সৌরশক্তির বিকাশ
৩ আগস্ট ২০১২গত কয়েক মাসে জার্মানির অনেক সৌরশক্তি কোম্পানিই দেউলিয়া হয়েছে: কিউ-সেল্স, সোভেল্লো, সোলোন৷ অথচ মাত্র কয়েক বছর আগেও এই কোম্পানিগুলি চুটিয়ে ব্যবসা করছিল৷ আজ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা৷ তার কারণ নাকি চীন থেকে আমদানি করা সস্তার মাল৷ ইউরোপীয় কমিশনের কাছে যে কোম্পানিগুলি অভিযোগ এনেছে, তারা নিজেদের নাম দিয়েছে ইইউ প্রো'সান৷ এদের মুখপাত্র হলেন সোলারওয়ার্ল্ড সৌরশক্তি কোম্পানির মিলান নিটশে৷ সোলারওয়ার্ল্ড কোম্পানিটির মুখ্য কার্যালয় আবার এই বন শহরে, ডয়চে ভেলের পাশের ময়দানটির অপর প্রান্তে৷ যাই হোক, নিটশে বলেছেন:
‘‘প্রতিযোগিতা সম্পূর্ণ বিকৃত৷ চীন থেকে বিপুল পরিমাণ ফোটোভোলটেইক সেল আসছে ডাম্পিং দরে, আর ইউরোপীয় সেল নির্মাতারা তাদের ন্যায্য দর নিয়ে মার খাচ্ছে৷''
জার্মানিতে এখন যে ফোটোভোলটেইক সেলগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, তাদের ৮০ শতাংশই নাকি আসছে চীন থেকে৷ অপরদিকে এখানকার সৌরশক্তি শিল্পকে যুঝতে হচ্ছে মাত্রাধিক উৎপাদন, পড়তি দাম এবং ভরতুকি হ্রাসের সঙ্গে৷ চীনের বিরুদ্ধে প্রো'সানের অভিযোগের মূল কারণ হল, চীনের সৌরশক্তি সংস্থাগুলি সরকারের কাছ থেকে কিছু বিশেষ সুবিধা পায়, যার ফলে তারা বাজারদরের চেয়ে কম দামে তাদের পণ্য বিক্রয় করতে পারে৷
অবশ্য সব বিশেষজ্ঞই যে প্রো'সানের অভিযোগ যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন, এমন নয়৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের সৌরশক্তি সংক্রান্ত প্রখ্যাত গবেষণা কেন্দ্রের আইকে ওয়েবার স্মরণ করিয়ে দেন যে, সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ৬০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরির মতো সেল উৎপাদন করা হয়, কিন্তু বিক্রি হয় শুধু ৩০ গিগাওয়াট পরিমাণ সেল:
‘‘সারা বিশ্বেই মাত্রাধিক উৎপাদন চলেছে৷ কাজেই কিছু কিছু সংস্থা নগদ টাকার প্রয়োজনে তাদের সেলগুলো বেচতে রাজি, তা বিশ্ব-বাজারদরে উৎপাদনের খরচ না পোষালেও৷''
মজার কথা, চীনে তৈরি ফোটোভোলটেইক সেলগুলির প্রায় ৬০ শতাংশ উপাদান আসে আবার জার্মানি থেকে, যেমন পলিসিলিকন, নানা ধরণের মেশিন এবং বিশেষ ধরণের কাচ, এ সবই চীন আমদানি করে জার্মানি থেকে৷ অপরদিকে খোলাবাজার এবং মুক্ত বাণিজ্য ছাড়া সৌরশক্তিকে সাধারণ মানুষদের পক্ষে সহজলভ্য করা, এক কথায়, ফোটোভোলটেইক সেল ইত্যাদির দাম কমানো সম্ভব নয়৷ চীনের সানটেক সংস্থার বিয়র্ন এমডে বলেন:
‘‘প্রো'সানের মামলার ফলে প্রযুক্তিতে জার্মানির নেতৃস্থানীয় অবস্থান তো আর বিপন্ন হচ্ছে না৷ বিপন্ন হচ্ছে ব্যাপক পরিমাণে সেল উৎপাদন৷ এক্ষেত্রে আমরা কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনের তুলনা আনতে পারি৷ এদের ক্ষেত্রেও এ সব পণ্যের উৎপাদন যে সব দেশে সস্তা, সেখানেই যেতে শুরু করে৷''
দু'মাস আগেই মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাময়িকভাবে চীন থেকে আসা ফোটোভোলটেইক সেলের উপর বাড়তি মাশুল বসায়৷ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী হেমন্তে৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের আইকে ওয়েবার এ ধরণের শাস্তিমূলক মাশুলের কার্যকরিতা সম্পর্কে সন্দিহান:
‘‘সংরক্ষণনীতি বিশ্বের বাজারের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক৷ ও ধরণের মাশুলের একটি ফল হবে, জার্মানিতে সৌরশক্তি আবার দুর্মূল্য হয়ে পড়বে৷''
ওয়েবার'এর মতে ইউরোপ নিজেই রপ্তানির উপর নির্ভর৷ কাজেই ইউরোপের নিজের স্বার্থেই মুক্ত বাণিজ্যের সপক্ষে এবং সংরক্ষণনীতিমূলক বাড়তি মাশুলের বিপক্ষে হওয়া উচিত৷ কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিগুলি স্বভাবতই খোলাবাজারের চেয়ে সংরক্ষণনীতিতেই নিরাপত্তা খোঁজে৷
প্রতিবেদন: রাইনা ব্রয়ার / এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ