হাইস্পিড ট্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি
২ আগস্ট ২০১৬দ্রুত গতির ট্রেনের পরীক্ষা চলছে৷ জার্মানির সিমেন্স কোম্পানি নতুন ইন্টার সিটি এক্সপ্রেসের ভেলারো মডেল কতটা শীত সহ্য করতে পারবে, তা জানতে তীব্র বাতাস ও তুষারঝড় সৃষ্টি করেছে৷ তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এমন চরম পরিস্থিতিতে যন্ত্রপাতি বরফে জমে গিয়ে বিকল হয়ে পড়তে পারে৷ শীতকালে তখন ট্রেন আচমকা থেমে যাবার আশঙ্কা রয়েছে৷
কিন্তু এমন অবস্থায়ও ক্লাচ বিনা সমস্যায় খোলা বা বন্ধ করা যাচ্ছে৷ বরফের মতো ঠান্ডা বাতাসের ধাক্কা সত্ত্বেও এই পারফরমেন্স সত্যি বিস্ময়কর৷ ট্রেনের ভেতরেও পরিমাপ চালানো হচ্ছে৷ বাইরে যখন মাইনাস ২০ ডিগ্রি শীত অথবা ৪৫ ডিগ্রি উত্তাপ সৃষ্টি হয়, তখন যাত্রীরা শীতে জমে গেলে বা গরমে ঘামলে চলবে না৷ ইনফ্রারেড ক্যামেরার মাধ্যমে তাপমাত্রার তারতম্য মাপা হচ্ছে৷
ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি গতিসম্পন্ন মডেল ভেলারো বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী ‘সিরিজ প্রোডাকশন ট্রেন'৷ তবে এমন দ্রুত গতি ট্রেনের মেটিরিয়ালের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে৷ তাই নিয়মিত পরীক্ষা জীবন-মরণের বিষয়৷
কোনো চালু ট্রেন যখন প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ হলে প্রবেশ করে, তখন পরীক্ষা ও মেরামতির সব ব্যবস্থা আগে থেকেই প্রস্তুত থাকে৷ মিস্ত্রিরা সম্ভাব্য সমস্যা ও ত্রুটি সম্পর্কে আগেই খবর পান৷ স্বয়ংক্রিয় এক ওয়্যারলেস সিস্টেম সেই খবর পাঠায়৷
একইসঙ্গে ১২টি ট্রেন পরীক্ষা করা সম্ভব৷ কোনো ত্রুটি ধরা না পড়লেও চার দিন পর পর প্রতিটি ট্রেন পরীক্ষা করা হয়৷ বসার আসন বা দরজায় ত্রুটি থাকলে দ্রুত মেরামতি করা হয়৷ আলট্রাসাউন্ড যন্ত্র নিয়ে প্রকৌশলীরা প্রত্যেকটি চাকা পরীক্ষা করেন৷ তার জন্য ভারি চাকাগুলি অনেক সময়ে তুলে ধরতে হয়৷ তাই চাকা খোলার প্রয়োজন হয় না৷ ফলে সময় বাঁচে৷ ১৫,০০০ ‘অপারেটিং আওয়ার' পরপর এই পরীক্ষা করা হয়৷ ছোটখাটো চিড় ধরেছে কিনা, তা পরীক্ষা করা হয়৷ কারণ সেগুলি বিপজ্জনক হয়ে পড়তে পারে৷
একেবারে নিখুঁত পরীক্ষার জন্য চাকা জলে ডোবানো হয়৷ মাত্র দুই মিনিটে পরীক্ষা করা যায়৷ অতি সামান্য বা ক্ষুদ্র পরিবর্তনও শনাক্ত ও নথিবদ্ধ করা হয়৷ লেজার গানের মতো দেখতে হলেও এটিও একটি আলট্রা সাউন্ড যন্ত্র৷
গোটা অ্যাক্সিস-এর মধ্যে সেন্সরগুলি বসানো হয়৷ সেগুলি সামান্যতম তারতম্যও টের পায়৷ এটা জানা জরুরি, কারণ একটি অ্যাক্সিস ভেঙে গেলেও ট্রেন লাইনচ্যুত হতে পারে৷ তবে সৌভাগ্যবশত মাত্র দুই শতাংশ অ্যাক্সিস-এর মধ্যে ত্রুটি ধরা পড়ে৷ সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি বদলে ফেলা হয়৷ ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস্টিয়ান বর্নশাইন বলেন, ‘‘আমাদের মেনটেনেন্স সিস্টেমের ভিত্তিই হলো অপারেশানাল সেফটি৷ অর্থাৎ,প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা তাদের দৈনিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জানতে পারেন, যে একমাত্র নিরাপদ ট্রেনগুলিই ছাড়পত্র পাবে৷ অর্থাৎ ১০০ শতাংশ নিরাপদ হলে তবেই কারখানা ছেড়ে বেরোতে পারবে৷ যাত্রীদের আরাম বা কার্যকারিতার মতো বিষয় সেখানে নগণ্য৷''
জার্মানির রেলপথে প্রায় ২৬০টি আইসিই ট্রেন চালু আছে৷ তাদের সংখ্যা বাড়ছে৷ সে কারণেই সেগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আরও জরুরি হয়ে পড়েছে৷