১০ বছরের কারাদণ্ড
২২ জুলাই ২০১৪প্রায় ২১ বছর আগে ১৯৯৩ সালে সারাদেশে এই শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷
তবে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর রেজাউল রোমেল ডয়চে ভেলেকে বলেন, অপরাধের তুলনায় এই শাস্তি নগণ্য৷ সঠিক আইনে মামলা করা হলে হত্যার দায়ে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হতে পারত৷
১৯৯৩ সালে অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালস নামের একটি ওষুধ কোম্পানির প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে সারা দেশে ৭৬ জন শিশু মারা যায়৷ এ ঘটনায় ওই বছরই ড্রাগ আইনে ওষুধ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবুল খায়ের বাদী হয়ে মামলা করেন৷ মামলার তদন্ত শেষে ১৯৯৪ সালে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়৷ দীর্ঘ সময় ধরে মামলার শুনানি এবং যুক্তি-তর্ক শেষে মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগীয় বিশেষ জজ আবদুর রশীদ রায় দেন৷
রায়ে ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির দায়ে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক চিকিৎসক হেলেন পাশা, ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নগেন্দ্র নাথ বালাকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ ও দুই লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেয়া হয়৷ এর মধ্যে প্রথম দু'জন জামিনে রয়েছেন৷ তৃতীয়জন পলাতক৷ জামিনে থাকা দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছে৷ মামলায় অ্যাডফ্লেমের মালিক আজফার পাশা ও মান নিয়ন্ত্রক আরেক কর্মকর্তা মো. নোমানকে খালাস দিয়েছেন আদালত৷ মামলার প্রধান আসামি ও কোম্পানির পরিচালক আনোয়ার পাশা তদন্ত চলাকালেই মারা যান৷ পরে তাঁর নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়৷
১৯৯৩ সালে অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যারাসিটামল সিরাপে ডাই-ইথিলিন গ্লাইকলের উপস্থিতি ধরা পড়ে৷ মামলায় বলা হয়, অ্যাডফ্লেমের প্যারাসিটামলে বিষাক্ত উপাদান থাকায় বহু শিশু কিডনি সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়৷ তাদের মধ্যে অন্তত ৭৬ জনের মৃত্যু হয়৷
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন চারজন৷ মামলা পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর নাদিম মোস্তফা৷ অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট বশির আহমেদ৷
আদালত বলেন, আসামিরা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে৷ তাই তাদের ড্রাগ আইনে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয়েছে৷
কিন্তু অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর রেজাউল রোমেল ডয়চে ভেলেকে বলেন ৭৬ শিশুর মৃত্যু নিঃসন্দেহে হত্যাকাণ্ড৷ তাই আসামিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত ফৌজদারি আইনে হত্যা মামলা দায়ের করা উচিত ছিল৷ তাহলে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারত৷ তাদের অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য৷ কিন্তু ড্রাগ আইনে মামলা হওয়ায় তাদের মাত্র ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে৷ কারণ এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তিই হলো ১০ বছরের কারাদণ্ড৷ তিনি বলেন পুলিশ চাইলে তদন্ত পর্যায়েও মামলার ধারা পরিবর্তন করে হত্যার অভিযোগে চার্জশিট দিতে পারত৷ কিন্তু তা করা হয়নি, যা দুঃখজনক৷
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন ড্রাগ আইনটি এখন পরিবর্তনের সময় এসেছে৷ নকল বা ভেজাল ওষুধে কারুর মৃত্যু হলে সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করেন তিনি৷
মামলার রায়ের সময় লায়লা বেগম নামে একজন মা তাঁর ঘটনার সময় দেড় বছরের শিশু আরিফের ছবি নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷ আরিফ ঐ সিরাপ খেয়ে মারা যায়৷ এখন সে বেঁচে থাকলে ২২ বছরের যুবক হত৷ তার ছবি নিয়ে আদালত এলাকায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়৷