হৃদযন্ত্রে গোলযোগ
২৮ জানুয়ারি ২০১৩ফ্রাইবুর্গ ইউনিভার্সিটি হার্ট সেন্টারের প্রধান চিকিত্সক আনেটে গাইবেল মনে করেন, হার্ট অ্যাটাককে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুধু পুরুষের সমস্যা বলে মনে করা হয়, কিন্তু মেয়েরাও দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গের অচল হওয়া থেকে উদ্ধার পান না৷
হার্ট চলার জন্য প্রয়োজন হয় অক্সিজেন ও পুষ্টি৷ এই অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহের জন্য রয়েছে হার্টের নিজস্ব রক্তনালি৷ বিশেষ করে তিনটি রক্তনালি তাদের শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ করে থাকে হার্টের মাংসপেশিতে৷
রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেলে
তিনটি রক্তনালির যে কোনো একটি বন্ধ হয়ে গেলে হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ এটা হতে পারে রক্তনালিতে চর্বি জমে সরু হয়ে গেলে৷ রক্ত চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে হৃদপিণ্ডের পেশির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়৷ এই অবস্থাকে হার্ট অ্যাটাক বলা হয় ৷
আট ঘণ্টার মধ্যে যদি রক্তনালি খুলে দেওয়া যায়, তাহলে হার্টের মাংসপেশিকে রক্ষা করা সম্ভব৷ সাধারণত কয়েকটি কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে৷ যেমন, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে বা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ও ধূমপান করলে, ঘুমের সমস্যা, দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ বাড়লে, হঠাৎ উত্তেজনা দেখা দিলে, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ ও ডায়বেটিস থাকলে, শরীরে যে কোনো ধরনের সংক্রমণ থাকলে এবং নিকট আত্মীয়স্বজনের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক ঘটে থাকলে৷
হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত চিকিত্সা করা প্রয়োজন৷ নারী বা পুরুষ যেই হোক না কেন৷ পুরুষদের বেলায় রোগটি তাড়াতাড়ি ধরা যায়৷ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে হার্ট ক্যাথেটার দিয়ে চিকিত্সা করতে হয়৷ ছোট্ট একটি বেলুন দিয়ে হার্টের অসুস্থ নালিটিকে প্রসারিত করে একটি ছোট ধাতুর নল বসিয়ে দেয়া হয়৷ যাতে হার্টের নালি প্রশস্ত হয়ে রক্ত চলাচল করতে পারে৷
নারী ও পুরুষের অনুভূতি বিভিন্ন রকমের
হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা দেখা দিলে নারী ও পুরুষ তা একেক রকমভাবে অনুভব করে ও ব্যাখ্যা দেয়৷ পুরুষরা বলে ‘‘সারা জীবনে তারা এই রকম যন্ত্রণা অনুভব করেনি৷ মেয়েরা বলে, ব্যথাটা হয়েছিল তবে তেমন ভয়ংকর কিছু নয়৷''
মেয়েরা যে সব লক্ষণের কথা বলে থাকেন, তাকে অনেক সময় অন্যান্য রোগের লক্ষণ বলে মনে করা হয়৷ বমি বমি ভাব, পিঠব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গের কথা জানান তারা৷ এসব উপসর্গের নানা ধরনের ব্যাখ্যাও খোঁজা হয়৷ যেমন মেরুদণ্ডের সমস্যা, গ্যাসট্রিক বা পেটের গন্ডগোলের কথা মনে করেন মেয়েরা৷
ডাক্তার আসতে আসতে অনেকটা সময় চলে যায়৷ তাদের সমস্যাগুলি ঠিকমতো তুলে ধরতে পারে না মেয়েরা৷ চিকিত্সকদেরও সঠিক রোগটি শনাক্ত করতে অসুবিধা হয়৷ মেয়েরা কদাচিৎ মনে করে যে তাদের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, ক্যানসারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন না তারা, কিন্তুহার্ট অ্যাটাক তো পুরুষের রোগ৷ তাই ডাক্তারের কাছেও যেতে তারা দেরি করে৷
বেশি বয়সেই সমস্যাটা দেখা দিতে পারে
সাধারণত পড়ন্ত বয়সেই নারীদের হৃদরোগের ঝুঁকিটা বাড়ে৷ রজবন্ধ হওয়া পর্যন্ত মেয়েরা হরমোন দ্বারা সুরক্ষিত থাকে৷ ডা. গাইবেল জানান, ‘‘ফ্যাটমেটালিজম-এর ওপর বিশেষ প্রভাব রয়েছে হরমোনের৷ রক্তনালির প্রসারে সাহায্য করে হরমোন৷ রজবন্ধের পর ইস্ট্রোজেন হরমোন তৈরি হয় না৷ ঝুঁকি বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের৷''
মেয়েদের গড় আয়ু পুরুষদের চেয়ে বেশি, তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েরা বার্ধক্যে একাকী হয়ে পড়েন৷ কঠিন কোনো রোগের লক্ষণ দেখা দিলেও ডাক্তার ডাকার জন্য তাগিদ দেওয়ার মতো কেউ থাকে না৷ সঠিক সময়ে চিকিত্সা পেলে মেয়েদের হার্ট অ্যাটাককে কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পেত৷
তবে পুরুষ ও নারী উভয়েরই এই রোগটিকে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে মিল রয়েছে৷ অতিরিক্ত কোলেস্টরেল রক্তনালিতে জমা হয়ে তা সংকীর্ণ করে তুলতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে৷ খেলাধুলা, মানসিক চাপ কমানো, সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, উচ্চরক্তচাপ ও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ইত্যাদি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস করে৷ একটা সমীক্ষা এ ক্ষেত্রে কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছে৷ আর তা হলো, এক ধরনের চকলেট হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে পারে৷