1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বপ্নের বীজ বুনছে ‘সিল্ক রোড’

২১ মে ২০১৭

বাণিজ্যের প্রাচীন পথ সিল্ক রোডকে ফিরিয়ে আনতে চীন সরকার যে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে, সেটি দেশে দেশে একদিকে যেমন স্বপ্নের বীজ বুনছে, তেমনি সংঘাতেও উসকানি দিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/2dFjI
China Europa Ankunft Güterzug in Yiwu
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Bin

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক শীর্ষ সম্মলনে অংশ নিয়ে রাশিয়া, ব্রিটেন, তুরস্ক আর পাকিস্তানের মতো দেশগুলো চীনের এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন৷ এই উদ্যোগে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোও৷

উদ্যোগটির অংশ হিসাবে চীন-পাকিস্তান ইকোনোমিক করিডোর (সিপিইসি) নামে যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে, বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরের ভূমি ছূঁয়ে যাওয়ায় এর বিরোধিতা করছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ ভারত৷

বেলুচিস্তানসহ পাকিস্তানের ভেতরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও এর বিরোধিতা এসেছে৷ তবে পাকিস্তানের শাসকশ্রেণি এটা নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী হয়ে উঠছেন৷

পাকিস্তানে সিল্করোড নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় যে সমস্যা হচ্ছে, সেটা আরও অনেক অঞ্চলেই হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷

২০১৩ সালে চীন এই উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নামার পর এশিয়ার প্রভাবশালী শিল্পোন্নত দেশ জাপানকেও সক্রিয় হতে দেখা গেছে৷ ২০১৫ সালে দেশটি এশিয়াজুড়ে অবকাঠামো খাতে ১১০ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প হাতে নেয়৷

Infografik Chinas neue Seidenstraße Englisch

এই প্রকল্প নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত কোনো একক অবস্থান গ্রহণ করেনি৷ বরং প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রী ব্রিগিটে সিপ্রিস বেশ কিছু পূর্ব শর্ত দিয়েছেন৷ তিনি স্বচ্ছতা, টেন্ডারে সততা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক মান রক্ষার অঙ্গীকার চেয়েছেন৷

জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রী এমন উদ্যোগ নিয়ে এমন সব শর্ত দিয়েছেন, যে উদ্যোগ সম্পর্কে সাধারণ তথ্য জানাও বেশ কষ্টকর৷ অন্যদিকে এই প্রকল্পকে ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিতে না দেখে কেবল অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে দেখতে চীন আহ্বান জানালেও এটা নিয়ে সন্দেহ সংশয় রয়েছে দেশটির আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সব প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যেই৷

চীনের ‘নতুন সিল্ক রোড' –ধারণা ও বাস্তবতা

প্রাচীন সিল্ক রোড ফিরিয়ে আনতে চীনের প্রেসিডেন্টের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা দেখাতে এই সপ্তাহেই দেশটি একটি শীর্ষ সম্মেলন করে৷ এখানে ব্রিটেন রাশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্কের মতো দেশ চীনের এই স্বপ্নের প্রতি সমর্থন জানান৷

এই শীর্ষ সম্মেলনে চীন বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ১২৪ বিলিয়ন ডলার প্রদানের অঙ্গীকার করেন৷ চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও প্রায় ৯০০টি প্রকল্পে ৮৯০ বিলিয়ন ডলারের জোগান দেবে বলে বলা হয়৷

এই টাকায় দেশটি এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকাজুড়ে রেলপথ, নৌপথ ও সড়কপথ করতে চাইছে৷

২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘নতুন সিল্ক রোড' হিসাবে পরিচিত ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড (ওবিওআর)' নামের এই উদ্যোগ শুরু করেন৷

প্রাচীন সিল্করোড ধরে তিন মহাদেশের বিভিন্ন দেশে সড়কপথ, রেলপথ, সমুদ্রবন্দর, পাইপলাইনের মতো অবকাঠামো তৈরি করে যোগাযোগের নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায় দেশটি৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে অন্যদেশগুলোর বাণিজ্য বেড়ে যাবে৷

শীর্ষ সম্মেলনের আগেই দেশটি জানিয়েছিল, এরই মধ্যে ৬৫টি দেশ এই উদ্যোগে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছে৷ তারপরও প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তের অভাবে এর অগ্রগতি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু এখনো বলা যাচ্ছে না৷

যা জানা গেছে

এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে যেসব প্রকল্প করা হচ্ছে, তা থেকেই পুরো উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু কিছু জানা যাচ্ছে৷

চীনের নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই উদ্যোগকে নীতি-নির্ধারণী জায়গায় রাখা আছে, যার জন্য বিপুল অর্থের জোগান দেয়া হচ্ছে৷ এই উদ্যোগে এরই মধ্যে চীনের সরকারি তহবিল থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের জোগান দেয়া হয়েছে৷

২০১৩ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে চীনের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করা এশিয়ান ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকও (এআইআইবি) এখানে অর্থ জোগানের অন্যতম উৎস৷

ফ্রান্সভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক আইএফআরআই-র চীন বিষয়ক বিশ্লেষক অ্যালিস একম্যান বলেন, উদ্যোগটি খুবই ‘ফ্লেক্সিবল'৷ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রয়োজন ও ইচ্ছার ভিত্তিতে প্রকল্পে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হয়৷ নতুন করেও যে কেউ এতে অংশ নিতে পারবেন৷

যোগাযোগে চীনের দূরদর্শিতা

এই উদ্যোগে একটি  সার্বজনীন যোগাযোগ কৌশল নিয়েছে চীন৷ এটা এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে, যা থেকে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষ উপকৃত হতে পারে৷

এটাকে ভূ-কৌশলগত পরিকল্পনা হিসাবে না দেখে কেবল অর্থনৈতিক প্রকল্প হিসাবে দেখার আহ্বান জানিয়েছে চীন৷

আধুনিক সিল্করোড, প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতা

জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র তীব্রভাবে চীনের এই উদ্যোগে আপত্তি জানিয়েছে৷ বৃহৎ শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে কেবল এই দু'টি দেশই এআইআইবি-তে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে৷ জাপান ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিক শত্রুতা রয়েছে৷ পূর্ব চীন সাগরে সীমানা নিয়েও বিরোধও রয়েছে৷

চীনের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির কারণে টোকিও বেশ উদ্বেগে আছে৷ জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ওবিওআর শীর্ষ সম্মেলন অংশগ্রহণ প্রশ্নাতীতই ছিল৷ তিনি বরং কূটনীতির অন্য অংশে কাজ করছেন৷ ২০১৫ সালে জাপান এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অবকাঠামো প্রকল্পে ১১০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করেছে৷

চীনের এই উদ্যোগ কিভাবে আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে প্রভাব বিস্তার করবে তা দক্ষিণ এশিয়ার দিকে তাকালেই বোঝা যায়৷

চীন-পাকিস্তান ইকোনোমিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্পের অংশ হিসাবে চীন ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে৷ তা দিয়ে দেশটিতে রাস্তা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং গেভাডার শহরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন করা হবে৷

এই উদ্যোগ পাকিস্তানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ভারত সিপিইসি প্রকল্পের আংশিক বিরোধিতা করছে, কারণ, এই করিডোর বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরের উপর দিয়ে গেছে৷

ওবিওআর শীর্ষ সম্মলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ অংশ নিয়েছেন৷ তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অংশ নেননি৷ এই উদ্যোগেও ভারতের অংশগ্রহণ এখন অনিশ্চিত৷

মধ্য এশিয়া ও রাশিয়া

এই উদ্যোগের কেন্দ্রে রয়েছে মধ্য এশিয়া৷ বিপুল পরিমাণ তেল ও গ্যাসের মজুদ থাকায় এই এলাকা নিয়ে চীনেরও ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে৷ গত কয়েক বছরে এই অঞ্চলের সবক'টি দেশ সমানতালে চীনের ঋণ ও বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে আসছে৷

এই উন্নয়ন কাজে অঞ্চলজুড়ে প্রভাব কমার আশঙ্কায় কিছুটা উদ্বেগে রয়েছে রাশিয়া৷ এই কারণে রাশিয়াও ইউরেশিয়ান ইকোনোমিক ইউনিয়ন নামে একটি নিজস্ব উদ্যোগ নিয়েছে৷ তবে অর্থনৈতিক সামর্থের কারণেই মস্কো কার্যকরভাবে বেইজিংয়ের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছে না৷

তবে ইউক্রেন-দ্বন্দ্ব, পরবর্তী পশ্চিমাদের আরোপ করা অবরোধ, ভূ-রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্বার্থে দেশটি ক্রমে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়তে বাধ্য হচ্ছে৷

শীর্ষ সম্মেলনে পুটিন অংশগ্রহণ করছেন৷ এর আলাদা গুরুত্ব রয়েছে৷ রাশিয়া চায় চীন থেকে ওই রেলপথ যেন তাদের ভূমির উপর দিয়ে যায়৷

লক্ষ্য ইউরোপ

ইউরোপের এশিয়ার সাথে যোগাযোগ বিস্তৃত করার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে৷ এটা ইউরোপীয় অর্থনীতিকে উপকৃত করবে৷ বিশেষ করে, জার্মানির মতো রপ্তানিমুখী অর্থনীতিকে৷

২০১৬ সালের জুলাই মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ওবিওআরকে ইউরোপীয় উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে৷ এ উদ্দেশ্যে ‘ইইউ-চায়না কানেক্টিভিটি প্ল্যাটফর্ম' প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ চীনের এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে গ্রিসের পিরাওয়ি বন্দরের মতো ইউরোপে যে বিনিয়োগ এসেছে, সেটা এ পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিকভাবে হয়েছে৷

কিন্তু ওই প্রতিবদনে সকল ইইউ সদস্যকে একটি অভিন্ন অবস্থান নিতে আহ্বান জানানো হয়, যাতে চীন ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল' কৌশলে অসুবিধায় ফেলতে না পারে৷

রোডিয়ন এবেগহাউসেন/এসএন

প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য