রোহিঙ্গা শরণার্থী
১ সেপ্টেম্বর ২০১৪
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক জানান, ‘‘দুই দেশের কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ' রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় কাজ করবে৷ আর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে দুই মাসের মধ্যে৷''
ঢাকায় রবিবার দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক আর মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান চি৷
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে আরো অনেক বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা, যোগাযোগ ও বাণিজ্য, জ্বালানি, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতিক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্য ‘কাঠামো চুক্তি'৷ সচিব বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে ধরনের চুক্তি রয়েছে, মিয়ানমারের সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তি হবে৷ তিনি জানান, বাংলাদেশের বান্দরবান হয়ে মিয়ানমারের পালেটোয়াসহ অন্য রুটে সড়ক যোগাযোগ চালু করার বিষয়ে বাংলাদেশের দেয়া প্রস্তাবের ব্যাপারে মিয়ানমার ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে৷
রোহিঙ্গা শরণার্থী
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে নিবন্ধিত ৩০ হাজারসহ দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে৷
এর বাইরে আরো প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে৷
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানানো হলেও ২০০৫ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ আছে৷ ২০০৫ সালের আগ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফিরিয়ে নেয়৷
২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গার পর নতুন করে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে৷ এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের শরণার্থীর মর্যাদা দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো হলেও সরকার তাতে সায় না দিয়ে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে জোর দেয়৷
দাঙ্গার পর বাংলাদেশে মিয়ানমারের কোনো নাগরিক থাকার কথাও অস্বীকার করে দেশটির সামরিক সরকার৷ এমনকি দীর্ঘ তিন দশক পর গত মার্চ-এপ্রিলে মিয়ানমারে আদম শুমারি হলে তাতেও রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় উল্লেখ করার সুযোগ দেয়া হয়নি ৷
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘‘প্রত্যাবাসনে রাজি হয়ে মিয়ানমার কার্যত স্বীকার করল যে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা তাদেরই নাগরিক৷''