1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হুমকির মুখে সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ এপ্রিল ২০১৮

সুন্দরবনের আশপাশের নদীতে একের পর এক কয়লা ও তেলবাহী জাহাজ ডুবছে৷ ফলে কয়লা এবং জ্বালানি তেলের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে৷ সবচেয়ে হুমকির মুখে আছে ইরাবতী ডলফিন৷

https://p.dw.com/p/2w8T2
Delphine im Ganges Bangladesch
ছবি: Rubaiyat Mansur

সুন্দরবনের মোংলা হাড়বাড়িয়া এলাকায় পশুর চ্যানেলে রবিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কার্গো জাহাজ এম.ভি বিলাস সাড়ে সাতশ' টন কয়লাসহ ডুবে যায়৷ ওই কার্গো জাহাজটির হাড়বাড়িয়া-০৬ নম্বর অ্যাংকারেজে থাকা একটি বিদেশি জাহাজ থেকে কয়লা নিয়ে ঢাকার মিরপুরে যাওয়ার কথা ছিল৷ 

কয়লা বোঝাই জাহাজটি উদ্ধারে ঘটনাস্থলে দু'টি উদ্ধারকারী জাহাজ পৌঁছেছে৷ তবে মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার অলিউল্লাহ জানিয়েছেন, জাহাজটি টেনে তুলতে ৭-৮ দিন সময় লাগতে পারে৷

সোমবার দুপুরে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ বাগেরহাট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ইমদাদুল হক জানান, ‘‘ঘটনাস্থলে ভাটার সময় পানির গভীরতা ছিল ১২ ফুট৷ সেখান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে৷ এটি খুলনা ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিস্তারিত জানা যাবে৷'' আর বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদ হাসান জানান, যত দ্রুত সম্ভব ডুবে যাওয়া কার্গোটি তুলে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্টদের বনবিভাগের পক্ষ থেকে চাপ অব্যাহত রয়েছে৷ এই জাহাজডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে তা নিরূপন করতে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বনবিভাগ৷''

ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই কয়লার মধ্যে শিসা, ক্রোমিয়াম, মার্কারি, ক্যাডমিয়াম, অ্যালুমুনিয়ামসহ আরো অনেক ক্ষতিকর হেভিমেটাল আছে, যা দীর্ঘসময় ধরে প্রকৃতিতে থাকে৷ এটা দীর্ঘ সময় ধরে জলজ প্রাণী ও পরিবেশের ক্ষতি করে৷ আর জোয়ার-ভাটার পানির কারণে এটা বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে৷ আর যতটুকু জায়গায় যায় ওই এলাকার জলজ প্রাণী, মাছ প্রভৃতির জীবনচক্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ কোনো কোনো প্রাণী মরে যায়৷ কোনোটির বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হয়৷ মাছ বা জলজ প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ আবার হয়তো মাছ ডিম পাড়ে, কিন্তু তা থেকে বাচ্চা ফোটে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘আর পানি দূষিত হওয়ার কারণে পাশের বনের মাটিতেও এই রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে সুন্দরী, পশুর এবং ধুন্দলের মতো যেসব সংবেদশীল গাছ আছে, তাদের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্থ হয়৷ এই গাছগুলো বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে৷ তাদের ফল বা বীজ থেকে নতুন গাছ হচ্ছে না৷ বীজ পচে যায়৷''

গত  ৪-৫ বছরে সুন্দরবনের আশপাশের নদীতে ৭-৮ টি কয়লা ও  জ্বালানি তেল বোঝাই জাহাজ ডুবেছে৷ এর আগে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার এমভি ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেন ডুবে যায়৷ ২০১৫ সালের ৩ মে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদীতে ডুবে যায় সার বোঝাই কার্গো জাহাজ এমবি জাবালে নূর৷

ড. ফরিদুল ইসলাম

২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদীতে ডুবতে-ডুবতে অন্য কার্গোর সহায়তায় মোংলায় পৌঁছাতে সক্ষম হয় আরেকটি কয়লা বোঝাই কার্গো৷ ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর সুন্দরবনের পশুর নদীতে ৫১০ মেট্রিক টন কয়লাবাহী এমভি জিয়া রাজ কার্গো ডুবে যায়৷ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিকালে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীর ‘হরিণটানা' বন টহল ফাঁড়ির কাছে ১২৩৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ‘এমভি সি হর্স-১' ডুবে যায়৷ ২০১৭ সালের ৪ জুন দিনগত রাতে হারবাড়িয়া চ্যানেলে ৮২৫ টন সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালসহ ‘এমভি সেবা' নামে একটি কার্গো তলা ফেটে ডুবে যায়৷

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত চার বছরে এরকম ৮-১০টি জাহাজ সুন্দরবনের আশপাশে বা ভিতরের নদীতে ডুবেছে৷ তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দুষণের কথা বাদই দিলাম, এই জাহাজগুলো উদ্ধারও করা  হয় না৷ ফলে নাব্যতাও নষ্ট হচ্ছে৷ সার, তেল, কয়লাবাহী জাহাজ ডুবেছে৷ কিন্তু এর ফলে পরিবেশ, জলজ প্রাণী, পানি, জলজ সম্পদ এবং সুন্দরবনের কী পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করা হয়নি৷ কামিটির কথা আমরা শুনি, কিন্তু প্রতিকার দেখি না৷''

তিনি বলেন, ‘‘সুন্দরবনের আশপাশের নদীতে ইরাবতী ডলফিন এই দূষণের কারণে বিপর্যয়ের মুখে আছে৷ তারা হারিয়ে যাচ্ছে৷ মৎস সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে৷ আর সরাসরি সুন্দরবন ক্ষতির মুখে পড়ছে৷ সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে নৌযান চলছে৷ কয়লার জাহাজ ডুবলে শুধু কয়লা নয়, ওই জাহাজের যে জ্বালানি থাকে তা-ও ছড়িয়ে পড়ে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ার পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে৷ কারণ, তখন প্রতিদিন গভীর সমুদ্রের মাদার ভেসেল থেকে প্রতিদিন ১০-১২টি  লাইটারেজ জাহাজে করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এই কয়লা আনা হবে৷ তখন ঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য