যাজকদের হাতে হাজারো শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮জার্মান বিশপস কনফারেন্সের সহযোগিতায় এই গবেষণা করা হয়েছে৷ ৩ হাজার ৬৭৭টি ঘটনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তৈরি করা হয়েছে প্রতিবেদনটি৷ বুধবার জার্মান পত্রিকা ‘ডেয়ার স্পিগেল’-এ প্রতিবেদনটি ছাপা হয়৷ গিসেন, হাইডেলবার্গ এবং মানহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ ১৯৪৬ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ১ হাজার ৬৭০ জন যাজককে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা, যাদের দ্বারা শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল৷ যৌন হয়রানির শিকার শিশুদের বয়স ১৩ বছরের কম এবং তাদের বেশিরভাগই ছেলে৷
বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চগুলোতে যৌন নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে যখন নিন্দার ঝড় উঠেছে, ঠিক সে সময়ই প্রকাশতি হলো প্রতিবেদনটি৷ পোপ ফ্রান্সিস এ নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং নিপীড়িতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷ কিন্তু নিপীড়কদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় সমালোচনাও হয়েছে তাঁর৷
জার্মানিতে নিপীড়নের শিকার শিশুদের প্রতি ৬ জনের মধ্যে একজন ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ এক তৃতীয়াংশ ঘটনায় চার্চের মাধ্যমে নিপীড়কের সঙ্গে শিশুটির যোগাযোগ হয়েছে৷
বিশপ'স কনফারেন্সের পক্ষ থেকে বিশপ স্টেফান আকেরমান এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে লজ্জাজনক উল্লেখ করে বলেছেন, এই ঘটনাগুলো তাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল চার্চের অন্ধকার দিকটা তুলে ধরা এবং নিজেদের মধ্যে যে দোষগুলো রয়েছে, সেদিকে আলোকপাত করা, যাতে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়৷’’
জার্মান পত্রিকা ‘ডি সাইট’ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তথ্য সংগ্রহের সময় গবেষকদের চার্চের নথিপত্র দেখার অনুমতি দেয়া হয়নি৷ তাঁরা বিভিন্ন চার্চের বিশপদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন৷
নির্যাতিতদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে এমন একটি গ্রুপ ‘একিগের টিশ’-এর প্রধান মাটিয়াস কাটশ জানালেন, ‘‘এই গবেষণাটি বাস্তবতার ক্ষুদ্র একটি অংশ, কেননা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্যাতিতরা কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি৷ ঘটনার নথিপত্র নষ্ট করে ফেলা হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘটনা নথিবদ্ধ করা হয়নি৷’’ তাই রাজনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজের প্রতি স্বতন্ত্র তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি৷
জার্মান রাজনীতিবিদরা এরইমধ্যে এসব ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করে বলেছেন, জার্মান বিচারব্যবস্থার উপর এর তদন্তভার দেয়া উচিত, কেননা, বেশিরভাগ চার্চ অভ্যন্তরীণভাবে এসব ঘটনার মীমাংসা করে৷ এক্ষেত্রে নির্যাতিতরা ঘটনার কথা জানালেও নিপীড়ককে খুব সামান্য শাস্তি দেয়া হয়৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে সতর্ক করে দেয়া ছাড়া আর কিছুই করা হয় না৷
জার্মানির শহর ফুলদায় আগামী ২৫ শে সেপ্টেম্বর এই গবেষণার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে৷
এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)