি অক্সিজেন মুখোশ৷ ‘নীরব পাঠ'-এর সেই অনুষ্ঠানে তাঁর পরনে ছিল একটি টি-শার্ট, যাতে লেখা ‘আমি তোমাদের সবাইকে ভালোবাসি'৷ চীনে সেই অক্সিজেন মুখোশ ও টি-শার্ট হয়ে উঠেছে প্রতিরোধের প্রতীক৷ হাজার হাজার মানুষ বেছে নিয়েছেন সেই পথ৷ পুরস্কারের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জুরিমণ্ডলীর সদস্য ও ব্লগার হু ইয়ং জানালেন, ‘‘লি চেনপেং তরুণ প্রজন্মের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছেন৷ সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি তাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছেন৷'' লি চেনপেং-এর ব্লগ লিংক: http://blog.sina.com.cn/lichengpeng৷
সেরা সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম অভিযান
মরক্কোর তরুণ প্রজন্মের এক উদ্যোগের নাম ‘৪৭৫' (লিংক: https://www.facebook.com/475LeFilm)৷ ধর্ষিতা নারীদের অধিকার আদায় করতে ফেসবুকের মাধ্যমে অভিনব এক ইন্টারনেট প্রচারাভিযান চালিয়ে একটি বব পুরস্কার জিতে নিয়েছেন এর উদ্যোক্তারা৷ মরক্কোর আইনের ৪৭৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো ধর্ষক ধর্ষিতাকে বিয়ে করলেই শাস্তি এড়াতে পারে৷ ২০১২ সালে ১৬ বছরের কিশোরী আমিনা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল৷ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে ‘৪৭৫' নামের একটি চলচ্চিত্র এবং ফেসবুক ও ফ্লিকার-এ সোশ্যাল মিডিয়া অভিযান৷ জুরিমণ্ডলীর সদস্যরা মনে করেন, বিশেষ করে ভারতে সম্প্রতি একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘৪৭৫' গোটা বিশ্বে সেই সব অ্যাকটিভিস্টদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সংকেত, যারা নারী অধিকারের সপক্ষে লড়াই করছে৷
সেরা উদ্ভাবন
‘ফ্রিওয়াইবো ডট কম' (লিংক: https://freeweibo.com) নামের মাইক্রোব্লগিং সাইট চীনের সরকারের সেন্সরশিপ প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটা ধারণা দিচ্ছে৷ এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীনের অন্যতম প্রধান সোশাল মিডিয়া সাইট ‘সিনাওইবো ডটকম'-এর সেন্সরমুক্ত সংস্করণে ঢুঁ মারা যায়৷ ফলে ব্যবহারকারীরা জানতে পারেন, কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিবেদন মুছে ফেলে৷ বব্স-এর জুরিমণ্ডলীর মতে, ‘‘চীনে সুপরিকল্পিত সেন্সরশিপ কাঠামো বর্তমানে একটা বড় সমস্যা৷ সেই সমস্যা তুলে ধরতে পারলে তবেই মানুষ তার প্রতিরোধ করতে পারবে৷''
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স
প্রতি বছরের মতো এবারও রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এমন এক প্রতিযোগীকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যিনি বা যাঁরা মত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন৷ এ বছর সেই পুরস্কার পাচ্ছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ টোগো-র মানবাধিকার কর্মী ফাবি কুয়াসি৷ দেশের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায় পুলিশ সাংবাদিকদের উপর যে নিপীড়ন চালাচ্ছে, ফাবি সেই সব ঘটনা তুলে ধরছেন তাঁর ওয়েবসাইটে৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স-এর প্রতিনিধি ক্রিস্টিয়ান মির মনে করেন, ‘‘ফাবি কুয়াসি তাঁর নিজের দেশে মত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন৷ এর মাধ্যমে তিনি টোগোর সাংবাদিকদের ভয়ংকর পরিস্থিতির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতে সহায়তা করছেন৷'' ফাবি কুয়াসির ব্লগ লিংক http://fabbikouassi.wordpress.co৷
গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম পুরস্কার
২০১৩ সালে ডয়চে ভেলে আয়োজিত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের বিষয় হলো ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ'৷ ১৭ থেকে ১৯শে জুন বন শহরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে৷ বব্স প্রতিযোগিতায়ও বিষয়টিকে আলাদা বিভাগের মর্যাদা দিচ্ছে৷ বাংলাদেশের ‘ইনফোলেডি' (লিংক: http://www.pallitathya.org.bd/infolady/) নামের এক সামাজিক প্রকল্প এবার এই বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে নিয়েছে৷ সাইকেলে চেপে কয়েকজন তরুণী বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিচ্ছেন৷ তাদের সম্বল ছোট আকারের নেটবুক ও মোবাইল ফোন৷ ফলে গ্রামবাসীরা স্বাস্থ্য, কৃষি বা উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিতে পারছেন এই পরিষেবার মাধ্যমে৷ জুরিমণ্ডলীর কাছে এটা এমন এক ‘‘বৈপ্লবিক প্রকল্প যার মাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাংলাদেশের অতি দরিদ্র মানুষের নাগালে চলে আসছে৷''
সবচেয়ে সৃজনশীল ও মৌলিক উদ্যোগ
ইন্টারনেটে আমাদের গতিবিধির চিহ্ন কতটা থেকে যায়? এই প্রশ্ন নিয়েই কাজ করছে ‘মি অ্যান্ড মাই শ্যাডো' বা ‘আমি ও আমার ছায়া' (লিংক: https://myshadow.org)৷ ইন্টারনেটে কীভাবে নিরাপদে বিচরণ করা যায় ও তা করতে কী কী জানতে হয়, খেলাচ্ছলে ব্রাউজারের সেটিং বদলানোর মতো সেই সব পথ বাতলে দিচ্ছে এই ওয়েবসাইট৷ এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছে ‘ট্যাকটিক্যাল টেকনোলজি কালেক্টিভ' নামের এক আন্তর্জাতিক সংগঠন৷ আধুনিক ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে গোটা বিশ্বে মানবাধিকার কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয় এই সংগঠন৷ বিশেষ করে যে সব দেশে প্রশাসনের নজরদারি ও সেন্সরশিপের বিপদ রয়েছে, সেখানে সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি৷ জুরিমণ্ডলীর সদস্য ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোর জর্জিয়া পপলওয়েল বলেন, ‘‘বেশ কিছু ক্ষেত্রে এটা জীবন-মরণের প্রশ্ন হয়ে ওঠে৷''
২০০৪ সাল থেকে ডয়চে ভেলে ‘দ্য বব্স – বেস্ট অব অনলাইন অ্যাক্টিভিজম' পুরস্কার দিয়ে আসছে৷ উদ্দেশ্য, ইন্টারনেটে মত প্রকাশের অধিকার করা এবং সেন্সরশিপ ছাড়াই খোলামেলা সংলাপে সহায়তা করা৷ ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক উটে শেফার মনে করেন, ‘‘বব্স এমন এক অভিনব মঞ্চ, যা দেখিয়ে দেয় যে গোটা বিশ্বের তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে একই প্রবণতা চালু আছে৷ কোনো সমাজকে প্রযুক্তির নাগাল থেকে দূরে রাখা বা তথ্যের উপর অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা সাময়িকভাবে সম্ভব হলেও চিরকাল তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না৷''
শুধু জুরিমণ্ডলী নয়, সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও বব্স ভোটিং-এ অংশ নিতে পারেন৷ দ্য বব্স-এর ওয়েবসাইটেই প্রকাশিত হয় ব্যবহারকারীদের নির্বাচিত বিজয়ীদের নাম৷