হারের পর দলের নেতাদের প্রশ্নে জেরবার বিজেপি, বাম
৭ মে ২০২১পাঁচ বছর আগের তুলনায় বিজেপি এবার অনেক ভালো ফল করেছে। তিন থেকে তাদের আসনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৭। তা সত্ত্বেও দলে প্রশ্ন ওঠার বিরাম নেই। প্রবীণ তথাগত রায় থেকে নবীন নেতা সৌরভ সিকদার প্রশ্ন তুলেছেন দলের প্রার্থী নিয়ে।
তথাগত তো টুইট করে বলেছিলেন, 'পায়েল শ্রাবন্তী পার্নো ইত্যাদি ‘নগরীর নটীরা' নির্বাচনের টাকা নিয়ে কেলি করে বেড়িয়েছেন আর মদন মিত্রের সঙ্গে নৌকাবিলাসে গিয়ে সেলফি তুলেছেন (এবং হেরে ভূত হয়েছেন), তাদেরকে কে টিকিট দিয়েছিল? কেনই বা দিয়েছিল? দিলীপ- কৈলাস-অরবিন্দ-শিবপ্রকাশ প্রভুরা কি আলোকপাত করবেন?''
বিজেপি-র মতো দলে সচরাচর কোনো নেতা এরকমভাবে প্রশ্ন তোলেন না। দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এরকম ব্যাঙ্গাত্মক প্রশ্নবান প্রকাশ্যে ছোড়েন না। কিন্তু তথাগত সেটাই করেছেন। তারপর তিনি টুইট করে বলেছেন, তাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছেন। তবে এরপরেও অদম্য তথাগত আজ তক বাংলা-কে বলেছেন, ''চার পালের গোদা রাজ্যে দলটা চালাচ্ছেন। তারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে যা বলেন, সেটাই তারা শোনে।''
বিজেপি-র যুব নেতা সৌরভ সিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''প্রার্থী বাছাই নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।''
কেন এই ডামাডোল বিজেপি-তে? প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''এই ফলাফলের জন্য বিজেপি তৈরি ছিল না। হিন্দু ভোটের একটা অংশ তারা পেয়েছে। তারা অনেকটা এগিয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা লোকসভায় পাওয়া ভোট ধরে রাখতে পারেনি। হারের একটা ধাক্কা আছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, এত নেতাকে তৃণমূল থেকে এনে প্রার্থী করা কি ঠিক হয়েছে?''
তবে এই প্রশ্ন যারা তুলছেন, তারা কি গুরুত্ব না পেয়ে তুলছেন? তাদের কথার কতটা গুরুত্ব আছে? প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তের মতে, ''বিজেপি-ও তো একটা নীতি ও আদর্শ নিয়ে চলা পার্টি। সেটাকে আমরা সমর্থন করতে পারি, নাও পারি। সেখানে যারা প্রশ্ন তুলছেন, হতে পারে তারা গুরুত্ব না পেয়ে তুলছেন। কিন্তু যে প্রশ্নগুলি তারা তুলছেন, সেটা ঠিক। তারা তো আদর্শহীনতা, নীতিহীনতার কথাই তুলছেন।''
এবার বাম ও কংগ্রেস একটা আসনও পায়নি। গত ৭০ বছরে এরকম অবস্থা এই দুই দলের কখনো হয়নি। ফলাফল বেরনোর পর প্রবীণ বাম নেতারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। পরপর তিনজন প্রবীণ নেতা দলের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন। প্রথম প্রশ্ন তোলেন সাবেক বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য। একটি টিভি চ্যানেলে তিনি বলেন, ‘দলের এই ব্যর্থতার দায় নেতৃত্বের। লোকসভায় শূন্য হয়ে যাওয়ার পরেও সেই দায় কেউ নেননি। বিধানসভায় হারের পরেও কেউ দায় নেবেন না।'' তিনি বলেন, ''শুধু স্ট্যালিন কপচালে হবে না। এটা স্ট্যালিনের যুগ নয়।'' আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে জোট নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।
এরপর সাবেক মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ''মানুষ ধরে নিয়েছিল তৃণমূল ধর্মীয় ফ্যাসিবাদীদের আটকাতে পারবে। আমরা ভুল করেছি। এর তথ্যনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করতে হবে।'' শিলিগুড়ির সাবেক বিধায়ক ও সাবেক মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এরপর বলেছেন, তাদের জাত-কুল সবই গিয়েছে। তার বক্তব্য, ''কেউ বলছেন সিদ্দিকির সঙ্গে জোট করায় হিন্দু ভোট সরেছে। সেটা শিলিগুড়িতে হতে পারে। কিন্তু চোপড়াতে সংখ্যালঘু ভোটও আমরা পাইনি। তৃণমূল পেয়েছে।''
বামেদের নিয়ে বই লিখেছেন দীপ্তেন্দ্র। তার মতে, ''সিপিএমের সমস্যা হলো, তারা আর মানুষের পাল্স বুঝতে পারছে না। যখন আইএসএফের সঙ্গে জোট করল, তখন লক্ষ্য ছিল, মুসলিম ভোট তৃণমূলের কাছ থেকে ভাঙিয়ে আনা। সেটা করতে পারলে ভবিষ্যতে তারা প্রধান বিরোধী দল হবে এটা ছিল তাদের অঙ্ক। এই অঙ্ক পুরোপুরি ভুল হয়েছে।'' দীপ্তেন্দ্র মনে করেন, এখন আর বাম ও কংগ্রেসের কোনো প্রাসঙ্গিকতা থাকল না।
আশিস গুপ্তও মনে করেন, ''মানুষ কী ভাবছে তা বাম নেতারা বুঝতে পারে না। তারা নীতিহীন জোট করে। ফলে এই সব প্রশ্ন উঠবেই। দ্রুত ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার লালসা তাদের ডোবালো।''
কংগ্রেসেও একইরকমভাবে প্রশ্ন উঠছে। সাবেক বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান যেমন মনে করেন, অনেক আগে থেকে মুর্শিদাবাদ, মালদহে নতুন নেতাদের তুলে আনা দরকার ছিল। বারবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বলেও লাভ হয়নি।
কংগ্রেসে তো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একদিকে যায়, রাজ্য নেতৃত্ব অন্যদিকে। তার ফলে স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা কংগ্রেস-মুক্ত হয়ে গেল। এই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কংগ্রেসের পক্ষে খুবই কঠিন বলে বিশেষজ্ঞদের মত।