‘রেলওয়ে ধর্মঘট? জার্মানিতে? তা কি হয়?'
৬ নভেম্বর ২০১৪সারা বিশ্বের মানুষ জানেন, জার্মানি একটি সুসংগঠিত, শান্তিপ্রিয়, গণতান্ত্রিক দেশ৷ অনুরূপভাবে পরিচিত হলো ‘‘মেড ইন জার্মানি'' লেবেলটি, বিশেষ করে প্রযুক্তি সংক্রান্ত পণ্যের ক্ষেত্রে: জার্মানি'তে তৈরি মেশিনের কদর বোঝে সারা পৃথিবীর লোক৷ সেই জার্মানিতে ট্রেন কখনো লেট হতে পারে? রেল ধর্মঘট তো দূরের কথা৷
জার্মানি বিশ্বের সেরা রপ্তানিকারক দেশগুলির মধ্যে পড়ে৷ সমৃদ্ধ জীবনযাত্রা এবং সুষ্ঠু অবকাঠামো এসেছে সেই রপ্তানি-অর্জিত অর্থ থেকেই - কেননা জার্মানির প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে খুব বেশি নেই৷ পণ্যের বিক্রি - এবং রপ্তানি - বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষজনের বেতন ও পারিশ্রমিকও বেড়ে চলেছিল, কাজেই কারোর কোনো আপত্তি ঘটেনি৷ তবে সব কিছুর ভিত্তিতে ছিল শিল্প-বাণিজ্যে মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে আপোশমূলক বোঝাপড়া৷
কাজেই জার্মানিতে যখন রেলওয়ে'র মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে বিরোধ ঘটে, তখন সারা বিশ্বের মানুষ চমকিত হয়ে বলে: ‘এটা হচ্ছেটা কি? এ' তো ঠিক জার্মানি-সুলভ ব্যাপার-স্যাপার নয়৷' এ ধরনের শিল্প সংঘাত তো সাধারণত গ্রিস, ফ্রান্স বা স্পেনেই হয়ে থাকে - কিন্তু তা বলে খোদ জার্মানিতে? হ্যাঁ, জার্মানিতেই বটে, এবং শুধু ট্রেন ড্রাইভাররাই নন, রেলপথের মতো আকাশপথেও যাতায়াত সমস্যাকর করে তুলেছেন লুফৎহানসা'র বিমানচালকরা৷
ট্রেনচালকদের ছোট্ট শ্রমিক সংগঠনটির নাম জিডিএল, অর্থাৎ জার্মান ট্রেনচালকদের শ্রমিক সংগঠন৷ শুধু পাঁচ শতাংশ বেতনবৃদ্ধি, সাপ্তাহিক কাজের সময় কমানো ইত্যাদি দাবিতেই নয়, জিডিএল তাদের ধর্মঘট অভিযান চালাচ্ছে সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর আশায়: জিডিএল চায়, ট্রেনের গার্ড-কন্ডাক্টর- ক্যান্টিন কার'এর কর্মী, এরা সবাই জিডিএল'এর সদস্য হবে এবং জিডিএল তাদের বেতন ও কাজের শর্তাবলী নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার - এবং প্রয়োজনে ধর্মঘট করার অধিকার রাখবে৷
অপরদিকে লুফৎহানসা'র পাইলটরা মাত্র ৫৫ বছর বয়সে অবসর নিতে পারেন, অবসরভাতার বিশেষ কিছু না খুইয়ে৷ লুফৎহানসা চাইছে যে, এখন থেকে নতুন যে সব পাইলট লুফৎহানসা'য় যোগদান করবেন, তারা ৬০ বছর বয়সে অবসর নেবেন৷ বৈমানিকরা কোম্পানির এই দাবি মেনে নিতে রাজি নন৷ কাজেই তারা ধর্মঘটের পর ধর্মঘট করছেন৷ ট্রেনচালক আর বিমানচালকরা অন্তত এ'টুকু রেয়াত করেছেন যে, তারা একত্রে ধর্মঘট করছেন না৷ একদল থামলে অন্য দল শুরু করেন৷ তবে কোনোদলই আপোশের দিকে যাবার লক্ষণ দেখাচ্ছেন না৷
দেখেশুনে মনে হতে পারে: এই সব উচ্চ প্রশিক্ষণ - এবং বেতন প্রাপ্ত দক্ষ কর্মীরা কি হঠাৎ তাদের অনুপাত বোধ হারিয়ে ফেলেছেন? উভয় পেশাই দায়িত্বপূর্ণ এবং কঠিন - কিন্তু তা সত্ত্বেও: এর ফলে যে ‘‘মেড ইন জার্মানি''-র অমোঘ সত্যতা বিপন্ন হতে পারে, যে সত্যের উপর জার্মানির সব দল ও গোষ্ঠীর সাচ্ছ্বল্য তথা সমৃদ্ধি নির্ভরশীল, সে মহাসত্যটি কি সকলে ভুলে গেছেন?