1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

২০ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা মোদীর

১২ মে ২০২০

এত বড় অঙ্কের প্যাকেজ ঘোষণা ভারতে এর আগে হয়নি। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় ২০ লাখ টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেন নরেন্দ্র মোদী।  

https://p.dw.com/p/3c8Nl
ছবি: AFP/P. Singh

করোনা পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আর্থিক দাওয়াই দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। একেবারে ২০ লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ। যা কি না ভারতের জিডিপির প্রায় দশ শতাংশ। মঙ্গলবার ভারতীয় সময় রাত আটটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই প্যাকেজেররূপরেখা দিয়েছেন, কিন্তু বিস্তারিতভাবে জানাননি। মোদী বলেছেন, বুধবার থেকে কয়েকদিন ধরে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সেই ঘোষণা করবেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, গরিব, কৃষক, শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ী, কুটীর শিল্প, মাঝারি শিল্প, বড় শিল্প-- সকলের জন্যই প্যাকেজে কিছু না কিছু ব্যবস্থা থাকবে। আর এই প্যাকেজের উদ্দেশ্য হলো, 'স্বনির্ভর ভারত'। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে 'আত্মনির্ভর ভারত আর্থিক প্যাকেজ'।

এই প্যাকেজ ঘোষণার পাশাপাশি মোদী আরও কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, লকডাউন ১৭ মে-র পরেও থাকবে, তবে কড়াকড়ি অনেকটাই কমবে। মোদীর ঘোষণা, ''করোনা এখন বহু দিন পর্যন্ত আমাদের জীবনে থাকবে। এই সত্য স্বীকার করে নিয়েই জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।'' অর্থাৎ, সবকিছু বন্ধ করে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিন শেষ। এ বার সাবধানতা অবলম্বন করে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, স্বাস্থ্যবিধি পালন করে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবন শুরুর সময় এসে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, গত পঞ্চাশ দিনের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দিয়েছে, স্থানীয় ছোট ব্র্যান্ডের জিনিসই ভারতীয়দের বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই সকলে যেন এই ছোট ভারতীয় ব্র্যান্ডের জিনিস ভবিষ্যতে কেনেন। তাতে ভারতের ছোট ছোট শিল্প ভবিষ্যতে অনেক বড় হয়ে উঠতে পারবে। তবে এই ২০ লাখ কোটির মধ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আগে ঘোষণা করা আর্থিক অনুদানও থাকবে বলে মোদী জানিয়েছেন।

মোদী কোনও দেশের নাম করেননি, তবে বিশ্বের অন্য দেশের সংস্থার তৈরি করা জিনিস ছেড়ে ভারতীয় কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারের আবেদন জানিয়েছেন।  তিনি টেনে এনেছেন খাদির প্রসঙ্গ। এক সময় তিনি দেশের লোককে খাদির পোশাক পরতে বলেছিলেন, তখন খাদির রেকর্ড বিক্রি হয়েছিলো। এ বারও ভারতীয় কোম্পানির জিনিস কিনে তাদের বিক্রি বাড়ানোর অন্তর্নিহিত আবেদন তাঁর ভাষণে ছিলো।  তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদীর প্রথম লক্ষ্য হলো, চীনের জিনিসের ব্যপক বিক্রি বন্ধ করা। তার জায়গায় ভারতীয় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করা। করোনার ফলে চীনের জিনিসের ব্যবহার বন্ধ করার ও ভারতীয় কোম্পানির জিনিস কেনার প্রবণতা যদি শুরু করা যায়, তা হলে তাঁর দীর্ঘদিনের ইচ্ছে পূরণ হবে।

কোন কোন ক্ষেত্রে প্যাকেজে বেশি জোর দেওয়া হবে, তারও একটি রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জানিয়েছেন পাঁচটি স্তম্ভের কথা। যার মধ্যে অর্থনীতি থেকে পরিকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি থেকে মাঝারি শিল্প-- সব কিছুরই উল্লেখ আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।

নরেন্দ্র মোদীর প্যাকেজের ঘোষণা এমন সময়ে এলো, যখন দেশের গরিব মানুষদের অবস্থা শোচনীয়। পরিযায়ী শ্রমিকরা রোজ মারা যাচ্ছেন। এতদিন বন্ধ থাকায় ছোট ও মাঝারি শিল্প ধুঁকছে। বড় সংস্থা, বিমান পরিবহন, হোটেল, গাড়ি, উৎপাদন ক্ষেত্রের অবস্থা শোচনীয়। রাজ্যগুলি তাদের প্রাপ্য অর্থ দাবি করছে। সেই সঙ্গে তারা বাড়তি টাকাও চাইছে। কারণ, ক্রমশ করোনার প্রকোপ বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহে মহামারির রেকর্ড বৃদ্ধি ঘটেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা নিয়েও কোনও কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সোচ্চার হয়েছেন।

তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরই বিজেপির নেতা, মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীরা প্যাকেজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শুরু করে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় ব্র্যান্ড কেনার প্রচারও শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, ''বি ভোকাল অন লোকাল মানে স্থানীয় ব্র্যান্ড নিয়ে সোচ্চার হোন।''

বিরোধীদের অবশ্য বক্তব্য, আধঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী যা বললেন, তা অত্যন্ত অস্পষ্ট। ২০ লাখ কোটি টাকা কোথা থেকে আসবে এবং তা কী ভাবে ব্যয় হবে, তা পুরোপুরি ধোঁয়াশায় ভরা। সরকার কোনও রাজ্যের প্রাপ্য টাকা মেটাচ্ছে না। পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনের ভাড়া পর্যন্ত দিচ্ছে না। এমনকী, এর আগেও যে আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা হয়েছে, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক কম টাকা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া লকডাউন চার নিয়েও প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট কিছু বলেননি। করোনার প্রকোপ যখন বাড়ছে তখন লকডাউনের কড়াকড়ি শিথিল করে কী ভাবে তার বিরুদ্ধে দেশ লড়বে, সে বিষয়েও স্পষ্ট করে কিছু জানাননি তিনি। এখন দেখার, আগামী কয়েক দিনে অর্থমন্ত্রী এবং মোদীর মন্ত্রিসভা ধোঁয়াশা কাটাতে আদৌ পারেন কি না।

জিএইচ/এসজি (ডিডি নিউজ)