হাসিনার প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের সায়
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘পরিস্থিতির ভয়াবহতা' অনুভব করার আহ্বান জানান৷
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেন রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কিছু দিনের মধ্যে পৌঁছে যায় সাত লাখে৷ আর আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা৷
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাদ্য সরবরাহ করে বাংলাদেশ পরিস্থিতি দারুণভাবে সামাল দিলেও তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরাতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে সাফল্য আসেনি একেবারেই৷ এরইমধ্যে কক্সবাজারে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ অনেক বাংলাদেশিই মনে করছেন, রোহিঙ্গাদের আর কখনই মিয়ানমারে ফেরানো সম্বব হবে না৷
শেখ হাসিনার চার প্রস্তাব
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারটি প্রস্তাব নিম্নরূপ:
১) মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের কার্যকর প্রত্যাবাসনে উদ্যোগ নিয়ে সংকট নিরসনে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে৷
২) মিয়ানমারকে বৈষম্যমূলক আইনের বিলোপ ঘটাতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন অঞ্চল সরেজমিনে পরিদর্শনের অনুমতি দিতে হবে৷
৩) রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক বেসামরিক পরিদর্শক মোতায়েন করতে হবে৷
৪) রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ দূর করা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য অপরাধের সুষ্ঠু বিচার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করতে হবে৷
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঘটনার গুরুত্ব বোঝার আহ্বান জানাবো৷ ক্যাম্প ছাড়িয়ে এ সংকট বাইরেও বিস্তৃত হচ্ছে৷ আমাদের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এটা একটা আঞ্চলিক হুমকিতে পরিণত হয়েছে৷''
একমত রোহিঙ্গারাও
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাস করা রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্টরা এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ জার্মানিতে বসবাসরত নেই সান লুইন মনে করেন, শেখ হাসিনার প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মনের কথারই প্রতিফলন ঘটেছে৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বিচার, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং পূর্ণ নাগরিকত্ব সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন৷ শেখ হাসিনা এর সবকটিই তার প্রস্তাবে অন্তর্ভূক্ত করেছেন৷''
তবে, ২০১৭ সালের আগস্টে সবশেষ সংকট শুরুর পর থেকে শেখ হাসিনা এ নিয়ে তৃতীয়বার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রস্তাব দিলেন, এটিও মনে করিয়ে দেন নেই সান লুইন৷ তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বনেতারা সবসময়ই তার প্রস্তাব শোনেন, কিন্তু কখনই মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে তাকে সাহায্য করেন না৷''
যুক্তরাজ্যের বার্মিজ রোহিঙ্গা অরগানাইজেশনের সভাপতি তুন খিনও একই রকম মনে করেন৷ তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর পর্যাপ্ত চাপ প্রয়োগ করছে না৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা গত কয়েক বছরে মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়েছে৷ কিন্তু এখনও রাখাইনে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাস করছেন৷ তারা ‘গণহত্যার' হুমকিতে রয়েছেন৷ মায়ানমারকে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জন করতে হবে৷
আরাফাতুল ইসলাম/এডিকে