৫০ বছরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, শীতে কাঁপছে দেশ
৮ জানুয়ারি ২০১৮এবার শীত একটু দেরি করে এলেও তীব্রভাবেই এসেছে৷ সোমবার সকালে দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ গত বছর এইদিনে তেতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যক্ষেণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক তৌহিদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান,‘‘ সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়৷ গত ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড৷ এর আগে ১৯৬৮ সালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি৷''
তবে তিনি জানান,বিকেলের দিকে রোদ ওঠায় তাপমাত্রা বেড়ে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে৷
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন সারাদেশে তীব্র শৈত্য প্রবাহ চলছে৷ সারাদেশের গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এখন সাত ডিগ্রির নীচে৷ সাধারণভাবে আমরা ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা হলে শৈত্য প্রবাহ লক্ষ্য করি৷ এখন সারাদেশেই চলছে তীব্র শৈত্য প্রবাহ৷ তাপমাত্রা কমার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমের শীতল বাতাস শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত শীতের এই তীব্রতা থাকবে৷ এরপর রাতের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে৷ তবে পুরো জানুয়ারি মাস জুড়েই শীত থাকবে৷''
সোমবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ২ দশমিক ৯, নীলফামারীর ডিমলায় ৩ এবং দিনাজপুরে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে৷
এই তীব্র শীতে সারাদেশ, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষ বিপাকে পড়েছে৷ নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ শীত নিবারণের বস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে৷ শীতের কারণে অনেকেই কাজেও যেতে পারছেন না৷ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা৷
তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহীন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমার উপজেলায় আগে ২৫শ'র মতো কম্বল এসেছে সরকারি অনুদান হিসেবে৷ তা আগেই বিতরণ করা হয়েছে৷ তবে এখন আরো ১০-১২ হাজার কম্বল প্রয়োজন৷ গরীর মানুষ শীতে কষ্ট পাচ্ছে৷ তাঁরা শীতে কোনো কাজও করতে পারছে না৷''
পঞ্চগড়ের সাংবাদিক সাজ্জাদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘তীব্র শীতে পঞ্চগড়ের মানুষ দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে৷ যাঁরা নিম্নবিত্ত, তাঁরা শীত এবং অর্থ দুটোরই কষ্টে আছে৷ পুরো পঞ্চগড়ে ৫ লাখ কম্বলের প্রয়োজন থাকলে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার৷ আর পৌর এলাকায় ১৫ লাখ কম্বলের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া গেছে মাত্র ৩৭৫টি কম্বল৷''
তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ আছে যে, কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে তা-ও প্রকৃত যাদের প্রয়োজন, তারা পচ্ছে না৷ বিতরণকারীরা তাদের আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের মধ্যে বিতরণ করছেন৷''
পঞ্চগড় ছাড়াও দেশের উত্তরের জেলা রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নিলফামারী, ঠাকুরগাও, বগুড়ায় একই অবস্থা৷ রংপুরে পাঁচ লাখ কম্বলের চাহিদার বিপরীতে সামান্য কিছু কম্বল পাঠানো হয়েছে৷
এদিকে শীত ও কুয়াশার কারণে আলু ও গমসহ রবিশস্যে ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ বোরো ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রক্ষা করা হচ্ছে৷ তবে শীতের এই তীব্রতা অব্যাহত থাকলে বীজতলাও নষ্ট হতে পারে৷
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রনালয়ের সচিব শাহ কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘উত্তরাঞ্চলের ২০ জেলায় আমরা নভেম্বরের শুরুতেই ৩২ লাখ কম্বল পাঠিয়েছি৷ গত দু'দিনে পাঠানো হয়েছে আরো ৯ লাখ৷ আর ৮০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রতিটি জেলায়ই একজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য৷ আমরাও কেন্দ্র থেকে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি৷''
এদিকে শীতজনিত রোগ, বিশেষ করে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ আরো কিছু রোগের চিকিৎসা দিতে রংপুর বগুড়াসহ বেশ কয়েকটি জেলায় মেডিক্যাল টিম কাজ করছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় জানিয়েছে৷