1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ভাস্কর্যটি গ্রীক দেবী নয়, ন্যায়বিচারের প্রতীক’

৪ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের সামনে বসানো ভাস্কর্য আসলে কী? তা নিয়ে এক ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ ইসলামী দলগুলো এটা সরিয়ে নিতে আন্দোলন করছে৷

https://p.dw.com/p/2Ye6N
Bangladesch Protest gegen Justitia-Statue in Dhaka
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. Ramany

ভাস্কর্যটির স্থপতি শিল্পী মৃনাল হক ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটা আসলে কোন গ্রীক দেবী নয়, ন্যায় বিচারের প্রতীক৷ এটা উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিই ঠিক করে দিয়েছেন৷ তিনি শিল্পী বা কারিগর হিসেবে তৈরি করে দিয়েছেন মাত্র৷ গ্রীক দেবীরা কি শাড়ি পড়ে? তাদের মাথার চুল কি লম্বা থাকে? কোনটিই নয়৷ এটি একজন বাঙালি নারীর দৃশ্য৷''

মৃনাল বলেন, ‘‘ওই নারীর এক হাতে দাঁড়িপাল্লা, আরেক হাতে তলোয়ার এবং চোখ বাঁধা, যা ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ যারা এটাকে গ্রীক দেবী বলছেন তারা ঠিক বলছেন না৷ এটা রিয়েলস্টিক ফর্মে করা হয়েছে৷''

Mrinal.mp3 - MP3-Stereo

প্রসঙ্গত, মাস দু'য়েক আগে উচ্চ আদালতের সামনে এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়৷ এরপর থেকে বিভিন্ন ইসলামী দল এটা সরিয়ে নেয়ার জন্য আন্দোলন করছে৷ সর্বশেষ এই আন্দোলনে যোগ হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী ওলামা লীগ৷ শনিবার তারা প্রেসকাবের সামনে মানববন্ধন করে ঘোষণা দিয়েছেন আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ভাস্কর্যটি অপসারণ না করলে হাইকোর্ট ঘেরাও করবেন তারা৷ ধর্মভিত্তিক মুসলিম দলগুলোকে নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা৷

ওলামা লীগের অভিযোগ, হাইকোর্টের সামনে মূর্তিটি বসিয়েছেন প্রধান বিচারপতি৷ সংগঠনটির সভাপতি মুহাম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী বলেছেন, ‘‘মূর্তি যেই বসাক না কেন, এর দায়ভার পুরোটাই সরকারের ওপর বর্তায়৷ এটি অপসারণের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে৷ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই মূর্তি অপসারণ না করলে হাইকোর্ট ঘেরাও করা হবে৷'' অন্য বক্তারা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধেও সরাসরি বক্তব্য দিয়েছেন৷ অনেকে গ্রেফতারের কথাও বলেছেন৷

ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন শুরু করা হেফাজতে ইসলামের মুখপাত্র মাওলানা আহলুল্লাহিল ওয়াসেল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান৷ ইসলামে মূর্তির কোন স্থান নেই৷ উচ্চ আদালত হল আমাদের সবার শেষ আশ্রয়স্থল৷ সেখানে এই ধরনের মূর্তি কখনই ইসলাম প্রিয় মানুষ মেনে নিতে পারেন না৷ এটা অবিলম্বে সরিয়ে নেয়া না হলে আমরা ধাপে ধাপে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন শুরু করব৷''

তবে এই ধরনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন আরেক শিল্পী অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এই ধরনের দাবি কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না৷ এখন সরকারের উচিৎ এটার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা৷ তারা একটা কিছু আবদার করল আর আমরা সেটা মেনে নিয়ে ভাস্কর্য সরিয়ে ফেললাম সেটা ঠিক হবে না৷'' 

Owasal.mp3 - MP3-Stereo

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুসও মনে করেন, এই ধরনের কোন দাবির প্রতি কর্ণপাত করা ঠিক হবে না৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারী দলের একটি সহযোগী সংগঠন যে দাবি করেছে সেটা নিশ্চয় সরকারী দলের হবে না৷ কারণ আওয়ামী লীগকে আমরা অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবেই জানি৷ এখন আওয়ামী লীগেরই স্পষ্ট করা উচিৎ বিষয়টি কী? ওলামা লীগ যেটা বলল সেটা কি আওয়ামী লীগ ওউন করে, যদি না করে তাহলে ওলামা লীগকে সতর্ক করা উচিৎ এই ধরনের বক্তব্যের ব্যাপারে৷ কারণ হাজারো বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে আমাদের৷''

উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এই ভাষ্কর্য প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘এটা তো মূর্তি না, এটা তো ভাস্কর্য৷ এখানে দেখানো হয়েছে তিনটা জিনিস৷ একটা হলো দাঁড়িপাল্লা, ন্যায়বিচারের একটা সূচক৷ আর হাতে একটা তলোয়ার৷ দণ্ড বা শাস্তির সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তলোয়ার৷ তৃতীয়ত, চোখটা বাঁধা৷ অর্থাৎ একদম নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে হবে৷''

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য