নাৎসি জমানার মহাপাপ
৩০ জানুয়ারি ২০১৩১৯৩৩ সালের ৩০শে জানুয়ারি৷ বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণ৷ বিশাল আয়োজন৷ নাৎসি প্রচারণাযন্ত্র প্রস্তুত৷ নাৎসি গুণ্ডা বাহিনীর প্রায় ২০,০০০ সদস্য মশাল জ্বালিয়ে কুচকাওয়াজ করছে৷ কয়েক ঘণ্টা আগেই আডলফ হিটলার তার লক্ষ্য পূরণ করেছে৷ প্রেসিডেন্ট পাউল ফন হিন্ডেনবুর্গ তাকে জার্মান রাইশের চ্যান্সেলর হিসেবে নিযুক্ত করেছেন৷ হিটলারের অনুগামীরা তাই উৎসবে মেতে উঠেছিল৷ গোটা আয়োজনের পৌরোহিত্য করেছিল হিটলারের প্রচারণা যন্ত্রের প্রধান ইয়োসেফ গ্যোবেলস৷ হিটলারকে চ্যান্সেলারের প্রাসাদের জানালায় দাঁড় করিয়ে জার্মানির জন্য নতুন যুগের সূচনার কথা ঘোষণা করে সে৷ নাটকীয় সেই রাতকে ঘিরে যেন এক মায়াজাল রচনা করা হয়েছিল৷
সে যুগেও গণমাধ্যমের শক্তি সম্পর্কে সচেতন ছিল গ্যোবেলস৷ সিনেমার পর্দায়ও হিটলারের ক্ষমতায় আসার ঘটনা অমর করে রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল৷ মূল ছবির আগে সংবাদ পরিবেশনের যে রেওয়াজ ছিল, তাতে রাখা হতো হিটলারের এই জয়গান৷ কিন্তু ৩০শে জানুয়ারি পদচারীরা সেই পরিকল্পনার কথা তো আর জানতেন না৷ ফলে বার বার তারা নাৎসি গুণ্ডা বাহিনীর মাঝে চলে আসছিলেন৷ বিরক্ত গ্যোবেলস ভালো ছবির স্বার্থে পরে আবার নতুন করে কুচকাওয়াজ করায়৷
হিটলারের উত্থানের ইতিহাস ভাইমার প্রজাতন্ত্রের পতনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে৷ ১৯১৮ সালে এই প্রজাতন্ত্রের গোড়ায়ই ছিল গণ্ডগোল৷ গণতান্ত্রিক ভাবাপন্ন মানুষ ছাড়াই এই গণতন্ত্র শুরু হয়েছিল৷ জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এই প্রজাতন্ত্র মানতে চায় নি৷ বিশেষ করে শিল্প-বাণিজ্য জগত, সরকারি কর্মচারী এমনকি রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেও প্রতিরোধ শুরু করেছিলেন৷ অভ্যুত্থানের একাধিক প্রচেষ্টাও ঘটেছিল৷ এমন শূন্যতা পূরণ করতে আসরে এসেছিল হিটলার৷ কিন্তু জার্মানির মানুষ এক কালো অধ্যায় পেছনে ফেলে আরও ভয়ংকর এক যুগের দিকে এগিয়ে গেলেন৷ ৬০ লক্ষ ইহুদির গণহত্যার মতো ঘটনা আর কখনো, কোথাও ঘটে নি৷
যাঁরা নাৎসি আমলের শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে বুধবার বার্লিনে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন৷ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় এসেও কীভাবে সব ক্ষমতার রাশ নিজের হাতে তুলে নেওয়া যায়, তা ফুটে উঠেছে সেই প্রদর্শনীতে৷
এসবি/ডিজি (এপি)