মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিবারগুলোর কান্না শুনুন
৬ ডিসেম্বর ২০১৬আবার নিখোঁজ সংবাদ নিয়ে তোলপাড়৷ সবশেষ আলোচিত নিখোঁজ খবরটিতে উঠে এসেছে চার তরুণের কথা৷ গত বৃহস্পতিবার থেকে তারা নিখোঁজ৷ ঢাকার বনানী এলাকা থেকে একসঙ্গে নিখোঁজ৷ ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সি এই চার তরুণের মধ্যে দু'জন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, বাকি দু'জনের একজন বরিশাল বিএম কলেজ এবং অন্যজন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র৷ চার বন্ধু এক সঙ্গে নিখোঁজ৷ ফলে তারা জঙ্গিবাদের পথে চলে গেল কিনা এই প্রশ্নটি স্বাভাবিক কারণেই উঠেছে৷ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চারজন জঙ্গি হতেই ঘর ছেড়েছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ এই বক্তব্য আমাদের কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করেছে৷ যত কিছুই হোক, পুলিশ, ব়্যাবের যত সমালোচনাই হোক, এমন পরিস্থিতিতে তারাই তো ভরসা৷ আমরা তাই বনানীর চার তরুণ কোথায়, কী অবস্থায় আছেন, তা জানার অপেক্ষা শুরু করেছি৷
তবে এমন অপেক্ষার সময় সবসময় কিন্তু শেষ হয় না৷ অনেক নিখোঁজের বেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যত নির্লিপ্তই থাকে৷
তিন বছর আগে নিখোঁজ হওয়া ২০ জনের পরিবার রবিবার জড়ো হয়েছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবে৷ সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবারগুলো জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকে প্রতিটি পরিবারের একজন করে নিখোঁজ৷ তাঁদের আশঙ্কা, নিখোঁজ স্বজনদের হয়ত গুম করা হয়েছে৷ তাঁরা জানান, স্বজনদের ফিরে পেতে পুলিশ, র্যাব, ডিবি-র কার্যালয়ে ধরনা দিয়েছেন, মন্ত্রীর কাছে গিয়ে তদবির করেছেন, সভা-সমাবেশ করেছেন, কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি৷
এবার যে সংবাদ সম্মেলনটি করলেন তাতেও কি কোনো কাজ হবে?
সে আশার গুড়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বয়ং বালি ঢেলে দিয়েছেন৷ সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘‘গুম বলে কোনো শব্দ নেই৷ গুম বলে আমাদের কোনো কিছু জানা নেই৷ যারা গুম রয়েছেন বলে অভিযোগ হচ্ছে, তারা বিভিন্ন কারণে আত্মগোপনে রয়েছেন৷ আমরা অতীতে দেখছি তাদের অনেকেই ফিরে এসেছেন৷''
বলা বাহুল্য, সংবাদ সম্মেলনে পরিবারগুলো সব কথার সঙ্গে আরেকটি তথ্যও জানিয়েছে আর তা হলো, নিখোঁজ (তাদের ভাষায় ‘গুম') হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিএনপি বা ছাত্রদল করতেন৷ এ কারণেই কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্য?
আমরা জানি, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়া নিয়ে অনেক মাতামাতি হলেও পরে তাঁকে ভারতে পাওয়া গেছে৷ ভারতীয় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে৷ এখন তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন৷ এটাও জানি, একটি মানবাধিকার সংস্থা শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নিহত হয়েছে বলে যাদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেই তালিকার বেশ কয়েকজনকে বাংলাদেশেই দিব্যি জীবিত অবস্থায় পাওয়া গেছে৷ তাছাড়া হোলি আর্টিজান হামলার পর নিখোঁজ তরুণদের জঙ্গি হওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে৷
তাই বলে তিন বছর ধরে যে পরিবারগুলো স্বজনদের ফিরে পেতে প্রাণপাত করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্য? তিনি বললেই বাংলাদেশের সব অভিধান থেকে ‘গুম' শব্দটি মুছে যাবে? তিনি বললেই ধরে নিতে হবে, দেশে যত মানুষ নিখোঁজ হয় তাদের সবাই আত্মগোপনই করে?
এমন না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ২০টি পরিবারের অভিযোগকে আমলে নিলেই ভালো করতেন৷ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে অপরাজনীতির বাতাবরণে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখতে পারতেন৷ একটি রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে এমনটিই প্রত্যাশিত৷
বন্ধুরা, আশীষ চক্রবর্ত্তীর এই লেখাটি আপনার কেমন লাগলো? লিখুন নীচের ঘরে৷