হামলার পেছনে আসাদ
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩এএফপি রিপোর্টটির পাঁচটি ‘পয়েন্ট' উল্লেখ করে বলেছে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে বিদ্রোহীদের কয়েকটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে এ হামলা চালিয়েছিল আসাদের অনুগত বাহিনী৷ এতে আরো বলা হয়েছে, এত বড় ধরনের একটা হামলা চালানোর সামর্থ্য বিদ্রোহীদের কখনও থাকতেই পারে না৷
রিপোর্টে বলা হয়, ভিডিও দেখে ফরাসি তদন্ত কর্মকর্তারা ২৮১টি মরদেহ সনাক্ত করেছে, তবে তাঁদের কথায় নিহতের সংখ্যা অন্তত ১৫শ৷ এছাড়া, হামলার পর ঐ সব স্থানে গোলা মেরে আসাদ সরকার সব তথ্য-প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে বলেও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে৷
সোমবার ফরাসি পত্রিকা ‘লে ফিগারো'-তে রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়৷ সেইসাথে সেখানে প্রেসিডেন্ট আসাদের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়৷ যাতে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্য একটি শক্তিশালী পিপা, যে কোনো ধরনের হামলা এতে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটাবে৷ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সকে গ্যাস হামলার পেছনে তাঁর সম্পৃক্ততা প্রমাণ করার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন প্রেসিডেন্ট আসাদ৷
মার্কিন কংগ্রেসে সিরিয়া ইস্যুতে শুনানি
সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের পরিকল্পনার ব্যাপারে প্রথম গণ-শুনানি অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার৷ ২১শে আগস্ট দামেস্কে রাসায়নিক গ্যাস হামলার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত – এ ব্যাপারে জনগণ এবং আইন প্রণেতাদের শুনানি হবে৷ এরপর সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে উপস্থিত হবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল এবং শীর্ষ কর্মকর্তারা৷ সেখানে নিজেদের মতামত দেবেন তাঁরা৷ আগামী সপ্তাহেই মার্কিন কংগ্রেসে সিরিয়া নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
এবারের জি-২০ সম্মেলন কিসের জন্য
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে শুরু হতে যাচ্ছে জি-২০ সম্মেলন৷ অর্থনৈতিক এই সম্মেলন এখন হয়ে উঠেছে সিরিয়া কেন্দ্রিক৷ এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই সম্মেলনে অংশ নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ মনে করা হচ্ছে, এই সম্মেলনে সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানোর ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবেন ওবামা৷ এর আগে, সিরিয়া ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করায় বর্তমানে দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
যুদ্ধের আশঙ্কায় বাড়ছে শরণার্থী
বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে শরণার্থী সংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে গেছে সিরিয়া৷ ২০১১ সালে সংঘর্ষ শুরু পর থেকে এ পর্যন্ত ৬২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ দেশ ছেড়েছে৷ এর অর্ধেকই শিশু৷ মঙ্গলবার জেনেভায় এ তথ্য তুলে ধরে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা৷
সংস্থাটি জানিয়েছে, সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই এখন শরণার্থী ৷ গত এক বছরে ১৮ লাখ মানুষ সিরিয়া ছেড়েছে৷ আগস্টের শেষ দিকে, সিরিয়ার ভেতরই ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৪২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ৷ প্রতিদিনই গড়ে অন্তত ৫ হাজার মানুষ দেশ ছাড়ছে বলে জানালেন জাতিসংঘের হাই-কমিশনার অ্যান্টোনিও গুটারেস৷ একে এই শতকের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসে মানবিক বিপর্যয়ের এমন নজির আর দেখা যায়নি৷
শরণার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের জন্য বুধবার জেনেভায় একটি বৈঠকে বসবেন ইরাক, জর্ডান, লেবানন আর তুরস্কের মন্ত্রীরা৷ লেবাননে বর্তমানে ৭ লাখ ১৬ হাজার, জর্ডানে ৫ লাখ ১৫ হাজার, তুরস্কে ৪ লাখ ৬০ হাজার, ইরাকে ১ লাখ ৬৮ হাজার এবং মিশরে ১ লাখ ১০ হাজার সিরীয় শরণার্থী রয়েছে৷
তেলের দাম কমেছে, ক্যামেরনের ভুল
খুব শিগগিরই সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান চালানোর সম্ভাবনা না থাকায় এশিয়ার বাজারে মঙ্গলবার তেলের দাম কিছুটা কমেছে৷ ওদিকে, সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানোর পক্ষে ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের নামটিও যোগ করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন৷ ২৯শে আগস্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেয়া বক্তব্যে ক্যামেরন বলেছিলেন, ভারতও বিশ্বাস করে যে আসাদবাহিনী ঐ রাসায়নিক গ্যাস হামলা চালিয়েছে এবং সেজন্য সেদেশে সামরিক অভিযানের পক্ষে তারা৷
মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ভুল বশত ক্যামেরন ভারতের নাম উল্লেখ করেছিলেন৷ কেননা জাতিসংঘের অনুমদোন ছাড়া তারা সিরিয়ায় হামলার চালানোর একেবারে বিপক্ষে৷ এএফপিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল এবং তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ভুল বলে স্বীকার করেছে৷
অন্যদিকে, নতুন দিল্লির ব্রিটিশ দূতাবাসের এক মুখপাত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, বিতর্ক নিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত প্রস্তুতি নেয়ায় এই ভুলটি হয়েছে৷
এপিবি/ডিজি (এএফপি/এপি/রয়টার্স)