1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সৌদিতে নারী নির্যাতন অতিরঞ্জিত’

১৩ নভেম্বর ২০১৯

সৌদি আরবে নির্যাতিত বাংলাদেশি নারী সুমি আক্তার শুক্রবার বাংলাদেশে ফিরছেন৷ ফেসবুকে উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে আলোচনায় আসেন সুমি৷ তবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনে করেন বাস্তব পরিস্থিতি এতোটা খারাপ নয়৷

https://p.dw.com/p/3SwES
সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা এক বাংলাদেশি নারীছবি: bdnews24

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুমির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়৷ এরপর বাংলাদেশের সৌদি দূতবাস তাকে উদ্ধার করেছে৷ শুক্রবার সকালে তার ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ৷ তিনি জানান, ‘‘একই ফ্লাইটে আরো ১০০ নারী সৌদি আরব থেকে ফেরত আসছেন৷’’
সৌদি আদালতের আদেশে ফেরত আসার সুযোগ পেয়েছেন সুমি৷ কিন্তু ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করা ২২ হাজার সৌদি রিয়েল তিনি এখনই পাচ্ছেন না৷ এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত জানান, ‘‘এটা একটা অনগোয়িং প্রসেস৷ তাকে এখন দেশে পাঠানো হচ্ছে৷ পরে আইন কানুন দেখে এ ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেব৷’’

গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেয়া হতো: কোহিনূর

সুমির মতো আরো অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন৷ তাদেরই একজন কোহিনুর বেগম (ছদ্ম নাম)৷ সৌদি আরবের রিয়াদে এক বাড়িতে কাজে নিয়ে গেলও সাড়ে চার মাসের বেশি সেখানে টিকতে পারেননি৷ পরে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে ফেরেন৷ তিনিও কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি৷ কোহিনূরের ননদও সৌদি আরবে গিয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হন৷

কোহিনূর জানান, ‘‘ওই বাড়িতে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করা হতো৷ গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেয়া হতো৷ ওখানে অনেক বাংলাদেশি নারীই যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷’’

মঙ্গলবার বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সৌদি আরবে নারী শ্রমিকদের এই নির্যাতন বন্ধ করতে না পারলে সেখানে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের জানিয়েছেন৷ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘‘সৌদি আরবে কাজ করতে যাওয়া আমাদের নারীরা যৌন নির্যাতসহ নানা ধরণের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷ তারা হত্যারও শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷’’

তারা হত্যারও শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে: মুজিবুল হক চুন্নু

তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের সরকারকে দ্রুত সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছি আমরা৷ সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও উদ্যোগ নিতে হবে৷’’

তবে পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ বলে মানতে নারাজ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত৷ গোলাম মসিহ বলেন, ‘‘গত চার বছরে বাংলাদেশ থেকে তিন লাখ নারী শ্রমিক গেছেন সৌদি আরবে৷ তাদের মধ্যে ১৩ হাজার দেশে ফিরে গেছেন৷ ফিরে যাওয়া নারী শ্রমিকদের হার শতকরা হিসেবে অনেক কম৷ সবাই যে নির্যাতনের কারণে ফিরে গেছেন তাও নয়৷’’

 মসিহ বলেন, ‘‘এখানে নারীদের যতটা নির্যাতনের কথা বলা হয় বাস্তবে ততটা নয়৷ নারীরা দেশে ফিরে যাওয়ার একটি বড় কারণ তারা হোমসিক৷ তবে কিছু কিছু ঘটনা যে ঘটছে না তা নয়৷’’ অভিযোগ পেলে দূতাবাস সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয় বলেও জানান তিনি৷

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, ‘‘চলতি বছরের নয় মাসে সৌদি আরব থেকে ৪৮ নারীর মরদেহ বাংলাদেশে এসেছে৷ গত চার বছরে সৌদি থেকে ১৫২ নারীর মরদেহ দেশে ফিরেছে৷ তাদের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ৩১ নারী৷ বাকিদের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়৷’’ পরিস্থিতি বিবেচনায় গৃহশ্রমিক হিসেবে না পাঠিয়ে বরং নার্স, পোশাক শ্রমিক বা অন্যকোনো পেশায় নারীদের পাঠানোর পক্ষে তিনি৷

সৌদি আরবে নারী নির্যাতন

এদিকে সাধারণ নাগরিকদের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেয়া হয়৷ এতে সৌদি আরব থেকে যে নারীরা দেশে ফিরতে চান তাদের দ্রুত দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে৷ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত নতুন কোনো নারী শ্রমিক সৌদি আরব না পঠানোর দাবিও জানানো হয়েছে৷

মঙ্গলবার সংসদে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, ২০১৪ সালের জুন থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৭৪টি দেশে আট লাখ ৬৮ হাজার ৩৬৩ জন নারী কর্মী গেছেন৷ এরমধ্যে সৌদি আরবে তিন লাখ ৩০ হাজার ৫৯০ জন, জর্ডানে এক লাখ ৫৩ হাজার ২৯১, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক লাখ ২৬ হাজার ১৪৩, লেবাননে এক লাখ ছয় হাজার ৪৪৪, ওমানে ৮৫ হাজার ৯১৪ জন, কাতারে ৩২ হাজার ২৮০ এবং মরিশাসে গেছেন ১৮ হাজার ৩৩১ জন৷

২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...