অনেক কিছু নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের ওপর
২৮ এপ্রিল ২০১৮ঢাকার অদূরে গাজীপুর এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আগামী ১৫ মে৷ এরই মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন৷ শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী প্রচারনা৷ এই দু'টি সিটি কর্পোরেশনরেই বর্তমান মেয়র বিএনপি'র৷ কিন্তু তাদের কাউকেই বিএনপি এবার মনোনায়ন দেয়নি৷ নতুন প্রার্থী দিয়েছে৷ আর বিভিন্ন সূত্র থেকে যে খবর তাতে নির্বাচনী লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি'র প্রার্থীদের মধ্যেই৷
খুলনা সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রাথী তালুকদার আব্দুল খালেক৷ আর বিএনপি'র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু৷ এখানে বর্তমান বিএএনপির মেয়র মনিরুজ্জামান মনি এবার মনোনয়ন পাননি৷
এখানে মোট মেয়র প্রার্থী পাঁচ জন৷ মোট ওয়ার্ড ৩১টি৷ কাউন্সিলর প্রার্থী ১৪৮ জন৷ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১০টি পদে প্রার্থী ৩৯ জন৷ এই সিটিতে মোট ভোটার চার লাখ ৯৩ হাজার৷
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এটা দ্বিতীয় নির্বাচন৷ এখানে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো.জাহাঙ্গির আলম৷ আর বিএনপি'র প্রার্থী হাসানউদ্দিনন সরকার৷ এখানে বিএনপি'র মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান এবার মনোনয়ন পাননি৷
গাজীপুরে ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট কাউন্সিলর প্রার্থী ২৫৫ জন৷ আর সংরক্ষিত ১৯টি নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ৮৪ জন৷ এই সিটিতে ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার৷
২৩ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার পরই দুই সিটিতে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে৷ সারাদেশের চোখ এখন ওই দুই সিটি নির্বাচনের দিকে৷ তবে শুরু থেকেই এই নির্বাচনে কয়েকটি বিষয় আলোচনায় এসছে৷ আর তা হলো নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, সংসদ সদস্যদের নির্বাচনে প্রচারণার সুযোগ এবং প্রার্থীদের হলফনামায় মিথ্যা তথ্য৷
নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করেছিল বিএনপি৷ কিন্তু এ নিয়ে নানা আলোচনার পর সেনা মোতায়েনের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিভিল প্রশাসনের ওপর আস্থাহীনতার কারণেই সেনা মোতায়েনের দাবি ওঠে৷ নির্বাচনের যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে সেনা মোতায়েন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করা যায়না৷ তারপরও নির্বাচন কমিশন যেহেতু সেনা মোতায়েসের দাবি গ্রহণ করেনি এখন তাদেরই দায়িত্ব হল সুষ্ঠু নির্বাচন করে সেনা মোতায়েনের দাবির অসারতা প্রমাণ করা৷''
তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সেনা মোতায়েন প্রয়োজন জাতীয় নির্বাচনে৷ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রশাসন যাতে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে নির্বাচন কমিশনকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷''
অন্যদিকে নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দাবি করছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ৷ নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে এখনো কোনো অবস্থানের কথা জানায়নি৷ বলা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দাবির দিকে ঝুঁকে আছে৷ তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, সংসদ সদস্যরা সে সুযোগ পাবেন না৷ ‘‘কারণ এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে৷ সুযোগ দিলে আগেই দেয়া হতো৷'' বলছিলেন তিনি৷
আর বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘‘সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ দেয়া কেনোভাকেই ঠিক হবে না৷ কারণ তারা প্রশাসনসহ আরো অনেক বিষয়ের ওপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রাখেন৷''
প্রার্থিতা চুড়ান্ত হওয়ার আগেই খুলনায় বিএনপি'র মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ করেন৷ তিনি অভিযোগে বলেন, ‘‘খালেক সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট৷ নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান৷ ইস্টার্ন পলিমার লিমিটেডের পরিচালক ও সর্বময় নিয়ন্ত্রণকারী৷ এখান থেকে তিনি নিয়মিত বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেন৷ খালেক তার নির্বাচনী হলফনামায় এসব তথ্য গোপন করেছেন৷'' তিনি ইস্টার্ন পলিমার লিমিটেডের নেওয়া ঋণ তথ্যও হলফনামায় উল্লেখ করেননি এবং দলীয় মনোনয়নপত্রে তার ভোটার নম্বরও উল্লেখ করা হয়নি বলে মঞ্জুর অভিযোগ৷
এরপর মঞ্জুর বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ করেন খালেক৷ তিনি অভিযোগে বলেন, ‘‘বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু জয়েন্ট স্টক কোম্পানির নিবন্ধনকৃত খুলনা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের একজন শেয়ার হোল্ডার৷ তিনি ওই কোম্পানির এক হাজার ৪শ শেয়ারের মালিক৷ এই তথ্যটি তিনি তার হলফনামায় গোপন করেছেন৷''
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘‘প্রার্থিতা চুড়ান্ত করার আগেই নির্বাচন কমিশনের উচিত হলফনামার তথ্য যাচাই বাছাই করা৷ কেউ যদি কোনো তথ্য গোপন করেন বা মিথ্যা তথ্য দেন তাহলে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা উচিত৷''
আর তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘এটা নির্বাচন কমিশনের একটা বড় ত্রুটি যে তারা হলফনামা পরীক্ষা করে না৷ পরীক্ষা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷ প্রার্থিতা বাতিল করা উচিত৷ সেটা করা না হলে এই হলফনামার দরকার কী?''
এরই মধ্যে নির্বাচনে প্রচার চালাতে না দেয়ার অভিযোগও উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে৷ গাজীপুরে বিএনপি'র মেয়র প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকার অভিযোগ করেছেন , আওয়ামী লীগ প্রাথীর লোকজন তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন৷
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনালের সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, ‘‘এখন পর্যন্ত দুই সিটি নির্বাচন নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে যেসব অভিযোগ বা অনিয়মের কথা এসেছে তা নির্বাচন কমিশন নিস্পত্তি করেছে এমন খবর পাওয়া যায়নি৷ আর অভিযোগ যারা করেন তাদেরও উচিত কিছু প্রমাণসহ লিখিতভাবে করা৷ তবে নির্বাচন কমিশনেরও মনে রাখতে হবে সব অভিযোগ লিখিত হয়না৷ তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে৷ সংবাদ মাধ্যমে যেসব তথ্য আসে তা থেকে তারা সুয়োমোটো ব্যবস্থা নিতে পারেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করার পদ্ধতিও পরিস্কার নয়৷ এজন্য একটি ম্যানুয়াল থাকা প্রয়োজন৷ তা করা না হলে নির্বাচন যত কাছে আসবে পরিস্থিতি জটিল হবে৷ অভিযোগ বাড়বে৷ আমার কাছে যে তথ্য এ পর্যন্ত রয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না৷''
এই নির্বাচনকে বিশ্লেষকরা আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের আগে বড় দুই দলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের লড়াই হিসেবে দেখছেন৷ আর এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে কি পড়বে না তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও নির্বাচন কমিশনের জন্য যে একটি পরীক্ষা তা বলছেন সবাই৷ এই কমিশন এরই মধ্যে নারায়লগঞ্জ , কুমিল্লা এবং রংপুরের সিটি নির্বাচন করেছে৷ ইউপি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগও আছে৷
এদিকে, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশালের নির্বাচনের বিষয়ে রমজানের পর সিদ্ধান্ত জানাবে নির্বাচন কমিশন৷ ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপ নির্বাচন আদালতের রায়ে আটকে আছে। আর ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের কথা রয়েছে৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় নির্বাচনের আগেই তার দক্ষতা এবং গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে৷
আপনি কি বিশ্লেষকদের সঙ্গে একমত? লিখুন নীচের ঘরে৷