1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

২৫ লাখ দর্শক ও ২৮ কোটির বিক্রি সব জবাব দিয়ে দিচ্ছে

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড়
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বই নিয়ে, বইমেলা নিয়ে অনেক প্রশ্ন, অনেক আশঙ্কা। সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে কলকাতা বইমেলায় প্রচুর বিক্রি হয়েছে।

https://p.dw.com/p/4cD8v
কলকাতা বইমেলার তোরণ
চলতি বছর কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের বই বিক্রি হয়েছে কোটি টাকারছবি: Subrata Goswami/DW

নীরস অথচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংখ্য়াতত্ত্ব প্রথমেই জানিয়ে রাখি৷ কলকাতা বইমেলায় এবার মোট ২৫ লাখ মানুষ গিয়েছিলেন৷ বই বিক্রি হয়েছে ২৮ কোটি টাকার৷ তার মধ্যে বাংলাদেশের বই বিক্রি হয়েছে এক কোটি টাকার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা৷ বই, লিটল ম্যাগজিন মিলিয়ে এক হাজার স্টল ছিল৷ বাংলা প্রকাশকদের স্টল ছিল সাতশোর বেশি৷ খাবারের স্টল ছিল প্রচুর৷ বইয়ের সম্ভারের পাশাপাশি রকমারি খাবারও বিক্রি হয়েছে রমরমিয়ে৷ অনেকে অভিযোগ করেছেন, খাবারের স্টলের সংখ্যা কম ছিল৷ তাই পাবলিশার্স ও বুকসেলার্স গিল্ড জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বছর তারা খাবারের স্টল আরো বাড়াবে৷

বইমেলা যতদিন চলেছে বা তারপরেও খাবার নিয়ে, মানুষের বই না কিনে ঘুরে বেড়ানো নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে৷ এরমধ্যে একটা রসিকতা তো ভাইরাল হয়ে গেছে৷ এক পরিবার বইমেলায় গিয়েছেন৷ ঘুরেছেন৷ প্রচুর খাওয়াদাওয়া করেছেন৷ কিন্তু কোনো বই কেনেননি৷ পরিবারের কর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি বইমেলায় এসে বই কেনননি? প্রশ্নকর্তার মুখ বন্ধ করে দিয়ে পরিবারের কর্তা বলেছিলেন, আপনি চিড়িয়াখানায় গিয়ে কি হাতি কেনেন? জিরাফ, জেব্রা কেনেন? তাহলে মেলায় এলে বই কিনতেই হবে এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে?

হক কথা৷ বইমেলায় গিয়ে বই না কিনে ফেরা যাবে না, এমন কোনো তুঘলকী ফরমান নেই৷ কলকাতা বাইমেলায় যে আয়তন তাতে  বইমেলা একটু ঘুরে দেখতে প্রচুর সময় লাগে৷ প্রচুর হাঁটতে হয়৷ খিদে পাওয়া স্বাভাবিক৷ ফলে খবার দোকানপাট না থাকলেই বিপত্তি হত৷ পেটুক বাঙালি যদি খাবার লোভে বইমেলায় যায় এবং তার সঙ্গে কিঞ্চিৎ হুজুগের মিশেল থাকে, তাহলেই বা আপত্তি কোথায়? যারা আইপিএল দেখতে যান, তারা কি সবাই ক্রিকেট বোদ্ধা, না ক্রিকেট খেলেছেন? তা তো হতে পারে না৷ চার-ছয়ের ক্রিকেটের উত্তেজনা, বলিউড, তারকা ক্রিকেটার, শুভমন গিলের সঙ্গে শচিন-কন্যার সম্পর্কের মতো গুজবের আগুনের উত্তাপ পেতেই তো মাঠে যান৷ বইমেলাও এখন কিছু মানুষের কাছে ওইরকমই হয়ে গেছে৷ না গেলে আওয়াজ খেতে হয় অথবা এখানেও বিনোদনের হরেক আয়োজন দেখতে তাদের হয়ত ভালো লাগে, তাই যান৷

তাই বলে কি সিরিয়াস পাঠক ও ক্রেতা যান না? অবশ্যই যান৷ এই তো এক শিক্ষক বইমেলা থেকে একাই তিন লাখ টাকার বেশি বই কিনেছেন৷ কারণ, এটাই তার নেশা৷ দিল্লিতে বইমেলায় একজনকে দেখেছি, সুটকেস নিয়ে আসতে৷ সেটা বাইরে রেখে প্রতিটি স্টলে প্রতিটি বই পড়ে, দেখে কিনতে৷ একেকটি স্টলে এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে থাকতেন তিনি৷ একবার ঘুরে দেখা হয়ে গেলে আবার আসতেন কিছু বাদ পড়ে গেল কি না তা দেখতে৷ তারপর যে বই কিনতেন তা রোজ সুটকেসে করে ভরে নিয়ে যেতেন৷ এরকম মানুষের সংখ্যাও উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়৷

এই বইপাগলরা আছেন বলেই তো বই থকবে৷ প্রকাশকদের সংখ্যা বাড়বে৷ যতই ই-বুক বা পডকাস্ট বই জনপ্রিয় হোকনা কেন, কলকাতা বইমেলায় লাখ লাখ মানুষ শুধু বই দেখার ও কেনার জন্য এসেছেন৷ একের পর এক স্টল ঘুরে ঘুরে বই দেখেছেন৷ কিনেছেন৷ কলকাতা বইমেলায় ই-বুক বা পডকাস্ট বইয়ের স্টল খুব বেশি এজন্যই চোখে পড়েনি৷ সাংবাদিক ও লেখক অশোক বসু যেমন প্রায় প্রতিদিন বইমেলায় গেছেন৷  বই দেখতে, কিনতে এবং অবশ্যই নতুন বই উল্টে তার গন্ধ নিতে৷ তিনি খুব দরকার না হলে ই-বুক পড়েন না৷

আর ২৮ কোটি টাকার বই বিক্রি হওয়াটাও কম কথা নয়৷ কারণ, এই বইকে কেন্দ্র করে তো একটা শিল্প গড়ে উঠেছে৷ ছোট শিল্প৷ কিন্তু তার সঙ্গে অনেক মানুষ যুক্ত৷ প্রকাশক, ছাপাখানা, বই-বাঁধাই, বই পরিবহন, বিক্রেতা, লেখক, প্রুফরিডার, কাগজের কারবারি সবমিলিয়ে বেশ কয়েক হাজার মানুষের রুটিরুজি এর সঙ্গে যুক্ত৷

এখন বইয়ের দাম যা বেড়েছে তাতে গড়ে বইয়ের দাম পড়ে পাঁচশ টাকার মতো৷ এর মধ্যে কিছু বইয়ের দাম বেশি৷ কিছু কম৷ তাই গড় হিসাবে পাঁচশ টাকা৷ সেই হিসাবে প্রায় ছয় লাখ বই বিক্রি হয়েছে এই বইমেলায়৷ সখ্যাটা এই ইন্টারনেট, ই-বুক, পিডিএফ বই, পডকাস্ট বইয়ের যুগে কম কি? একেবারেই নয়৷ আর এর সিংহভাগটাই তো বাংলা বই৷ ফলে বই নিয়ে নিরাশ হওয়ার কোনো জায়গা নেই৷

আর এই যে নতুন নতুন প্রকাশনা সংস্থা তৈরি হচ্ছে, তা তো উঠে যাচ্ছে না৷ তারাও করে খাচ্ছে৷ নতুন নতুন সংস্থাও যুক্ত হচ্ছে৷ এমনই এক প্রকাশকের দাবি, আগে শুধু উপন্যাস, সেটাও বেশি করে ভূত এবং গোয়েন্দা বা প্রেমের উপন্যাস ছাপতেন তিনি৷ কিন্তু এখন প্রবন্ধের বইয়ের পাঠক বেড়েছে৷ সিরিয়াস লেখা মানুষ কিনছে৷ তাই সকলেই এই ধরনের বই প্রকাশ করছেন৷ ফলে বিষয়বৈচিত্র অনেক বেড়েছে৷ এবারই সাতশর বেশি বাংলা বইয়ের প্রকাশক বইমেলায় অংশ নিয়েছেন৷

কিন্তু, আজ্ঞে হ্যাঁ, এখানে একটা কিন্তু আছে৷ এই বিষয় বৈচিত্রের পিছনে আরও একটা কারণ আছে৷ এখন অনেকে তাদের গবেষণাপত্র বা নিজের লেখা কবিতার বা চিন্তাভাবনার ফসল বই হিসাবে ছাপান৷ আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ৫০টি বইও ছাপানো যায়৷ আবার ৫০ হাজারও৷ আর টাকা নিয়ে বই ছাপতে ছোট-বড় সব প্রকাশক মুখিয়ে আছেন৷ অনেক প্রকাশকের টিকে থাকার হাতিয়ার সেটাই৷ হাজার ২০-২৫ খরচ করলেই বই ছাপা যাচ্ছে৷ একবার সপরিবারে ঘুরতে গেলেই তো একই অঙ্কের টাকা লাগে৷ ফলে এই পরিমাণ অর্থ খরচ করার ক্ষেত্রে মানুষের খুব একটা অভাব নেই৷ আর এখনো লেখক হওয়ার মধ্য়ে, বুদ্ধিজীবী হওয়ার মধ্যে সামান্য হলেও একটু গ্ল্যামার আছে৷ তাই আগের থেকে এইভাবে বই ছাপানোর সংখ্যাটা অনেক বেড়েছে৷ পছন্দ হলে সেই ধরণের বইও মানুষ প্রচুর কিনছে৷ গল্প, উপন্যাস, ভূত, গোয়েন্দা, প্রেম, ভ্রমণকাহিনির পাঠক তো আছেই, সেই সঙ্গে কবিতা, প্রবন্ধ, অর্থনীতি, ইতিহাস ও বিষয়ভিত্তিক বইয়ের চাহিদাও কম নয়৷ এমনই এক ছোট প্রকাশক এক হাজার দুইশ টাকা দাম রেখেছেন একটি কফি টেবিল কবিতার বইয়ের৷ যার একপাতায় কবিতা, অন্য পাতায় অলংকরণ৷ কবিও সেরকম নামকরা নয়৷ তারপরেও সেই কবিতার বইয়ের বিক্রি ভালো হয়েছে৷

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন তো হবেই৷ ই-বুকের চাহিদা বাড়বে, পডকাস্টের চাহিদা বাড়বে, বইয়ের রূপ পরিবর্তন হবে৷ তা হোক না৷ এখনো পর্যন্ত বইয়ের চাহিদা কম হওয়ার লক্ষণ নেই৷ আর বাংলা বই?  যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, ততদিন বাংলা বইয়ের চাহিদাও থাকবে৷ ভারতে ইংরেজি বইয়ের চাহিদা বাংলার থেকে বেশি৷ তা তো হবেই৷ কারণ, ইংরেজি বইয়ের বাজারের আয়তন অনেক বেশি৷ বাংলা তো মাত্র দুইটি রাজ্যের ভাষা৷ সেই বাংলা ভাষায় বই কেনা, বই হাতে তুলে নেয়ার এই প্রাবল্য দেখলে হতাশার কোনো জায়গা থাকে না৷

ঢাকার রিকশার সাজে সাজলো কলকাতা বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান