আফ্রিকায় স্পঞ্জ চাষ
১০ নভেম্বর ২০১৫আইডিয়াটা সুইজারল্যান্ডের ক্রিস্টিয়ান ফাটারলাউস-এর মাথায় এসেছিল৷ ২০০৩ সালে তিনি প্রথমবার জাম্বিয়ানি গিয়ে মোহামেদ ওকালার সঙ্গে আলাপ করেছিলেন৷ দু'জনে মিলে ‘মেরিনকালচার্স' নামের সংগঠন চালু করেন৷ তখনই তাঁরা বুঝেছিলেন যে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ বেশ বিপজ্জনক৷ সংগঠনের সহ প্রতিষ্ঠাতা মোহামেদ ওকালা বলেন, ‘‘চাকরি খোঁজার সময়ে মানুষ বোঝে, যে তারা সংগ্রাম চালাচ্ছে৷ কিছু মানুষ ঝোপঝাড়ে ঢুকে জঙ্গল কাটে, যেটা উচিত নয়৷ ফলে আরও বিপর্যয় আসছে৷ অর্থাৎ এখানকার মানুষের কোনো বিকল্প উপায়ে সমস্যা সমাধানের উপায় নেই৷''
সংগঠনের আর এক সহ প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টিয়ান ফাটারলাউস বলেন, ‘‘প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমি সেই সব নারীদের পর্যবেক্ষণ করেছিলাম, যারা সামুদ্রিক আগাছা সংগ্রহ করেন৷ আমার খুব ভালো লেগেছিল যে, তাঁরা শুধু শিকার ও সংগ্রহই করেন না, তাঁরা চাষের কাজও করেন৷ কিন্তু যখন দেখলাম তাঁরা কত আয় করছেন, তখন মনে হলো, এমন কোনো সামুদ্রিক পণ্য থাকা উচিত যা এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানে সাহায্য করবে, তাঁরা যথেষ্ট আয়ও করতে পারবেন৷''
এক মাসেই কাজিয়া ওমর আলি ও নাসিরি হাসান হাজি সামুদ্রিক আগাছা বিক্রি করে প্রায় ৩০ ডলার আয় করেছেন৷ আজকাল কখনো একটি স্পঞ্জ বিক্রি করেই এত টাকা হাতে আসে৷ তবে নতুন কাজের জন্য তাঁদের সাঁতার শিখতে হয়েছে৷ কারণ স্পঞ্জের ফার্ম সমুদ্রতট থেকে কয়েক'শ মিটার দূরে অবস্থিত৷ এক কিলো স্পঞ্জ দিনে এক টন পানি পাম্প ও ফিল্টার করে৷ স্পঞ্জ চাষি কাজিয়া ওমর আলি বলেন, ‘‘সামুদ্রিক ঘাসের চাষ খুবই কঠিন পরিশ্রমের কাজ৷ সব সময়ে ভিজে বস্তা বইতে হয়৷ স্পঞ্জ ফার্মে কখনো ভারি কাপড় পরা যায় না৷''
চাহিদা খুবই বেশি৷ স্পঞ্জ ফার্মগুলি বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়াতে পারে৷ কিন্তু ‘মেরিনকালচার্স' টেকসই পদ্ধতিতে কাজ করতে চায়৷ সব চারাই নিজেদের উৎপাদন থেকে আসে৷ স্পঞ্জ তোলার জন্য প্রস্তুত হতে প্রায় এক বছর সময় লাগে৷ মোহামেদ ওকালা বলেন, ‘‘কারণ সমুদ্র আসলে জমির মতো৷ ফলন তুলে সেই জায়গায় বীজ বপণ না করলে সেগুলি হারিয়ে যাবে৷ ফলনের পর বীজ বপণ করলে বার বার উৎপাদন হবে৷''
স্পঞ্জের এক সহজাত জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে৷ তাই অসুস্থ মানুষ ও অ্যালার্জির রোগীদের জন্য এটি খুব উপকারী৷ এমনকি স্পঞ্জ সিদ্ধও করা যায়৷ স্পঞ্জ চাষিরা দিনের ফলন বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেগুলি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করে তোলার কাজ করেন৷ স্পঞ্জ চাষি নাসিরি হাসান হাজি বলেন, ‘‘সমুদ্র থেকে স্পঞ্জ তোলার পর আমাদের সেগুলি প্রস্তুত করতে ও শুকাতে হয়৷ সেগুলি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বালু, ঝিনুক বা ছোট ছোট প্রাণী বেছে বার করে নিতে হয়৷ তারপর সেগুলি ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়৷''
একটি স্পঞ্জ যত্ন করে রাখলে প্রায় ২০ বছর তা ব্যবহার করা যায়৷ কাজিয়া ওমর আলি বলেন, ‘‘মানুষ যে স্পঞ্জ ব্যবহার করে স্নান করে, সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না৷ আমি নিজেও একটি ব্যবহার করতে শুরু করেছি৷''
‘মেরিনকালচার্স' সংগঠন এর মধ্যে নতুন একটি প্রকল্পও শুরু করেছে৷ প্রবাল দিয়ে অ্যাকোয়াফার্মিং-এর এক প্লান্টেশন গড়ে তুলছে এই সংগঠন৷ ক্রিস্টিয়ান ফাটারহাউস বলেন, ‘‘আনুমানিক ২০টি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী অ্যাকোয়েরিয়াম ব্যবসার জন্য উপযুক্ত বলে আমরা মনে করছি৷ প্রবালের মধ্যে চাষের পদ্ধতিও বেশ সহজ৷ প্রবালের একটি টুকরো কেটে নিয়ে সেটিকে একটি বিশেষ স্তরের উপর বসিয়ে দিতে হয়৷ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্পঞ্জ চাষের মিল রয়েছে৷''
উপহ্রদের মধ্যে এক সংরক্ষিত এলাকা গড়ে তোলা হবে আগামী পদক্ষেপ৷ তখন এই প্রবাল বনায়নের জন্যও ব্যবহার করা যাবে৷‘মেরিনকালচার্স' গ্রামের কিছু চাষিকে এই প্রকল্পে শামিল করতে পেরেছে৷ মুসা ইয়েচা ভুয়াই ‘ডেমা' নামের এক ঐতিহ্যবাহী মাছের ফাঁদ তৈরি করছেন৷ স্থানীয় জেলে মুসা ইয়েচা ভুয়াই বলেন, ‘‘প্রথমত, আমাদের এই হাল-ফ্যাশানের মাছ ধরার পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে৷ রাতে মাছ ধরা ও বিশাল জাল ব্যবহার করা আর চলবে না৷ কীভাবে ডেমা দিয়ে আবার পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ ধরা যায়, তা নিয়ে কথা বলতে হবে৷ নিজেদেরকেও কিছুটা বদলাতে হবে৷''
কারণ উপহ্রদটি রক্ষা করতে গেলে গ্রামের মানুষের সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে৷