1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্কুলে নিয়োগ অনিশ্চিত, ফের টেট ডিসেম্বরে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

স্কুলে নিয়োগের অপেক্ষায় লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী। এরই মধ্যে ফের পরীক্ষা নিতে চলেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। কিন্তু, নিয়োগ হবে কবে?

https://p.dw.com/p/4WJfF
নতুন করে টেট পরীক্ষার ঘোষণা
টেট আন্দোলনছবি: Subrata Goswami/DW

পশ্চিমবঙ্গে স্কুলের বিভিন্ন স্তরে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই সংক্রান্ত একগুচ্ছ মামলা আদালতে বিচারাধীন। এর ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। নিয়োগ আটকে থাকলেও পর্ষদ ফের পরীক্ষার ঘোষণা করেছে।

বুধবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল ঘোষণা করেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ সালের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষা বা টেট নেয়া হবে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হবে। বিএড প্রশিক্ষণ যাদের রয়েছে, তারা ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীরা তিন সপ্তাহ সময় পাবেন আবেদনের জন্য।

নিয়োগের জন্য অপেক্ষা

প্রাথমিক স্তরের জন্য ২০২২ সালে টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট বা টেট নেয়া হয়েছিল। ছয় লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী টেট দিয়েছিলেন। পরীক্ষায় পাশ করেছেন দেড় লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী। কিন্তু, তারা এখনো নিয়োগ পাননি। ফলে উত্তীর্ণ ও যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এতো পরীক্ষার্থী অপেক্ষায় থাকা সত্ত্বেও ফের কেন পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে?

পর্ষদ সভাপতি বলেন, "ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিই-র গাইডলাইন রয়েছে এ ব্যাপারে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টও নির্দেশ দিয়েছে। তাই প্রত্যেক বছর টেট নিতে হবে। পরীক্ষা নেয়া ও নিয়োগ সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।"

এই যুক্তি খারিজ করে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা বলেন, "এর আগে প্রতি বছর পরীক্ষা তো নেয়া হয়নি। ২০১৪ ও ২০১৭ সালে পরীক্ষা হয়েছে। তারপর ২০২১ সালে। এখন নিজেদের সুবিধা মতো যুক্তি সাজাতে চাইছে পর্ষদ। তা হলে আগে কেন নির্দেশ মানা হয়নি?

২০১৭ সালের পর গত বছর প্রথম পরীক্ষা নেয়া হয়। শুরু হয়ে গিয়েছিল ইন্টারভিউয়ের প্রক্রিয়াও। ১১ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের কথা ছিল। কিন্তু তাতে স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত। ২০২০-২২ সালে ডিএলএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাএই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ হওয়ার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন মামলাকারীরা।

কবে নিয়োগ স্কুলে?

স্কুলে নিয়োগের দাবিতে ইতিমধ্যেই মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থীরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করছেন। একটানা চলছে ধরনা অবস্থান। কখনো হচ্ছে মিছিল, বিক্ষোভ। কিন্তু নিয়োগের কাজ থমকে আছে।

গৌতম পাল বলেন, "রাজ্য সরকার দ্রুত নিয়োগ করতে চায়। কিন্তু, আইনি জটিলতার জন্য সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্টের সবুজ সঙ্কেত পেলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।"

আনন্দ হান্ডার পাল্টা বক্তব্য, "২০২১ ও ২০২২ সালের পরীক্ষা নিয়ে কোনো মামলা নেই। তা হলে এই তালিকা থেকে শিক্ষকদের নিয়োগ করা হচ্ছে না কেন? এক লক্ষ ৯০ হাজার শিক্ষকের পদ খালি। তাই নিয়োগ না করে শুধু পরীক্ষা নিলে সেটা প্রার্থীদের কাছে কাকস্য পরিবেদনা হয়ে উঠবে।"

শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, "সামনে বছর নির্বাচন। শুধু ভোটের রাজনীতির জন্য পরীক্ষা নিলে হবে না। নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে প্রতি বছর পাশ করা প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে।"

শিক্ষক বিনিময় পদ্ধতি

দীর্ঘদিন নিয়োগ না হওয়ায় স্কুলে বিভিন্ন স্তরে হাজার হাজার শিক্ষকের পদ খালি। এতে পঠনপাঠনের সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যার আশু সমাধানে সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির জন্য শিক্ষক বিনিময় পদ্ধতি চালু করতে চাইছে শিক্ষা দপ্তর।

এই পদ্ধতিতে কয়েকটি স্কুল নিয়ে একটি ক্লাসটার তৈরি করা হবে। এটাকে বলা হচ্ছে 'শিক্ষা হাব'। ১০টি স্কুলকে নিয়ে গঠিত হাব-এ একটি প্রধান স্কুল থাকবে, যেটির পরিকাঠামো সবচেয়ে উন্নত। বাকি নয়টি স্কুলের শিক্ষকের অভাব যথাসম্ভব পূরণ করবে ওই প্রধান স্কুল। একইভাবে বিষয় ভেদে এই দশটি স্কুলের মধ্যে শিক্ষকরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ক্লাস নেবেন।

একটি স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক অন্য স্কুলে গিয়ে জীবন বিজ্ঞান বা পদার্থ বিজ্ঞানের ক্লাস করাবেন। আবার যে স্কুলে ভূগোল বা ইংরেজির শিক্ষক নেই, সেখানে আসবেন অন্য স্কুলের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকরা। এতে পঠনপাঠনের চলতি সমস্যা দূর করার সঙ্গে সঙ্গে সময়মতো সিলেবাস শেষ করা যাবে বলে মনে করছে শিক্ষা দপ্তর।

সাময়িক সুরাহা?

তবে এই পদ্ধতিতে কোনো সমাধান হবে বলে মনে করছেন না শিক্ষকদের একাংশ। প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতির বক্তব্য, ‘‘এতে স্কুলগুলির সমস্যার সাময়িক সমাধান হতে পারে। কিন্তু যে সব স্কুলে শিক্ষকের অভাব, সেখানে সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান হবে নিয়োগের মাধ্যমে।"

কিংকর অধিকারীর বক্তব্য, "উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এটা হয়ে থাকে। কিন্তু স্কুল শিক্ষায় এই ব্যবস্থা কাম্য নয়। সরকারি স্কুলকে শিক্ষক শূন্য করে রাখার চেষ্টা চলছে। এতে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার উপর মানুষের বাকি আস্থাটুকুও চলে যাবে। শিক্ষার বেসরকারিকরণের আরো সুবিধা হবে।"