স্মৃতিবিভ্রম কাটিয়ে তোলা যায়?
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬আমাদের স্মৃতিশক্তি না থাকলে কেমন হতো? আত্মজীবনিমূলক স্মৃতিকেই আমরা ‘মনে করা' বলি৷ সেখানে ঘটনাগুলি শুধু চিন্তা হিসেবে জমা থাকে না, তার সঙ্গে জড়িত আবেগও জুড়ে থাকে৷ এই প্রক্রিয়া সাধারণত ৩ বছর বয়স থেকে শুরু হয়৷ এবং সেটা সবসময় অন্যের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদানের সময় ঘটে৷ তখন নিজস্ব এক সত্তার সৃষ্টি হয়৷ আমরা তখন বুঝতে পারি, কোথা থেকে এসেছি, আমরা কে, অন্যদের থেকে আমরা কীভাবে বাকিদের থেকে আলাদা৷
জীবনের ইতিহাস হারিয়ে ফেললে সেই সত্তা সৃষ্টির পেছনের মুহূর্তগুলিও উধাও হয়ে যায়৷ এমনটা ঘটলে সবকিছু গোলমাল হয়ে যায়৷
সাবিনের বয়স তখন বিশের গোড়ায়৷ একদিন সকালে উঠে তিনি আর কিছুই মনে করতে পারলেন না৷ নিজের অতীতের ছবির দিকে তাকালেই আশা জাগে, হয়ত কিছু মনে পড়ে যাবে৷ তিনি বলেন, ‘‘শৈশব পুরোটা হারিয়ে ফেলেছি৷ এখন এ সব ছবি দেখলে কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে তার কিছু অর্থ বার করতে পারি, কিন্তু সক্রিয়ভাবে কিছুই মনে করতে পারি না৷''
সাবিনে কিন্তু অন্য অনেক কাজ করতে পারেন৷ সাইকেল চালানো, মনে মনে অঙ্ক কষা ইত্যাদি৷ জন্ম তারিখও মনে আছে৷ শুধু আত্মজীবনিমূলক স্মৃতি পুরোপুরি মুছে গেছে৷ সাবিনে বলেন, ‘‘একেবারে ফাঁকা৷ অনুভূতিও শূন্যতায় ভরা৷ অতএব কোনো আবেগই আসে না৷''
কী ঘটেছিল সাবিনের সঙ্গে? সত্যি কি তাঁর ছোটবেলার স্মৃতি মুছে দেওয়া হয়েছে? গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা অ্যামনেসিয়া বা স্মৃতিবিলোপের রহস্য ভেদ করে মানুষের স্মৃতির বিষয়টি ভালো করে বুঝতে চান৷
স্মিডার ক্লিনিকস এক আন্তর্জাতিক স্নায়ুবিজ্ঞান কেন্দ্র৷ এখানে অ্যামেনেসিয়ার স্নায়ুগত ও মানসিক প্রভাবের চিকিৎসা হয়৷ নিউরোলজিস্টরা অ্যামনেসিয়ার নিউরো-বায়োলজিকাল প্রক্রিয়ার দুর্বল অংশ খুঁজছেন৷ এমআরআই স্ক্যানারের মধ্যে সাবিনে-কে কিছু আবেগ-জাগানো ছবি দেখানো হচ্ছে৷ স্বাভাবিক মানুষ এমন ছবি দেখলে স্বাভাবিক আচরণ করে৷ কিন্তু সাবিনে-এর ক্ষেত্রে ভিন্ন ফলাফল দেখা গেল৷ মস্তিষ্কের যে অংশ আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে, সেটি অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে৷ প্রত্যেকটি ছবি চরম ভীতি জাগিয়ে তুলছে৷ অর্থাৎ তথ্য ঠিকমত প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে না৷ এর একটা কারণ শৈশবের কোনো ‘ট্রমা' বা চরম দুঃখজনক ঘটনা হতে পারে৷ নিউরোলজিস্ট প্রো. রজার স্মিট বলেন, ‘‘এমন অবরুদ্ধ স্মৃতি চিকিৎসার মাধ্যমে কীভাবে উদ্ধার করা যেতে পারে, সেটা গবেষণার বিষয়৷ একটি প্রক্রিয়ায় চরম দুঃখজনক ঘটনার স্মৃতি আবার জাগিয়ে তুলে বন্ধ দরজা খোলার চেষ্টা করা হয়৷ অন্য প্রক্রিয়ায় স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষকে নতুন করে তার জীবনের কাহিনি শেখানোর চেষ্টা হয়৷''
সাবিনে কয়েক বছর ধরে স্মৃতিভাণ্ডার ফিরে পাবার চেষ্টা করছেন৷ বার বার তিনি শৈশবের স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন৷ অভিজ্ঞতাগুলি চিরকালের জন্য হারিয়ে যায় নি বলে তাঁর আশা৷ কোথাও যেন তালাবন্ধ রয়েছে৷ মস্তিষ্ক যেন তার উপর লিখে রেখেছে, ‘সাবধান! খুললেই বিপদ'৷