হোলির নামে এ কী হলো বাংলাদেশে!
১৪ মার্চ ২০১৭পাকিস্তানে সংখ্যালঘু শিয়া মুসলমানদের মসজিদে হামলা প্রায় নিয়মিত খবর৷ সচরাচর অন্যান্য সম্প্রদায়ের অস্তিত্বও জানান দেয় হানাহানির খবর৷ তবে এবারের হোলিতে একটু অন্যরকম খবরও নজরে পড়েছে৷ ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমের খবর
করাচিতেও হয়েছে হোলি উত্সব৷ সেখানেও রঙের খেলায় মেতেছিলেন হিন্দুরা৷ খবরে বলা হয়, সম্প্রীতির বার্তা দিতে প্রতিবছরই করাচির এক মন্দিরে হোলি উৎসবে মাতেন পাকিস্তানের হিন্দুরা৷
বরাবরের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে হোলি৷ পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর কিছু এলাকা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকেই অংশ নিয়েছেন এই রঙের উৎসবে৷ কিন্তু ঢাকায় উৎসবের আনন্দকে কিছুটা বিবর্ণ করেছে বখাটেদের উৎপাত৷ একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনে দেখা যায়, পথচারীদের, বিশেষ করে নারীদের ধরে ধরে রং লাগানো হচ্ছে৷ এক নারী তাঁর কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন৷ আপত্তি সত্ত্বেও কর্মজীবী ওই নারীকে জোর করে রং দেয়া হয়৷ সে অবস্থায় ক্ষুব্ধ নারী জানতে চান, ‘‘এখন যদি আমি চাকরি হারাই, ক্ষতিপূরণ কে দেবে?''
আরেক ছাত্রীও প্রতিবেদককে তার বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন৷ ক্যামেরার সামনেই এক উচ্ছৃঙ্খল যুবক এসে আবার রং লাগিয়ে দেয় তার চেহারায়৷
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয়ধারী কিছু যুবক হোলি উদযাপনের নামে নারীদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে৷
বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি উঠে না এলেও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদনের ভিডিওটি শেয়ার করেছেন৷ লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট বন্দনা কবীর উৎসবে বখাটেদের এমন নোংরামো বন্ধ করার দাবি জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আমরা যে অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার বলি – এই ঘটনা সেই বলার মুখে অনেক বড় জুতোর বাড়ি৷ অসাম্প্রদায়িকতার – উৎসবের নামে অসভ্যতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না৷ এই সব অতি উৎসাহীদের জন্যই সব সুন্দর কুৎসিত হয়ে যায়, সব ভালো হয়ে যায় কালো৷ এর তীব্র প্রতিবাদ করছি৷ সাথে এরকম ঘটনা কেন, কাদের দ্বারা ঘটেছে সেটা খুঁজে বের করার দাবি জানাই৷''
ফয়সল ওয়াহাব চৌধুরী নামের একজন ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে লিখেছেন,
‘‘সব কিছু ট্রেন্ড বানিয়ে ফেলো৷ কিন্তু সবকিছুরই একটা সীমা থাকে৷ দিনশেষে সবকিছুই তো ভালগার মনে হলো৷ এখানে ধর্ম মুখ্য ছিল না, কিছু মানুষ সুযোগের অপব্যবহারের চেষ্টা করেছে৷ এখানে কে মুসলিম, কে হিন্দু, কে খ্রিষ্টান, কে বৌদ্ধ – এটা কোনো ব্যাপার নয়৷ শেষ অংশটা দয়া করে দেখবেন৷ ছ্যাচড়ামির একটা সীমা থাকে৷ ঘরে কি মা-বোন নেই নাকি যে ওদের সাথেও এইরকম করে!''
ফয়সল ওয়াহাব চৌধুরী সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক অবস্থান থেকে বিষয়টিকে বিশ্লেষন করলেও কিছু অখ্যাত এবং বেনামি সংবাদমাধ্যম বিষয়টিতে সাম্প্রদায়িকতার রং চড়াচ্ছে৷
এসিবি/ডিজি